3:04 pm , May 13, 2022
ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে লক্ষাধিক চাষী
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ‘অশনি’র প্রভাবে উপকুলীয় এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাতে দক্ষিনাঞ্চলে কয়েক লাখ টন তরমুজ বিনষ্ট হয়েছে। সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক তরমুজ চাষী। রোজা শুরুর আগেই এবার বাজারে তরমুজ আসতে শুরু করলেও নানা অজুহাতে চাষীরা এবারো ভাল দাম না পেলেও বাজারে অনেক বেশী দামেই তা কিনতে হয়েছে ভোক্তাদের। উপরন্তু ঈদকে সামনে রেখে চাহিদা কমে যাওয়ায় চাষীরা দর পতনের আশংকায় রোজার শেষ দিকে তরমুজ বিক্রী করেনি। কিন্তু ঈদের পর পরই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে ভর করে উপকুলভাগ যুড়ে প্রবল বর্ষণে বরিশাল ছাড়াও পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া এবং সংলগ্ন পাথরঘাটা এলাকার বিপুল পরিমান তরমুজ বিনষ্ট হয়েছে। গত বুধবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় পটুয়াখালী উপকুলেই সোয়া ২শ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এ সময়ে কুয়াকাটা সংলগ্ন কলাপাড়াতেই ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বুধবার পৌনে ১২টা থেকে ১৫ মিনিটে মহানগরীতে ১৭.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। গত সপ্তাহের আকষ্মিক প্রবল বর্ষণে মূলত দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল জমি প্লাবিত হয়ে মাঠে থাকা বেশীরভাগ তরমুজ বিনষ্ট হয়েছে। সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৪৬ হাজার হেক্টর সহ প্রথমবারের মত সারা দেশে প্রায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল সুমিষ্ট তরমুজের আবাদ হয়। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে ২০২০ সালে দেশে ৩৮ হজার ৮২৪ হেক্টরে প্রায় ১৬ লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হয়। ২০২১ সালে তা ৪২ হাজার হেক্টরে উন্নীত হবার পরে সদ্য সমাপ্ত রবি মৌসুমে প্রথমবারের মত এযাবতকালের সর্বাধিক প্রায় ৬৩ হাজার হেক্টর জমীতে তরমুজের আবাদ হয়। যার মধ্যে দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলায়ই আবাদ হয়েছিল প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টরে।
ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, সদ্য বিদায়ী রবি মৌসুমে সারা দেশে যে প্রায় ৩০ লাখ টন তরমুজ উৎপাদনের অনুমিত হিসেব করা হয়েছিল, তার প্রায় ২০ লাখ টনই উৎপাদন হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু গত সপ্তাহে অশনি’র প্রবল বর্ষণ দক্ষিণাঞ্চলের অনেক কৃষকের সব স্বপ্ন ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর এখনো অশনি’র বর্ষনের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষতে পারেনি। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তবে যতদুর জানা গেছে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা ছাড়াও পিরোজপুরের মঠবাড়ীয়া ও সংলগ্ন এলাকার প্রচুর জমির অন্তত ৫ লাখ টন তরমুজ প্লাবিত হয়েছে। যার অর্ধেকই বিনষ্ট হয়েছে বলে আশংকা কৃষক সহ মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদদের। অশনি’র বৃষ্টি শুরু হতেই বরগুনা, ভোলা ও পটুয়াখালীর অনেক চাষি তরমুজ তোলার চেষ্টা করলেও মাঠ থাকা ২৫ ভাগের বেশি উত্তোলন সম্ভব হয়নি বৃষ্টির আগে। এমনকি বৃষ্টির পানি যখন থৈ থৈ করছিল, তখনো কৃষকরা প্রাণপন চেষ্টা করেছন মাঠ থেকে তরমুজ তুলে আনেতে। কিন্তু নিমজ্জিত অর্ধেক তরমুজও তুলে আনা সম্ভব হয়নি। এমনকি প্লাবিত তরমুজ উত্তোলন করার পরে তার অর্ধেকেরও বেশী গুনগত মান বিনষ্ট হয়েছে। বরিশালের পোর্ট রোড পাইকারি বাজারের আশে পাশে গত দুদিন প্রচুর পঁচা তরমুজের স্তুপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি পোর্ট রোড সংলগ্ন জেল খালের মাঝেও পঁচা ও নষ্ট তরমুজ ভাসছে। গত কয়েকদিন পাইকারী বাজার থেকে কিনে বিক্রির জন্য এনেও বিপাকে পড়ছেন খুচরা বিক্রেতারা। ১০Ñ২৫ ভাগ পর্যন্ত তরমুজ পঁচা ও নষ্ট। তবে পাইকারী ও খুচরা বিক্রতাদের চেয়েও ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে গেছে চাষিদের ভাগ্যে। মৌসুমের শুরুতে রোজা শুরু হয়ে যাওয়ায় এবারো ভাল দাম পায়নি দক্ষিনাঞ্চলের তরমুজের উৎপাদকরা। এবারো গড়ে প্রতিটি তরমুজ মাঠে বিক্রী হয়েছে ৯০ টাকা থেকে ১শ টাকার মধ্যে। তিন হাত ঘুরে সেসব তরমুজই ভোক্তাদের কিনতে হয়েছে ৩শ থেকে ৪শ টাকায়। কিন্তু গত সপ্তাহের অতিবর্ষণের প্লাবণের শিকার তরমুজ আর ৫০ টাকায়ও বিক্রী করতে পারছেন না দক্ষিনাঞ্চলের চাষীরা। অনেক এলাকায়ই পাইকারের অপেক্ষায় চাষিরা। এমনকি মাঠে মাঠেও পঁচে যাচ্ছে বিপুল সংখ্যক তরমুজ।