বাংলাদেশে কিডনী প্রতারক চক্রের বিস্তর নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে কিডনী প্রতারক চক্রের বিস্তর নেটওয়ার্ক - ajkerparibartan.com
বাংলাদেশে কিডনী প্রতারক চক্রের বিস্তর নেটওয়ার্ক

3:33 pm , June 19, 2022

হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা

হেলাল উদ্দিন ॥ আবু নাসের মোঃ ওয়াহিদ। পেশায় একজন এনজিও কর্মী। বরিশাল নগরীর আগরপুর সড়কে দুই ছেলে ও ন্ত্রীকে নিয়ে তার বসবাস। ছোট ছেলে ৮ম শ্রেনী পড়–য়া জাবেদ ইসলাম ইশান (১৫) দুরোরোগ্য কিডনী জনিতরোগে আক্রান্ত। দুটি কিডনীই নষ্ট হয়ে গেছে। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে অধ্যায়রত অবস্থায় তার রোগ ধরা পরে। ছেলেকে বাঁচাতে বাবা আবু নাসের মোঃ ওয়াহিদ একদিকে যেমন টাকার ব্যবস্থা করছেন তেমনি কোথায় কার কাছে চিকিৎসা করাবেন সেটিও খোঁজে রাখছেন। হঠাৎ পরিচিত এক লোক জানালেন তিনি এক লোকের মাধ্যমে ভারতের একটি হাসপাতাল থেকে কিডনী ট্রান্সফার করিয়েছেন। এখন তিনি বেশ ভালই আছেন। সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খবর হবে। রাজি হয়ে গেলেন। পরিচয় হয় ছেলেকে বাচাঁনোর অবলম্বন জিতুর সাথে। তার কথামত ভারতের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে টাকা পাঠানো শুরু করে অসহায় বাবা আবু নাসের। ধাপে ধাপে প্রায় ২০ লাখ টাকা পাঠানো হলে প্রতারনা করে বসে ছদ্মনামধারী জিতু। ছেলের অকেজো দুটি কিডনী অপসারন করে যখন কিনডী দাতার আশায় ইশানের বাবা মা অপেক্ষা করছে ঠিক তখনই খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না দালাল জিতুকে। এরপর নানা চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় ছেলের জন্য একটি কিডনীর ব্যবস্থা হলেও গচ্ছা গেছে অর্ধ কোটিরও বেশী টাকা। শুধুই তিনিই নন ওই দালালের প্রতারনার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশী আরো দুইজন ভুক্তভোগী। যাদেরকেও কিডনির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলে আরো ৪০ লাখ টাকা আতœসাত করেছে ওই প্রতারক।
ভুক্তভোগী আবু নাসের মোঃ ওয়াহিদ বলেন দুটি কিডনী নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছেলেকে বাচানোর একমাত্র পন্থা ছিলো কিডনী ট্রান্সফার করা। কিন্তু এটা বাংলাদেশে সম্ভব ছিলো না। তাই ভারত কিংবা অন্য কোন দেশে চিকিৎসার উপায় খুজছিলাম। এমন সময় আমার এক পরিচিতজন সন্ধান দিলেন জিতু নামের লোকটির। তিনি ভারতে জিতু ও বন্ধন নামে পরিচিত। বললেন তিনি ওই জিতুর মাধ্যমে ভারত থেকে কিডনী ট্র্যান্সফার করেছেন। সেই আস্থা থেকেই জিতুর সাথে যোগাযোগ ও পরিচয়। চিকিৎসার জন্য ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা খরচ লাগবে জানালে আমি রাজি হই। এরপর বিভিন্ন সময়ে তার দেওয়া ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা পাঠাতে শুরু করি। ২০২১ সালের শেষ দিকে ছেলেকে নিয়ে ভারতের এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করি। তখনও তার সাথে আমার স্ব-শরীরে কথা হয়েছে। তার সাথে কথা ছিলো তিনি কিডনীর ডোনার ম্যানেজ করে দিবেন। তার কথামত চিকিৎসকরা ছেলের কিডনী ট্রান্সফারের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে। ছেলের অকোজো দুটি কিডনীই অপসারন করে ফেলেন চিকিৎসকরা। যখন আমরা সবাই কিডনী দাতার অপেক্ষায় ঠিক তখনই আর তাকে খুজে পাচ্ছিনা। ফোনও ধরছেন না। বুঝলাম প্রতারনার শিকার হয়েছি। তবে ওই প্রতারক একজন ডোনারের সন্ধান দিয়ে ছিলেন। তার সাথে যোগাযোগ করে পুনরায় আরো ২৫ লাখ টাকা খরচ করে চলতি বছরের ৪ জুন ছেলের অপারেশন সম্পন্ন করি। বর্তমানে সে ভারতেই চিকিৎসাধীন রয়েছে। আবু নাসের মোঃ ওয়াহিদ বলেন খোজ নেওয়ার পরে জানতে পারি জিতু শুধু আমার কাছ থেকেই নয় দুজনের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে নিয়েছিলেন। এদের মধ্যে একজন ঢাকার বাসিন্দা সবুজ ও অপু। এরাও কিনডী জনিত রোগের কারনে জিতুর স্বরনাপন্ন হয়েছিলো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভারতে জিতু ও বন্ধন নামে পরিচিত ওই প্রতারকের প্রকৃত নাম রিফাত হোসাইন মিয়া (পাসপোর্টে উল্লেখকৃত) বাবার নাম মোঃ ওসমান মিয়া। স্থায়ী ঠিকানা নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার এনায়েত নগরের হারিহারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার ময়মনসিংহের লৌহজং এলাকার বাসিন্দা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ স্ত্রী ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত একাধিক দালালের মাধ্যমে প্রতারনার কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন রিফাত ওরফে জিতু।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT