স্বরূপকাঠির সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের উদ্ধার করা লোহার ব্রিজের মালামাল গোডাউন থেকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ স্বরূপকাঠির সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের উদ্ধার করা লোহার ব্রিজের মালামাল গোডাউন থেকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ - ajkerparibartan.com
স্বরূপকাঠির সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের উদ্ধার করা লোহার ব্রিজের মালামাল গোডাউন থেকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

3:26 pm , May 16, 2022

স্বরূপকাঠি প্রতিবেদক ॥ স্বরূপকাঠির সমুদয়কাঠি ইউনিয়নে জাইকার কাজের সময় উদ্ধারকৃত বিভিন্ন লোহার ব্রিজের লুকিয়ে রাখা মালামাল গোপন গোডাউন থেকে সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কেএম সবুর তালুকদার তার গোডাউন থেকে নিজের লোকদের মাধ্যমে ওই মালামাল সরিয়ে নিচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তাদের অভিযোগ জাইকার কাজের সময় জব্দ করা লোহার পুলের মালামাল সবুর তালুকদারের ব্যক্তিগত গোডাউনে লুকিয়ে রেখেছিল। বিভিন্ন সময়ে মালামাল বিক্রি করলেও শেষ সময় সাগরকান্দা বাজারে তার গোডাউন থেকে রোববার রাতে লোহার ভিম, এ্যাঙ্গেল ট্রলারে বোঝাই করার সময় এলাকাবাসী টের পেয়ে আটকের চেষ্টা করলে রাতের আধারে বোঝাই করা মালামাল নিয়ে দ্রুত ওই ট্রলার সরে পড়ে। যে ঘর থেকে মালামাল সরানো হচ্ছিল সেখানে এখনো কিছু মালামাল অবশিষ্ট রয়েছে। খবর পেয়ে রাতেই বিভিন্ন পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা সাগরকান্দা বাজারে গিয়ে মাহাবুব তালুকদারের ঘরে অবশিষ্ট ভিম, এ্যাঙ্গেল দেখতে পায়। ঘর মালিক মাহাবুব তালুকদার বলেন, ওই ঘর সাবেক চেয়ারম্যান সবুর তালুকদারের কাছে ভাড়া দেওয়া। মালামালও তার। সাগরকান্দা এলাকার মো. ফারুক ফরাজী জানান, সাবেক চেয়ারম্যান সবুর তালুকদারের নিজস্ব লোক কবির তালুকদার ও হাফিজ তালুকদার দুই দিন মাহাবুব তালুকদারের ঘরের পেছন থেকে ট্রলার বোঝাই করে লোহার ভিম ও এ্যাঙ্গেল নিয়ে যায়। বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানালে তারা আবারো আসলে তাদের জানাতে বলেন। রোববার রাতে পুনরায় ট্রলারে মালামাল নেয়ার সময় তা দেখতে পেয়ে লোকজনকে খবর দিলে সেলিম ফরাজি, ফিরোজ হাওলাদার, ফোরকান হাওলাদার, দুলাল ফরাজিসহ অনেকেই ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় কবির তালুকদার তা দেখতে পেয়ে ট্রলার নিয়ে দ্রুত সরে পড়ে। এরপর তারা এলাকার বর্তমান চেয়ারম্যান হুমায়ুন বেপারীকে জানালে তিনি সাংবাদিকদের জানান। রাতেই সাংবাদিকরা ওই এলাকায় গেলে ফিরোজ হাওলাদার, সেলিম ফরাজিসহ এলাকাবাসী জানান চেয়ারম্যান থাকা কালীন সময়ে বিশেষ করে জাইকার কাজ চলাকালীন বহু মালামাল এনে সাগরকান্দা বাজারে উঠিয়েছেন, আবার ট্রলার ভরে অনেক মাল নিয়ে গেছেন। চেয়ারম্যানের কাজের বিষয়ে তেমন একটা খোজ খবর তারা রাখেননি। গত কয়েকদিন ধরে রাতে ওইখান থেকে মালামাল ট্রলারে ভরে নিতে দেখে সকলের মনে সন্দেহ হয়। সাবেক চেয়ারম্যান সবুর তালুকদারের নিজের মালামাল হলে সে দিনে নিবে, কিন্তু রাতে নিচ্ছে কেন এমন প্রশ্নে উদ্ভব হলে তারা বিভিন্ন জনের সাথে শলা পরামর্শ করে। এক পর্যায়ে রোববার রাতে একটি ট্রলারে পুনরায় মালামাল নিতে দেখে লোকজনকে জানালে সকলে ওইখানে যায়। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলারটি অতিদ্রুত স্থান ত্যাগ করে সরে পড়ে। এসময় তারা ওই ঘরের মধ্যে আরো মালামাল দেখেতে পায়। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে লোকজন সাংবাদিকদের মালামাল দেখান। মালামাল দেখে ঘর মালিক মাহাবুব তালুকদারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান ঘর অনেকদিন থেকে চেয়ারম্যান সবুর তালুকদারের কাছে ভাড়া দেওয়া। ঘরের মধ্যে থাকা লোহার বিম, এ্যাঙ্গেল, রডসহ সব মালামাল তার। স্বরূপকাঠি উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.হুমায়ুন কবির বেপারী অভিযোগ করেন, ২০১১-১২ অর্থ বছরে জাইকার অর্থায়নে সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের সেহাংগল বুদ্ধির বাজার থেকে সাগরকান্দা হয়ে জিনুহার পর্যন্ত সড়ক ও এর মধ্যে থাকা ২১ ব্রিজ কালভার্ট নির্মানের কাজ করে এলজিইডি। ওইসময় ওই ব্রিজগুলোর মালামাল জব্দ তালিকা করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সবুর তালুকদারকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ২১ টি ব্রিজ কালভার্টের মধ্যে জুলুহার বাজারে ৫০ মিটার, মেসন্ডা মসজিদের পাশে ৪০ মিটার, মৈশানী খালে ৭৫ মিটার, সাগরকান্দা বাজারের পশ্চিম দিকে ৪০ মিটার, সাগরকান্দা বাজারে ৬০ মিটার বোনবাড়ীতে ১৮ মিটার, জিনুহার বাজারে ৩০ মিটারসহ ১৫ টি লোহার ষ্ট্রাকচার ব্রিজ ছিল। মৈশানী ও বোনবাড়ীর ব্রিজ দুটির কাজ চলমান ছিল। ওই দুটি ব্রিজে সম্পূর্ন নতুন মালামাল দিয়ে ষ্ট্রাকচার নির্মান শেষ করে স্লাব ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুতি চলছিল। এসময় ওই সড়কটি জাইকা হাতে নেয়। সড়কটি নির্মানের সাথে সবগুলো ব্রিজ কালভার্ড নতুন করে নির্মান করে। বিদ্দমান থাকা সবগুলো ব্রিজের মালামাল জব্দ করে এলজিইডির পক্ষ থেকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান ওই মালামাল ইউনিয়ন পরিষদের গোডাউনে সামান্য রেখে বাকী মালামাল তার নিজের হেফাজতে নিয়ে যায়। এর পর থেকে ওইসব মালামালের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। পরিষদের কাগজ পত্রেও কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সমুদয়কাঠি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কেএম সবুর তালুকদারের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। সাগরকান্দা থেকে কোন মালামাল ট্রলারে করে তিনি বা তার লোকজন নেননি। তিনি বলেন জাইকার কাজের সময় যে মালামাল তিনি বুঝে পেয়েছেন তা দিয়ে এলাকার ব্রিজ করা হয়েছে। বাকী মালামাল পরিষদে রয়েছে। যাহা তালিকা করে চার্জ দেওয়ার সময় বুঝিয়ে দিয়েছি। মাহাবুব তালুকদারের ঘরে মালামাল আমার নিজের কেনা। সাবেক চেয়ারম্যানের বক্তব্য খন্ডন করে বর্তমান চেয়ারম্যান হুমায়ুন বেপারী চার্জ নেওয়ার তালিকা দেখিয়ে বলেন, লোহার পুলের কোন মালামালের বর্ননা চার্জ লিষ্টে নেই। বা পরিষদেও মালামাল নেই। কোথাও কাজ করেছেন কিনা তারও কোন রেজুলেশন খুজে পাইনি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. তৌফিক আজিজের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ইউএনও তাকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছেন। ২০১১-১২ জাইকার কাজে সব নথিপত্র গোডাউনে চলে গেছে। যাহা বের করার জন্য বলেছি। নথিপত্র বের করার পর বলা যাবে কিকি মালামাল চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা থেকে তিনি কি কাজ করেছেন তার কোন তথ্য তিনি এরজিইডি অফিসকে জানিয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। যা কিছুই হোক আইনানুগ ব্যবস্থা অবশ্যই হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, খবর পেয়েছি। নথি দেথে রিপোর্ট করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। তিনি রিপোর্ট দিলে অইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে পর্যন্ত মালামাল বর্তমান চেয়ারম্যান তার নিজের জিম্মায় নিয়ে নিবেন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT