3:11 pm , May 7, 2022
দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিনাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি স্বাস্থ্য বিভাগ সহ চিকিৎসক মহলেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। পরিস্থিতির আশানুরূপ কোন উন্নতি হচ্ছে না। চলতি মাসের প্রথম ৭দিনেই নতুন করে আরো ৩ হাজার ২৫৮ জন ডায়রিয়া রোগী দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছে। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শণিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায়ও নতুন ৫১১ জন ডায়রিয়া রোগী এ অঞ্চলের সরকারী হাসপাতালে এসেছে। গত এপ্রিলের ৩০ দিনে হাসপাতালগুলোতে আগত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২ হাজারের ওপরে। অথচ মার্চের একমাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬৫২ জন। সে হিসেবে এপ্রিল দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলায় ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুনেরও বেশী। বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল ও শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের সব জেলা উপজেলা হাসপাতালের মেঝেতেও এখন ডায়রিয়া রোগী। শণিবার পর্যন্ত গত ৩ মাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার ছুতে চলেছে। মধ্য মার্চ থেকে দুঃসহ গরমের সাথে নি¤œমানের তেলের ভাজা পোড়া খাবার গ্রহনের সাথে লাগাতার বৃষ্টির অভাবে দক্ষিনাঞ্চলের খাল সহ বিভিন্ন বদ্ধ জলাশয়ের পানি দুষিত হয়ে পড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ছে বলে মনে করছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। ৭মের পূর্ববর্তি তিন মাসে দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে যে ৩১ হাজার ৫৮৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত চিকিৎসার জন্য এসেছে, তার মধ্যে নরী ও শিশুর সংখ্যাই বেশী বলে জানা গেছে। আক্রান্তের মধ্যে বরিশালের সংখ্যটাই সর্বাধীক, ৮ হাজার ৬২০। আর জেলাটিতে আক্রান্তের এ সংখ্যার মধ্যে বরিশাল মহানগরীতেই বিপুল সংখ্যক মানুষ এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এর পড়ের অবস্থান দ্বীপ জেলা ভোলার। জেলাটির সরকারী হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে ৬ হাজার ৫৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত চিকিৎসার জন্য এসেছে। পটুয়াখালীতেও আক্রান্তের সংখ্যা সরকারী হিসেবে ৫ হাজার ৩৬৭ জন। পিরোজপুরে সংখ্যাটা ৫ হাজার ৫৬৫। জেলাটিতে গত এক সপ্তাহে ৯৩৮ জন সহ এক মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৩০৭ জন। এমনকি গত সপ্তাহে বরিশাল বাদে অন্য ৫টি জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে বলে জানা গেছে। বরগুনাতেও এপর্যন্ত আক্রান্ত প্রায় ৩ হাজার ২১৭ জনের মধ্যে গত এক সপ্তাহে ৪৩৪ জন এবং একমাসে প্রায় ১৮শ ৪ জন ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। ঝালকাঠীতেও গত এক সপ্তাহে ৪৪৩ জন এবং একমাসে ১ হাজার ২৮৯ জন সহ এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৭৬০ জন নারী-পুরষ ও শিশুর ডায়রিয়া আক্রান্তের খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। তবে সরকারী হিসেবে আক্রান্তের এ খবরের বাইরেও দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলাতেই আরো বিপুল সংখ্যক ডায়রিয়া আক্রান্ত মানুষ বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকদের তত্বাধানে ঘরে বসে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন বলে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন। সে হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলে গত ৩ মাসে অন্তত লক্ষাধিক মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। তবে দুঃসহ গরমের এ সময়ে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান ছাড়াও ভাজা পোড়া খাবার এড়িয়ে সহজপাচ্য খাদ্য গ্রহনের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকগন। পাশাপাশি পাতলা পায়খানা ও বমি শুরু হলে দ্রুত খাবার স্যালাইন গ্রহন সহ চিকিৎসক বা হাসপাতালের স্মরনাপন্ন হবারও তাগিদ দিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ হুমায়ুন শাহিন খান। এদিকে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসায় দক্ষিনাঞ্চলের ৪২ উপজেলায় ৩১৭টি মেডিকেল টিম ছাড়াও প্রায় ৯৩ হাজার ব্যাগ ১ হাজার সিসি ও ৬৩ হাজার ব্যাগ ৫শ সিসির আইভি স্যালাইন মজুদের কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। পাশাপাশি সব ধরনের এ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল সহ অন্যান্য ওষুধের সরবারহ রয়েছে বলেও জানা গেছে ।