কমোডের পাইপ ভেঙে জীবিত নবজাতক উদ্ধার করলেন বাবা কমোডের পাইপ ভেঙে জীবিত নবজাতক উদ্ধার করলেন বাবা - ajkerparibartan.com
কমোডের পাইপ ভেঙে জীবিত নবজাতক উদ্ধার করলেন বাবা

3:02 pm , May 8, 2022

শেবাচিমের টয়লেটে সন্তান প্রসব

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের টয়লেটের পাইপ ভেঙ্গে উদ্ধার করা নবজাতক ও তার মা উভয়ই সুস্থ রয়েছেন। জানা গেছে শনিবার বিকেলে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টার পর পরে নবজাতক শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ও গাইনি ওয়ার্ডের এ ঘটনা এখন সর্বাধিক আলোচিত বিষয়। নবজাতকের বাবা নেয়ামত উল্লাহ এবং মা শিল্পী বেগম। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার গণমান শেখপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। নবজাতকের বাবা নেয়ামত উল্লাহ জানান, আমার স্ত্রী পেটে বাচ্চা নড়াচড়া না করা এবং রক্তক্ষরণ হওয়ায় প্রথমে তাকে স্বরূপকাঠি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসকরা শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে আনার পর চিকিৎসকরা সিজারিয়ানের (অস্ত্রপচারের) সিদ্ধান্ত নেয়। দুপুরে অপারেশনের ওষুধ কিনে আনতে বলে। ওষুধ নিয়ে ফিরে এসে দেখি টয়লেটে অনেক লোকজন ভিড় করে আছেন। লোকজন আমাকে জানায়, স্ত্রী টয়লেটে গিয়েছিলেন। প্যানে বসতেই প্রসব হয়ে গেছে। হাসপাতালের একজন আমাকে টয়লেটের মধ্যে হাত দিতে বললে আমি পুরো হাত ঢুকিয়ে দিয়েও কিছু পাইনি। কান দিয়ে শুনি টয়লেটের পাইপের মধ্য থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ। তাই কারো অপেক্ষা না করে দ্রুত দোতলায় গিয়ে টয়লেটের পাইপ ভেঙে আমার মেয়ে সন্তানকে উদ্ধার করেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া ওকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছি। তিনি তার সন্তান ও স্ত্রীর জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। শিশুটির মামী সাগরিকা বলেন, তিনি বাড়িতে থাকা অবস্থায় জানতে পারেন টয়লেটে শিল্পী সন্তান প্রসব করেছে। তাদের ধারনা ছিল শিশুটি হয়ত নেই। এ কারনে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসেন। এসে দেখেন শিশুটি ভালো আছে। বর্তমানে শিশুটির কাছে রয়েছেন তিনি। আর শিল্পীর কাছে রয়েছেন তার স্বামী। নবজাতকের মা শিল্পী বেগম বলেন, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তিনি দ্রুত ওয়ার্ডের সাথে থাকা টয়লেটে যান। সেখানে প্রেশার দেয়ার সাথে সাথে নবজাতক টয়লেটে পড়ে যায়। হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর ডাক-চিৎকার দিলে তার স্বামী ও ওয়ার্ডের লোকজন নীচে নেমে পাইপ ভেঙ্গে তার শিশুকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: তালুকদার মোহাম্মদ মজিব বলেন, এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়, এটা হতেই পারে, আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, নবজাতকটি অপরিপক্ক হলেও সে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। তবে হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজী হননি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন শেবাচিম পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, শিশু ওয়ার্ডের স্ক্যানু বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ওই নবজাতক ও তার মা শিল্পী বেগম দুজনই সুস্থ আছেন। তবে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসা সুবিধা বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালকের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সনাক সভাপতি অধ্যাপক সাহ সাজেদা বলেন, এ ধরনের ঘটনা হাসপাতালে এর আগেও ঘটেছে। এ কারনে আগেভাগে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রয়োজন ছিল। তাছাড়া এ ধরনের রোগীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকা দরকার। যেখানে গর্ভপাত হলেও শিশুটির কোন ক্ষতি হবে না। এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থার দাবি জানালেন সনাক সভাপতি। তবে এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ জন্য সংশ্লিষ্টদের অধিকতর সাবধানতা অবলম্বনের দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। এর আগে গত বছর ৬ জুন শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মৃত ওই প্রসূতির নাম নুপুর আক্তার। তিনি নগরীর নথুল্লাবাদ সংলগ্ন লুৎফর রহমান সড়কের বাসিন্দা শামিম হাওলাদারের স্ত্রী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT