মানসিক সমস্যায় জর্জরিত শেবাচিমেরই চিকিৎসা জরুরী মানসিক সমস্যায় জর্জরিত শেবাচিমেরই চিকিৎসা জরুরী - ajkerparibartan.com
মানসিক সমস্যায় জর্জরিত শেবাচিমেরই চিকিৎসা জরুরী

3:49 pm , April 24, 2022

আরিফ আহমেদ, বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) নিজেই এখন মানসিক রোগী। এটির জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন। এমনটাই দাবী করছিলেন হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করা রোগী। রোগীর স্বজনদের সাথে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এমনকি নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ্যেও অহরহ মারামারির ঘটনায় এমন ক্ষোভ শুধু রোগীর নয় বরিশালের সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দেরও। সর্বশেষ গত ২৩ এপ্রিল শনিবার বিকেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ নবজাতক ভাগনিকে দেখতে চাওয়ায় মামা ও খালুকে মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে দায়িত্বরত আনসার সদস্য ও হাসপাতালের স্টাফদের বিরুদ্ধে। আর এ সময় নবজাতকের মা আর্তনাদ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মানসিক চিকিৎসার দাবী জানান। শেবাচিমে এটা নতুন কিছু নয়। কিছুদিন আগেই গত ১০ মার্চ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে নার্সকে মারধরের অভিযোগ ছিলো ট্যুরিস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে। এছাড়াও গত বছর ২০২১ ও ২০ সালের ২৫ অক্টোবর এই হাসপাতালের চতুর্থ তলায় মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে মারামারির ঘটনা ঘটে। পরে হাসপাতাল ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে সবচেয়ে অমানবিক ঘটনাটি ছিলো ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বার বার সার্জারি বিভাগ থেকে ডায়রিয়া বিভাগে দৌড়াদৌড়ি করে ক্লান্ত এক মা হাসপাতালকে ‘পাগলা গারদ’ বলে মন্তব্য করায় তার চুলের মুঠি ধরে মারধর করেছেন চিকিৎসকরা। ঐদিন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) এ ঘটনা পুরো জাতিকে অপমানিত করেছিলো বলে মনে করেন সুজন বরিশালের সদস্য সচিব রফিকুল আলম। শেবাচিম কেন বারবার পত্রিকার শিরোনাম হচ্ছে ? ১৯৬৮ সালে স্থাপিত এই হাসপাতালের দশ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউর সাথে ২০২০ সালে করোনা বিভাগ এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৮ টি আইসিউ শয্যা ও ১৫০ টি নতুন বেড নিয়ে। সবমিলিয়ে আইসিইউ এখন ২৮ টি এবং শয্যা সংখ্যা ১১৫০টি থাকার কথা। রাতে ডাক্তার কক্ষে অবস্থানরত চারজন ইন্টার্নি চিকিৎসক দেখছেন এই ১১৫০ বেড ছাড়াও ফ্লোরিং ও আইসিইউতে অবস্থান করা আরো প্রায় ৫০০ রোগীকে। পর্যাপ্ত ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকার কারণে নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাপট এখানে ডাক্তারের চেয়েও বেশি বলে অভিযোগ রোগীদের অনেকেরই। কথার সত্যতা পাওয়া গেল ২৩ এপ্রিল বিকালেই স্বজনদের মারধর ঘটনা ছাড়াও একদল চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বিভিন্ন স্থানে প্রভাব- প্রতিপত্তি দেখে। তারা রোগীদের নিয়ে যেমন দৌড়ঝাঁপ করেন, তেমনি টাকার বিনিময়ে এটা সেটা পরীক্ষা করিয়ে দেয় অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। তাদের সাথে আশে পাশের প্রায় সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর সাথে চুক্তি রয়েছে বলে দাবী রোগী স্বজনদের। একজন স্বজন বলেন, রোগীর সাথে এদের সম্পর্ক যেন শুধু টাকার। টাকা না দিলে কোনো সেবা দিতে রাজী নয় এরা। ব্যবহার তো পারলে ঘাড় ধরে বের করে দেয় রোগীদের। অভিযোগ মোটেও মিথ্যা নয়, তারপ্রমাণ প্রতিবেদক নিজেই। হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের একজন শহীদুলতো ছবি তোলার অপরাধে প্রতিবেদকের উপরই চোটপাট দেখালো বেশকিছু সময়। পরে অবশ্য অনুযোগের স্বরে বলল, আমরা হাতে গোনা কয়েকজন কোন দিকে সামলাবো বলুন। জানাগেল, হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মীরাই আবার সামলাচ্ছে নিরাপত্তার দিক। অর্থাৎ কোনো নিরাপত্তা কর্মী নেই এখানে কিংবা তাদের সংখ্যা এতো কম যে পরিচ্ছন্ন কর্মীরাই পালন করছেন নিরাপত্তার দায়িত্ব। তাইতো বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বললেন, শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেবাচিম এর পরিচালক বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন। তাদের লোকবল সংকট চলছে, এটা ঠিক তবে আমি মনে করি নিরাপত্তা রক্ষীদের রোগী ও স্বজনদের সাথে আচার-আচরণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ জরুরী। একইসাথে রোগী স্বজনদেরও সহনশীল হতে হবে। আর শেবাচিম পরিচালক ডাঃ সাইফুল ইসলাম জানান, মাত্র ৪০ জন নিরাপত্তা কর্মী এখানে। ডাক্তার – নার্সসহ ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে প্রায় ১২ শত শয্যার চিকিৎসা। সংকট এতোটাই যে আমরা কোনদিক আগে সামলাবো। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সংখ্যা বাড়াতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। আর এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডাঃ মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, আপাতত বিভাগের ডাক্তার সমস্যার সমাধান করেছি আমরা। একটু সময় দিন। খুব শীঘ্রই শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লোকবল বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT