টুঙ্গিবাড়িয়ার গুচ্ছ গ্রামবাসীর জন্য কবরস্থান নেই টুঙ্গিবাড়িয়ার গুচ্ছ গ্রামবাসীর জন্য কবরস্থান নেই - ajkerparibartan.com
টুঙ্গিবাড়িয়ার গুচ্ছ গ্রামবাসীর জন্য কবরস্থান নেই

3:06 pm , May 8, 2022

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ গত ত্রিশ বছর ধরে মৃত্যুর পর কবর দেয়ার জন্য একটু জায়গার কাকুতি মিনতি করে আসছেন টুঙ্গিবাড়িয়ার পতাং গুচ্ছগ্রামের প্রায় হাজারেরও বেশি বাসিন্দারা। অথচ তাদের জন্য কবরস্থান তৈরীর চেষ্টায় স্থানীয় চেয়ারম্যানের উদ্যোগে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় কিছু সুবিধাভোগী ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তারা। তবে এটি একটি মানবিক দাবী। এটা পূরণ করা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন বরিশালের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। রোববার সরেজমিনে টুঙ্গিবাড়িয়া ইউনিয়নের পতাং নেহালগঞ্জ ফেরীঘাট সংলগ্ন গুচ্ছগ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এখানে চৌচালা টিনের ঘরগুলো বেশিরভাগই নতুন করে নিজ উদ্যোগে সংস্কার করে নিয়েছেন বাসিন্দারা নিজেই। ১৭০ টি ঘরে প্রায় ১৫শত লোকের বসবাস। বিদ্যুৎ পানি সুবিধা থাকলেও জ্বালানির জন্য কাঠ কয়লা ও ভুসিই সম্বল তাদের। গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি কবরস্থান চেয়ে গত ত্রিশ বছর ধরে তারা বিভিন্ন দফতরে ছুটে বেড়িয়েছেন। তাদের কথা বিবেচনা করে প্রয়াত চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ ফেরীঘাট এলাকার একটি খাসজমি কবরস্থানের জন্য নির্ধারণ করে দিলেও তা বিভিন্ন জটিলতায় অসমাপ্তই থেকে যায়। ফলে গুচ্ছ গ্রামবাসীর কেউ মারা গেলে তাকে কবর দেয়ার জন্য হাতেপায়ে ধরতে হয় বিভিন্ন জনের। অন্যথায় নদীতে ভাসিয়ে দিতে হয় বলে জানালেন বরিশালের টুঙ্গিবাড়িয়া উইনিয়নে পতাং নেহালগঞ্জের গুচ্ছ গ্রামবাসী প্রায় সবাই। তাদের এই কষ্ট দূর করতে কখনো কেউ এগিয়ে আসেনি বলেও অভিযোগ করেন তারা। দীর্ঘদিন পর তাদের দাবিপূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান নাদিরা খানম। তিনি এই অঞ্চলের খ্যাতিমান সমাজসেবক ও সাবেক সচিব প্রয়াত এ আর খানের সহধর্মিণী। ফলে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গুচ্ছ গ্রামবাসীর জন্য প্রয়াত সুলতান মাহমুদ এর পূর্ব নির্ধারিত পরিত্যক্ত জলাশয়টি ভরাট করার উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু কাজ শুরু করা মাত্রই জেলা সদর থেকে প্রশাসনিক ভাবে বাঁধা দেওয়া হয় ও কাজ আটকে দেয়া হয়েছে বলে জানান নাদিরা রহমান। এলাকার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, বর্ষাকালে ও ভরা জোয়ারের সময় বেশিরভাগ বাড়িঘরের ভিতরে পানি ঢুকে যায়। পথঘাট সব কাদা পানিতে ভরে যায়। মরিয়ম, নাসিমা, এনায়েত মের্ধা, রাজিব হোসেন সহ গ্রামবাসীরা জানান, ত্রিশ বছর আগে এই গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নেন নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় কিছু মানুষ। কেউ বিনামূল্যে আবার কেউ নামমাত্র মুল্যে এখানে বাড়ির মালিক হয়েছেন। তাদের কষ্ট একটাই মরার পরে তিনহাত মাটি চাই তাদের। আর এ জন্য ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকার পাঁচ একর প্রায় স্থান নির্ধারণ করে যান প্রয়াত সুলতান চেয়ারম্যান। তারপর অনেক চেয়ারম্যান এসেছেন ও চলে গেছেন। সকলের কাছেই কান্নাকাটি করেছেন গুচ্ছ গ্রামবাসীরা। কিন্তু কেউই কোনো পদক্ষেপ নেন নাই। এবার নাদিরা রহমান খান চেয়ারম্যান হয়েই গুচ্ছগ্রামের ভিতরে পরিত্যক্ত দুটি জলাশয়ের একটি পূনঃখনন করে সেখান থেকে বালু নিয়ে ৫০০ মিটার দূরের পরিত্যাক্ত অন্য জলাশয়টি ভরাট করে কবরস্থান বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এটা সম্পন্ন হলে দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হতো আমাদের। কিন্তু মাঝপথেই কাজ আটকে দিয়েছেন এসি ল্যান্ড ও নির্বাহী কর্মকর্তা। স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুন বলেন, বর্তমানে কাজ বন্ধ আছে। তবে? কেন বন্ধ আছে তা বলতে পারবোনা। মামুন আরো বলেন, এটিতো সরকারেরই কাজ। সরকারের বরাদ্দ আছে বলেইতো কাজটি শুরু করতে পেরেছেন চেয়ারম্যান নাদিরা রহমান। কিন্তু এই মহতী উদ্যোগে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
চেয়ারম্যান নাদিরা রহমান জানান, বরিশাল সদর থেকে ফোনে তাকে বিভিন্ন ভাবে এই কাজে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন থেকেও অসহযোগিতা করছেন সবাই। আমি এখন বিভ্রান্ত। কি করবো বুঝতে পারছিনা। এটাতো আমার ব্যক্তিগত কোনো কাজ নয়। সরকারেরই গৃহীত পদক্ষেপের অংশ।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার মোঃ তরিকুল ইসলাম বললেন, এটা খাস জমি। জেলা প্রশাসকের হয়ে আমি বিষয়টি দেখি। এটা চেয়ারম্যানের কোনো এক্তিয়ারেই পড়ে না। তারপরেও আমি শুধু জলাশয় থেকে বালু উত্তোলনের কারনে কাজ বন্ধ রেখেছি। যে জলাশয়টি ভরাট করা হচ্ছে, সেটি খাস জমি কিনা আমি জানি না। তিনি (চেয়ারম্যান) চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে কাজটি চালিয়ে যেতে পারেন।
তবে শুধু এলাকাবাসী নয় বরিশালের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ রফিকুল আলম, শাহ সাজেদাসহ আরো অনেকে মনে করেন, একটি কবরস্থান ঐ এলাকার মানুষের মানবিক আবেদন পূরনের দাবী। এ দাবী পূরণ করা সরকারী কর্মকর্তাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পরে, যখন শত শত মানুষের চাওয়া এক হয়ে যায়।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT