3:33 pm , June 12, 2022
আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ কোনো নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই ইচ্ছে মতো ভাড়া বৃদ্ধি ও যাত্রীদের হয়রানির অভিযোগ বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া থেকে সাহেবের হাট, নেহালগঞ্জ, গোমা ও কাটাদিয়া সড়কে বাস চালকদের বিরুদ্ধে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সর্বশেষ ২০২১ সালের নভেম্বরে কিলোমিটার প্রতি ২ টাকা ০৫ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও তা কখনোই মানেনি শহরতলীর পরিবহন চালক ও মালিকরা। একইসাথে ভাড়া ও সিটে বসা নিয়ে যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার এদের নিত্যদিনের ঘটনা। তবে পরিবহন চালক ও মালিকদের দাবি সরকার মিনিবাসের জন্য সর্বনি¤œ ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমরা এর বেশি কখনোই ভাড়া গ্রহন করি না।
তবে বরিশালের দশ উপজেলার অভ্যন্তরীণ রুটে কিলোমিটার প্রতি ৫ টাকা ও দূরপাল্লার সেতুর টোল সংযুক্ত সড়কে কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা ভাড়া আদায়ের নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান বরিশাল অভ্যন্তরীণ রুটের পরিবহন মালিক শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ ।
সম্প্রতি বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার অভ্যন্তরীণ মোট ৩১টি রুটে চলাচলকারী যাত্রীদের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, বরিশাল সদরের চরকাউয়ার থেকে গোমা ৮ কিমি দূরত্বে বাস ভাড়া ৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পথে তালুকদার হাটে মাত্র ২.৫ কিমি ২০ টাকা ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা। কেউ প্রশ্ন তুললে চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিবহন চালক ও মালিক সমিতির সভাপতি মনিরুল ইসলাম ছবি সাক্ষরিত তালিকা দেখিয়ে বেড়ান চালক ও শ্রমিকরা। তারউপর দুই বা তিন কি.মি. পথের যাত্রীদের বাসের সিটে বসার সুযোগ নেই বলেও অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে চরকাউয়া বাস মালিক সমিতির সদস্য বাস চালকদের বক্তব্যে। ঐ এলাকার কয়েকজন বাস চালক এনায়েত, মনির , মিন্টু ও স্টাফ রাকিব জানান, সমিতির নির্ধারিত ভাড়ায় বাস না চালালে রুট পারমিট বাতিল করে দেয়া হয় সমিতি থেকে। আর চালক খবির হাওলাদার, সঠিখোলার বাস মালিক রিপন হাওলাদার প্রমূখদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মালিক সমিতির নির্দেশনা মেনেই তারা ভাড়া আদায় করছেন। দূরের যাত্রীদের আগে বসার ব্যবস্থা করে তবে জায়গা থাকলে কাছাকাছি যাত্রীরা বসবেন।
চাঁদপুরা ইউনিয়ন সংবাদ কর্মী হৃদয় মাহমুদ মনির জানান, চরকাউয়া হইতে গোমা ৪০ টাকা, কাটাদিয়া ৩৫ টাকা, নেহালগঞ্জ ৩৫ টাকা, লাহারহাট ৩৫ টাকা করে ভাড়া গুনতে হয় আমাদের। কিছু বললো যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। পথেই নামিয়ে দেয়। অর্থাৎ পূর্বের ভাড়া থেকে সব জায়গায়ই ৫/১০ টাকা করে বেশি ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছে এরা।
এখানে বাস মালিক সমিতির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ছবি। ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে মুখোমুখি সাক্ষাতে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজী নন। শুধু বলেন, যা খুশি লিখেন, বের হন এখান থেকে, আমরা ব্যস্ত আছি দেখেন ন।
চরকাউয়া থেকে আগে ভোলাসহ মোট ৮টি রুটে বাস চলাচল করতো। এখন ভোলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় বাস চলছে ৭টি রুটে। রুটগুলো হলো লাহারহাট, সাইবের হাট, নেহালগঞ্জ, কাটাদিয়া, গোমা, হলতা। ওই সব রুটে প্রতিদিন ৬০টি বাস চলাচল করছে বলে জানা গেছে। চরকাউয়া বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান বলেন, ভোলা রুটে যখন বাস চলাচল করতো তখন প্রত্যেক বাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন যাত্রী আমরা পেতাম। প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে ৪৫ টাকা করে ভাড়া নিলে আপ-ডাউনে সাড়ে তিন হাজার টাকার বেশি আসত না। তাই ভোলা রুটে বাস বন্ধ আছে। তিনি আরো বলেন, বিআরটিএ যে নির্দেশনা দিয়েছে তা শুধু দূরপাল্লার পরিবহন ও ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য। শহরতলীর রুটের জন্য কোথাও কোনো নির্দেশনা নেই।
২০২১ সালের নভেম্বরে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকার সারাদেশে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা। আর মহানগরীতে বিভিন্ন রুটের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বেড়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করে। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ৫ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়।
যাত্রীদের অভিযোগ, এ ভাড়া শুধু মহানগরীতে শহরতলীর জন্য নয়। এমন দাবী করে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করছে শহরতলীর বাস মালিক ও চালকরা। ভোলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ বিষয়ে তারা জানান, বরিশাল ও ভোলার প্রভাবশালী নেতাদের স্প্রীটবোট চলাচলের কারণেই মূলত বাস রুট বন্ধ রাখা হয়েছে। এ পথে সরকার প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছেন।
তবে বিআরটিএর পক্ষ থেকে উপ পরিচালক জিয়াউর রহমান জানান, সবশেষ ব্যয় বিশ্লেষণ অনুযায়ী দূরপাল্লা ও মহানগরী এলাকায় ভাড়া হতে পারে যথাক্রমে ১ টাকা ৮২ পয়সা ও ২ টাকা ১০ পয়সা পর্যন্ত । সরকার এখন পর্যন্ত কোনো রুটের ভাড়া বৃদ্ধি করেননি। শুধু দুদিন আগে দূরপাল্লার পদ্মা সেতু ব্যবহারকারীদের টোল ও বাস ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।