3:27 pm , May 28, 2022

মো: আফজাল হোসেন, ভোলা ॥ জনসেবার পাশাপাশি দক্ষ খামারী হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ভোলার বাপ্তা ইউনিয়নের চারবারের চেয়ারম্যান ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা। কি নেই তার খামারে। পিয়াজ, আলু, মাছ আর আম, লেচু, জামরুল, কাঠাল থেকে শুরু করে সব ধরনের ফল রয়েছে এখানে। বেশ লাভবান হচ্ছেন তিনি। সফলতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন কৃষি মন্ত্রী নিজেও। বিষমুক্ত ফল পাওয়ার বেশ সুনাম রয়েছে এই খামারের। সবুজ বাংলা কৃষি খামার। ভোলা সদর থেকে অন্তত ১৭ কিলোমিটার দুরে রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামে প্রায় ৩৫ একর জমির উপর ২০০৫ সালে গড়ে উঠেছে সবুজ বাংলা কৃষি খামার। শখের বসে খামারটি গড়ে তুললেও ২০১০ সালে বানিজ্যিক ভাবে যাত্রা শুরু করে। মনোরম পরিবেশ আর বিশাল এই খামারে দেড় হাজারের মত আম গাছ রয়েছে। যার মধ্যে কাচিমন, বারি-৪, হাড়ি ভাঙ্গা, ব্যানানা, গৌড়মতি, কিউজাই, পালমার, চাকাপাত, থাইকাচাঁ মিঠা, চিয়াংমাই, ব্রুনাইকিংসহ আমেরিকা, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের নানান প্রজাতির আম রয়েছে এ বাগানে। কয়েক শত লিচু গাছ রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য মোজাফফরী, দেশিসহ বিভিন্ন প্রজাতির লিচু। যার সুনাম পুরো জেলা এবং জেলার বাহিরেও রয়েছে। এছাড়া জামরুল, মাল্টা, লেবু, নারিকেল বাগান, কাঠাল, মাছ ও ডেইরি ফার্ম রয়েছে এই খামারে। জেলার একমাত্র বানিজ্যিক ভাবে গড়ে তোলা খামারটিতে দুর দুরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে বাগান থেকেই ফল কিনে নিচ্ছে। বাগান দেখা আর একই সাথে ফরমালিন মুক্ত লেচু কিনে নিয়ে নেয়ার এক অন্যরকম আনন্দের কথা জানালেন ক্রেতা মো: আরিফুর রহমান, মো: এরফান এবং মো: রুবেল খাঁন। তাদের মতে এই খামারের ফরমালিনমুক্ত ফল যাওয়া যায় বলেই প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরো এসেছি লিচু কেনার জন্য। দাম বেশি হলেও ঝুকিমুক্ত এবং স্বাদ অনেক বেশি তাই আমাদের পছন্দ। খুচরা বিক্রেতা মো: মনির হোসেন জানান, দেশের অন্য জেলায় যখন লিচু আসে না,তখন ভোলার এই খামারের লিচু পেকে যায়। যেকারনে কিনে নিয়ে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছি। ভোলার মানুষের কাছে এই খামারের কথা বল্লেই তারা কিনে নিয়ে যায়। প্রায় ৫১ বছরের ইয়ানুর রহমান বিপ্লব সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়নের ৪ বার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত এবং একই সাথে সফল একজন খামারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে রীতিমত ভোলা জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। আলু আর পেয়াঁজ চাষেও রয়েছে সবচেয়ে বড় অবদান। একশত মেট্রিক টণ এর বেশি পেয়াঁজ উৎপাদন করেছেন এবছর। বেশ ভালোই লাভবান তিনি। তার এই সফলতা দেখার জন্য ছুটে এসেছেন স্বয়ং কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি পেয়াঁজের ক্ষেত থেকে পেয়াঁজ তুলে বিপ্লবের এই বিপ্লব ঘটানোর প্রশংসাও করে গেছেন। আর সবকিছু নিজের মুখেই তুলে ধরলেন বিপ্লব ঘটানোর সবুজ বাংলা কৃষি খামারের কর্ণধার ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা। বিপ্লব মোল্লা বলেন, সারের কারসাজির কথা তুলে ধরে সেটা কৃষকদের মাঝে সমান ভাবে যাতে বন্টনের ব্যবস্থা গ্রহন এবং কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠমুখী হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, অন্যসব জনপ্রতিনিধি ও বেকার যুবকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, তারাও যেন এমন খামার গড়ে তুলে নিজেদেরকে সাবলম্বি হিসেবে গড়ে তুলেন। তারা যেন চাকুরীর পিছনে না ঘুরে নিজেরই যেন উদ্যোক্তা হন। প্রায় প্রতিদিন আসছেন প্রশাসনের কর্তারাও। ঘুরে বাগান দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। খোজ খবর নিচ্ছেন বাগানের সার্বিক পরিস্থিতির। যাবার সময় বাগান থেকে কিনে নিচ্ছেন ফরমালিন মুক্ত লিচু। তেমনি ভোলা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো: আলী সুজা গিয়েছিলেন খামারটিতে। তিনি মুগ্ধ হয়ে বলেন, জন প্রতিনিধিদের নামে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাই। তবে একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও সমাজের জন্য অনুকরণীয় হতে পাড়ে। বেকারত্ত ঘুচিয়ে কি ভাবে সাবলম্বী হতে পারে তা আমরা এই কৃষি খামারটি দেখলে বুঝতে পারবো। একই সাথে খাসজমি বেকারত্তদের নামে কিংবা কৃষি খামার করার ক্ষেত্রে দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে বলেন, ফলের বাগানসহ ফলজ বাগান করতে চাইলে আমরা উপযুক্ত প্রমান পেলে তাদেরকেই জমি বন্দোবস্ত দিব। এটা আমাদের নীতিমালায় রয়েছে। এদিকে সম্প্রতি খামার দেখতে আসেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। এসময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন,ব্যবসায়ীরা আমদানী বন্ধ করে দেয়, তখন এখানে পেয়াঁজের কেজি ৮০থেকে ৯০টাকা হয়। আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশকে পেয়াঁজে সয়ংসম্পুর্ন করার জন্য। ভোলায় বিপ্লব পেয়াঁজের আবাদ করে খুবই সফল হয়েছে। এটা যদি ভোলাসহ সারা দেশ অনুকরন করে সারা দেশে একটা বিপ্লব হবে।