শেবাচিম হাসপাতালে দালাল ও এক্সটা কর্মীদের দাপটে চিকিৎসা সেবা ব্যহত শেবাচিম হাসপাতালে দালাল ও এক্সটা কর্মীদের দাপটে চিকিৎসা সেবা ব্যহত - ajkerparibartan.com
শেবাচিম হাসপাতালে দালাল ও এক্সটা কর্মীদের দাপটে চিকিৎসা সেবা ব্যহত

3:41 pm , May 25, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দালাল ও হাসপাতালে কর্মরত এক্সটা কর্মীদের দাপটে অতিষ্ঠ বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (শেবাচিম) এর রোগীরা। এর সাথে জড়িত আছেন কিছু সংখ্যক হাসপাতালের আউট ডোরের চিকিৎসক, নার্সসহ একাধিক কর্মকর্তাও। অতিরিক্ত আয়া-বুয়াদের অত্যাচারে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। হাসপাতালের অতিরিক্ত রোগীদের সেবার জন্য নেয়া এই অতিরিক্ত আয়া-বুয়ারা হাসপাতালের চেয়ে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সেবাই বেশি সময় পার করছেন। রোগী প্রতি সিটি স্ক্যান ৭০০, অন্যান্য দালালী বাবদ এসব আয়া-বুয়াদের মাসিক আয় লাখ টাকার উপরে। এরা বসে থাকেন কখন রোগী আসবে, আর কখন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নেয়া হবে। এদের সাথে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের নির্ধারিত দালালদের রয়েছে সক্ষতা। অর্ধশতাধিক দালাল প্রতিদিন রোগী ভাগিয়ে নিচ্ছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলেও বীরদর্পে পুনরায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের সহযোগিতায় রয়েছে শেবাচিমের ৪র্থ শ্রের্ণীর অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যারা নামে-বেনামে শেবাচিমের সামনে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সাথে জড়িত। রয়েছে বেশকিছু চিকিৎসকেরও নাম। এসব চিকিৎসকরা পার্সেন্টেজের বিনিময়ে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সাথে চুক্তিনামা করে রোগী সরবরাহ করে থাকে। এমন অভিযোগও রয়েছে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই, তারপরও চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিচ্ছেন।
এমনকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দিকেও রয়েছে অভিযোগের আঙ্গুলী। সরেজমিনে বুধবার সকালে শেবাচিম ঘুরে দেখা গেল ব্যস্ততার চিত্র প্রবেশ পথেই। একজন ছিচকে চোর ধরে তাকে পেটাচ্ছেন আর হাসপাতালের ভিতরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘোরানো হচ্ছে। চিনে রাখুন সবাই – বলে পরিচয় করাচ্ছিলেন নিরাপত্তা কর্মীরা। মাত্র নয়জন নিরাপত্তা কর্মীর সবাই এই চোরের পিছনে। পাশেই একটি রোগী পরিবারের সাথে দর কষাকষি চলছে ট্রলি চালক তিনজন এক্সটার। মহিলা মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ডে নিতে ৩০০ টাকা দাবী করা নিয়ে চলছিল তর্ক। নিরাপত্তা রক্ষীদের দেখে থেমে গেল তা। জরুরী বিভাগ দিয়ে প্রবেশ করে প্রধান ফটক হয়ে পাঁচতলা ভবনের প্রায় ৫০টি ওয়ার্ড ঘুরে শুধু জটলা আর জটলাই চোখে পড়লো। আর চোখে পড়বে ইন্টার্নি চিকিৎসক ও নার্সদের সিঙ্গারা ছামুচা ও চা- কফি খাওয়ার দৃশ্য। সিনিয়র ডাক্তারদের আনাগোনা খুব একটা নেই। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকহীন হাসপাতাল বলে শেবাচিমের দূর্নাম দীর্ঘদিনের। রোগীর ভিড় সামলাতে হিমশিম নার্স ও ইন্টার্ন হিসেবে কর্মরতরা। এখানকার বেশিরভাগ সিনিয়র ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ব্যস্ত বড় বড় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরামর্শক হয়ে বিশেষ চেম্বার পরিচালনায়। অভিযোগ রয়েছে শেবাচিমের ডাক্তার থেকে ওয়ার্ড বয় নার্স সকলেরই রয়েছে নিজস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক। আর এসব ক্লিনিকে রোগী পাঠানোর প্রতিযোগিতা করছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে কর্মরত এক্সটা কর্মীরা। হাসপাতালে কর্মরত প্রায় দুইশত এক্সটা কর্মীদের কোনো ভবিষ্যত বা মাসোহারা নেই। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী তারা চলেন শুধু রোগী স্বজনদের থেকে বকশিস নিয়ে বলে জানালেন কয়েকজন কর্মী। তাদের দাবী, এটাই এ হাসপাতালের অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। মজার বিষয় হচ্ছে এসব অভিযোগ অস্বীকার করননি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কেউই। ওয়ার্ড মাষ্টার কালাম বলেন, ৫০০ শয্যার চিকিৎসা ব্যবস্থা দিয়ে চলছে ১০০০ শয্যার দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ হাসপাতালটি। এখানে অফিস সহায়ক প্রয়োজন ২২৪ জন, ঝাড়ুদার ১৪৫ জনসহ আরো অনেক জায়গায় লোকবলের খুব অভাব। আগে এখানে ওয়ার্ড ছিলো ১৭ টি এখন ওয়ার্ড হয়েছে ৪৬টি। আরো অন্যান্য বিভাগও রয়েছে। ফলে ওটি, আইসিও ম্যানেজ করার পর প্রতি ওয়ার্ডে সরকারি লোক দিতে পারি বড়জোর একজন। তখন বাধ্য হয়েই এক্সটা বা স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে কাজ চালাতে হয়।
তবে খোজ নিয়ে জানা গেছে ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালামও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের সাথে জড়িত রয়েছে। যেইসব ডায়াগনষ্টিক সেন্টার তাকে মাসিক মাসোহারা দেন, সেইসব ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে কর্মচারীদের রোগী পাঠাতে বাধ্য করেন। কথা না শুনলে এক ওয়ার্ড থেকে আরেকটি খারাপ ওয়ার্ডে বদলী করারও অভিযোগ রয়েছে ওয়ার্ড মাস্টার কালামের বিরুদ্ধে।
আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের এক্সট্রা কর্মীদের দালালি বিষয়েও অবগত পরিচালক ডাঃ এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের সামনে কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা ক্লিনিক থাকার কথা নয়, কিন্তু বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। এটি অনুমোদন দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা চাইলেই এদের দৌরাত্ম বন্ধ হয়। আর হাসপাতালের ভিতর থেকে কিছু স্বেচ্ছাসেবকও রোগী নিয়ে টানাটানির অভিযোগ রয়েছে। প্রমাণ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। তবে এবার আমরা হাসপাতালে নতুন সিটিস্ক্যান ও আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন বসিয়ে নিয়ম করে দিচ্ছি। দিনে কম হলেও ৫০ জনের পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রমাণ থাকতে হবে ল্যাবের সব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে। ফলে আর বহিরাগতের সাথে এরা সম্পর্ক রাখতে পারবে না বলে মনে করেন হাসপাতাল পরিচালক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT