বর্ষবরণে পান্তা ইলিশের ধাক্কায় বাড়ছে জাটকা শিকার বর্ষবরণে পান্তা ইলিশের ধাক্কায় বাড়ছে জাটকা শিকার - ajkerparibartan.com
বর্ষবরণে পান্তা ইলিশের ধাক্কায় বাড়ছে জাটকা শিকার

3:49 pm , April 15, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেশব্যাপী জাটকা আহরন সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় মার্চ-এপ্রিল মাসে অভয়াশ্রম সমুহে সব ধরন মৎস্য অহরনে নিষেধাজ্ঞার সহ রমজানের মধ্যেই বর্ষ বরনের পান্তা-ইলিশের ধাক্কায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে ‘বাঙালী সংস্কৃতি’র নামে এবার দক্ষিণাঞ্চলে পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশের প্রকাশ্য কোন আয়োজন ছিল না। বাংলা বর্ষবরণের লক্ষ্যে নগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলে মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়াও নানা ধরনের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। করোনা মহামারী সংকটের দুই বছর পরে বরিশাল সহ বিভিন্ন জেলা প্রশাসনও শোভাযাত্রা আর সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করে। তবে অন্য বছরের মত এবার পান্তা ইলিশের আয়োজন না থাকলেও গত সপ্তাহখানেক ধরেই নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও নি¤œ বিত্তের মাঝে জাটকা ইলিশ কেনার প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। ফলে বাজারে দামও চড়া । এমনকি বড় সাইজের এক কেজি ও তার ওপরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকা কেজি দরে। ৮শ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা দরে। তবে ১০ ইঞ্চির নিচের জাটকাও বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে ও গোপনে ৫শ থেকে ৭শ টাকা প্রতি কেজি। নগরীর বিভিন্ন নামীদামী রোস্তোরাঁগুলোতেও পান্তা ইলিশের আগাম বার্তা দেয়া হয়েছে। বাংলা বর্ষবরনে ইলিশ অন্যতম অনুসঙ্গ হওয়ার কারণেই গত কয়েকদিনে বাজারে দাম বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিক্রেতারা। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়েই জাটকার আহরণও বাড়ছে। এমনকি গত দিন পনের যাবতই দক্ষিণাঞ্চলের বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে ও গোপনে ইলিশ পোনা-জাটকা বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকারি বিধিবিধান অনুযায়ী প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জাটকা আহরণ, পরিবহন ও বিপননে নিষেধাজ্ঞা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবত থাকবে। ইতোপূর্বে এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ৩০ নভেম্বর থেকে ৩০ মে হলেও ২০১৭ থেকে তা আরো দুই মাস বৃদ্ধি করে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন করা হয়েছে। এমনকি জাটকার সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন এনে ৯ ইঞ্চির পরিবর্তে এখন ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত ইলিশ পোনাকে জাটকা হিসেবে আখ্যায়িত করে তার আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশের আলোকে প্রতি বছর নিম্ন মেঘনা, শাহবাজপুর চ্যানেল ও তেতুলিয়া নদীতে মার্চ ও এপ্রিল মাসে এবং পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীতে নভেম্বর-জানুয়ারি মাসের সময়কালকে অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং দক্ষিণে চাঁদপুর জেলার মতলব ও শরিয়তপুর উপজেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে অবস্থিত পদ্মা নদীর ২০ কিলোমিটার এলাকায় প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলে মাসে অভয়াশ্রম ঘোষনা করে সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা রয়েছে। উপরন্তু মৎস্য বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী মেঘনার ভাটিতে সাগর মোহনার ৪টি এলাকার প্রায় ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে ‘ইলিশ প্রজননস্থল’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতি বছর আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে-পড়ের ২২ দিন সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকছে। মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় দপ্তর থেকে জাটকা আহরন বন্ধে অভয়াশ্রম সহ নদ-নদীতে সব ধরনের তৎপরতার কথা বলা হলেও বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে জাটকার আহরণ ও বিপনন আটকানো যায়নি। মৎস্য অধিদপ্তর দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশে জাটকা নিধন বিরোধী অভিযানে গত ৫ মাসে ৮০ কোটি টাকার মূল্যের সাড়ে ৪ কোটি মিটারেরও বেশী কারেন্ট জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলার কথা জানিয়েছে। এসময়ে মৎস্য বিভাগের প্রায় ৭ হাজার অভিযান ছাড়াও ১২শ ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জাটকা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২শ টন মাছ আটক করেছে মৎস্য বিভাগ। এছাড়া আরো প্রায় ১০ হাজারটি বিভিন্ন অবৈধ জাল আটক করা হয়েছে। এসব অভিযান ও ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানে ৭০ লাখ টাকা জরিমানা আদায় ছাড়াও ৪২৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ দিয়েছে। তার পরেও জাটকা আহরন বন্ধ করা যায়নি। মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, সারা বিশ্বে আহরিত ইলিশের ৬০%-এর বেশী বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। যার ৬৫%-ই বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে আহরিত হয়। এর বাইরে মায়নমারে ২০-২৫% এবং অবশিষ্ট ১০-১৫% ইলিশ ভারতে আহরিত হয়। এমনকি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতে ইলিশের উৎপাদন হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে তা প্রতি বছর ৪-৮% পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান ১%-এরও বেশী। মৎস্য সম্পদে একক প্রজাতি হিসেবে এ মাছের অবদান প্রায় ১২-১৩%। এমনকি ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র ও মাইগ্রেশন পথ নির্বিঘœ রাখা সহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুত ও জীব বৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করতে ২০১৯ সালে হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন ৩ হাজার ১৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকাকে দেশের প্রথম ‘সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা বা মেরিন রিজার্ভ এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু জাটকা সংরক্ষণকালীন সহ আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে-পরে আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে আমাদের দেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকলেও ভারতীয় জেলেরা অনেকটা অবাধেই বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের পানি সীমা এবং সুন্দরবনে প্রবেশ করে ইলিশ ধরে নিচ্ছে। এরসাথে বর্ষবরণের নামে পান্তা ইলিশের ডামাডোলে ইতোমধ্যে অভয়াশ্রমগুলোতেও বিপুল পরিমাণ ইলিশ সহ জাটকা আহরণ চলছে। অথচ দেশের একক প্রজাতির প্রধান মৎস্য সম্পদ ইলিশ রক্ষা সহ মূল প্রজনন মৌসুমে নিষিক্ত ডিম থেকে প্রস্ফুটিত পোনা পরিপক্ক মাছে রূপান্তরের লক্ষ্যেই জাটকা আহরণ, পরিবহন ও বিপনন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর সাথে আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার আগে পড়ের ২২ দিনের মূল প্রজননকালীন সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপনন বন্ধ রাখায় গত এক দশকে দেশে ইলিশের উৎপাদন দ্বিগুনের বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি এসব কারণেই গত অর্থ বছরে দেশে ইলিশের সহনীয় আহরণ প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে বলে দাবী মৎস্য অধিদপ্তরের। যার চলতি অর্থ বছরে ৫.৬০ লাখ টনে উন্নীত হবার ব্যাপারে আশাবদী মৎস্য বিজ্ঞানীগন। তবে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী যথাযথভাবে জটকা সংরক্ষন সম্ভব হলে আগামী বছরই দেশে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT