দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলাবাসীকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পরিপূর্ণ সুফল পেতে আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলাবাসীকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পরিপূর্ণ সুফল পেতে আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে - ajkerparibartan.com
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলাবাসীকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পরিপূর্ণ সুফল পেতে আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে

3:36 pm , June 22, 2022

 

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিন ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু সহ ভাংগা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে শণিবারে চালু হতে চললেও সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এ সেতু ও মহাসড়কের সুফল পেতে আরো অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে। দেশের ইতিহাসে সর্বাধুনিক সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ৫৫ কিলোমিটার ভাঙ্গা-মাওয়াÑঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে সহ প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত পদ্মা সেতু জাতীর গর্ব । কিন্তু রাজধানী থেকে দুটি সার্ভিস লেন সহ ৬ লেনের ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পৌছার পড়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মহাসড়কগুলোর অবস্থা এখনো মানসম্মত নয়। এমনকি এসব মহাসড়ক যানবাহনের চাপ কতটা সামাল দিতে পাড়বে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। অথচ ভাঙ্গা জংশন থেকে বরিশাল বিভাগের ৬টি, খুলনা বিভাগের ১০টি এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলার গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কগুলোর উন্নয়ন গত প্রায় এক দশক ধরে নানা পরিকল্পনায় আবদ্ধ। এমনকি এসব মহাসড়কের উন্নয়নে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আন্তরিকতারও কোন ঘাটতি নেই। তবে সড়ক বিভাগের একাধীক সূত্রের মতে সবগুলো জাতীয় মহাসড়কই ৬ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় সহ সড়ক অধিদপ্তর।
কিন্তু ভাঙ্গা থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিনে বরিশাল, ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা বন্দর, ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটা, ৯৩ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর এবং ১৩৪ কিলোমিটার পশ্চিমে বেনাপোল স্থল বন্দরের সাথে সংযুক্ত মহাসড়কগুলো এখন বাড়তি যানবাহনের চাপ সামাল দেয়ার ক্ষমতা নেই বলেই মনে করেন একাধীক প্রকৌশলীগন। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ। এমনকি এরমধ্যে বৃহত্বর জেলা সদরগুলোর সাথে সংযুক্ত মহাসড়কগুলো নির্মিত হয় ১৯৬০ থেকে ‘৬৫ সালের মধ্যে। ২০০৫ সালে নির্মিত ঢাকাÑখুলনা জাতীয় মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে ১২৭ কিলোমিটার দক্ষিনÑপশ্চিমে খুলনা ও ৬৭ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিনে গোপালগঞ্জ মহাসড়কটিও ৩০ ফুট প্রস্থ। ষাট-এর দশকে নির্মিত ভাঙ্গাÑফরিদপুর মহাসড়কটিও মাত্র ১৮Ñ২৪ ফুট প্রস্থ।
এমনকি ঢাকাÑখুলনা জাতীয় মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া থেকে নড়াইল হয়ে যশোরের মহাসড়কটি এখনো মাত্র ১৮ ফুট প্রস্থ। বরিশাল থেকে পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা মহাসড়কটিরও একই অবস্থা।
দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের জাতীয় মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করার একাধীক প্রকল্প এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। এরমধ্যে ফরিদপুরÑবরিশালÑকুয়াকাটা/পায়রা মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নয়নের লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় ২০১৫ সাল থেকে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন হলেও প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ প্রকল্পটি চরম অনিশ্চয়তার আবর্তে। মহাসড়কটি উন্নয়নে দেশীয় অর্থে ভ’মি অধিগ্রহনে ১৮শ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে একনেক-এর অনুমোদন সহ অর্থ বরাদ্ব হলেও প্রকল্প মেয়াদ শেষ হবার পরেও এক শতক জমিও অধিগ্রহন হয়নি। এমনকি অর্থের সংস্থান না হওয়ায় মহাসড়কটি প্রাথমিক পর্যায়ে ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১২৪ কিলোমিটার ৬ লেনে উন্নীত করণের সিদ্ধান্ত হলেও এখন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ২০১৫ সালে করা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ নকশার পরিবর্তে নতুন করে সব কিছু করতে বলেছে। খুব তাড়াতাড়ি সব কিছু করলেও একাজে আরো এক বছর সময় লাগবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এর পরে প্রকল্পের ডিপিপি একনেক-এর অনুমোদন ও দাতা সংগ্রহে কত বছর লাগবে তা বলতে পারছেন না কেউ। প্রকল্পের কাজ শুরু আরো বহু দুরে। এ মহাসড়কটি পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত উন্নয়ন না হলে পদ্মা সেতুসহ এক্সপ্রেসওয়ের পরিপূর্ণ সুফল দক্ষিণাঞ্চলে পৌছবে না।
অপরদিকে ভাঙ্গা থেকে ভাটিয়াপাড়া হয়ে যশোরÑবেনাপোল পর্যন্ত ১৪৩ কিলোমিটার মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত না করলেও পদ্মা সেতুর সুফল ঐ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে জুটবে না। বেনাপোল বন্দরের পণ্য পরিবহনেও কাঙ্খিত উন্নয়ন নাও মিলতে পাড়ে বলে মত ওয়াকিবাহাল মহলের। তবে ঐ মহাসড়কের গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের মধ্যবর্তি কালনা’য় মধুমতি নদীর ওপর জাপানী অর্থে একটি ৬ লেন সেতুর কাজ আগামী মাসেই শেষ হচ্ছে।
‘ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট’এর আওতায় বেনাপোল-যশোরÑভাটিয়াপাড়াÑভাংগা অংশের মহাসড়কটি উন্নয়নের লক্ষে আরো বছর দশেক আগে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সে আলোকে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা ও নকশা প্রনয়ন শেষ হয়েছে। ভারত বা অন্য কোন বৈদেশিক অনুদান বা ঋন পাওয়া গেলেই মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ মহাসড়ক উন্নয়নে ভারতীয় ঋন পাবার শর্তগুলো যথেষ্ঠ কঠিন। ফলে এ বিষয়ে কাঙ্খিত অগ্রগতি হচ্ছ না।
তবে সড়ক অধিদপ্তর ৬ লেনে উন্নীত না হওয়ায় পর্যন্ত কালনা সেতু থেকে নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত মহাসড়কটি ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট উন্নীত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দরপত্র গ্রহন করেছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করে ২০২৪-এর মার্চে তা শেষ করার লক্ষ্যে এগুচ্ছে সড়ক অধিদপ্তর।
অপরদিকে ভাটিয়াপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনা পর্যন্ত প্রায় ৮৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার লক্ষে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ নকশা প্রনয়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহন করা হলেও কোন প্রকল্প-প্রস্তাবনা তৈরী সহ এ লক্ষ্যে কোন দাতা মেলেনি এখনো।
ফলে পদ্মা সেতু পার হয়ে এক্সপ্রেসওয়ের শেষ প্রান্ত, ভাংগার সাথে সংযুক্ত বরিশাল ও খুলনা বিভাগের সবগুলো মহাসড়কের উন্নয়নই এখনো পরিকল্পনা ও কাগুজে তৎপরতাই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফরিদপুরÑবরিশালÑপায়রাÑকুয়াকাটা, ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়াÑনড়াইলÑযশোরÑবেনাপোল, ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জÑখুলনা/ মোংলা মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করতে না পারলে পদ্মা সেতু সহ ঢাকাÑমাওয়াÑভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের তেমন কোন সুফল দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। এমনকি এসব মহাসড়ক উন্নয়নে জরুরী পদক্ষেপর গ্রহন করলেও পুরো বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগ মানসম্মত পর্যায়ে উন্নীত করতে কমপক্ষে ৭-১০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে ঢাকাÑমাওয়াÑভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মত এসব জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়নের কাজও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্নের উদ্যোগ নেয়া হলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অপেক্ষকৃত দ্রুততর হতে পারে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
উল্লেখ্য, ১৯৭৭ সালে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে রাজধানী সহ সন্নিহত এলাকার সড়ক পথের দুরত্ব হ্রাসের লক্ষ্যে বরিশালÑফরিদপুর মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে চরজানাজাতÑমাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত নতুন একটি মহাসড়ক নির্মান কাজ শুরু করা হয়। ১৯৮৩ সালে ঐ মহাসড়ক চালুও হয়।
কিন্তু ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বণ্যায় ব্যাপক ক্ষতির পরে ওপেক তহবিলে তার পূণর্বাসন সম্পন্ন হয়। পরবর্তিতে ওপেক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং এনডিএফ-এর সহায়তায় ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনাÑমোংলা মহাসড়কের টাউন নওয়াপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ-ভাঙ্গা-মাওয়া হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৬২.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মান ও পূণঃনির্মান ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ নদের ওপর সেতু নির্মিত হয়। নির্মান শেষে ঐ মহাসড়কটি ২০০৫ সালের ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উš§ুক্ত করা হয়। ওই মহাসড়কটি নির্মানের ফলে রাজধানীর সাথে বরিশাল খুলনার দুরত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার করে এবং যশোর ও বেনাপোলের দুরত্বও যথেষ্ঠ হ্রাস পায়। এমনকি এ মহাসড়কটি নির্মানের ফলে ঢাকাÑআরিচা মহাসড়কের ওপরও যানবাহনের চাপ প্রায় অর্ধেক হ্রাস পায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT