3:50 pm , February 22, 2022

হেলাল উদ্দিন ॥ বরিশাল উপজেলার কর্ণকাঠি আম্মানিয়া এতিমখানা। কাগজে কলমে এতিমদের সংখ্যা ৩০ জন। তাই সমাজ সেবা থেকে মাসে এতিম প্রতি ২ হাজার টাকা করে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সরেজমিনে গিয়ে এই এতিম খানায় ১০ জন এতিমও খুজে পাওয়া যায়নি। আবার যাদেরকে এতিম বলা হচ্ছে তাদেরও অনেকেরই বাবা জীবিত আছে। আবার এদেকাউকেই সম্পূর্ন ফ্রিতে বা বিনা টাকায় খাওয়া ও পাঠদান করাচ্ছেন না এতিম খানা কর্তৃপক্ষ। একই চিত্র চরহোগলা ইশায়াতুল ইসলাম মডেল এতিমখানা, চরকাউয়ার আহমদিয়া এতিমখানা, চন্ডিপুরের খবির উদ্দিন সরদার ও আজিমুন্নেছা ইসলামী কমপ্লেক্সে, শায়েস্তাবাদ ইসলামীয়া এতিমখানা ও গাজীর খেয়াঘাট তাহফিজুল কোরআন এতিমখানার।
এতিমখানার ছাত্ররা বলছে মাসে সর্বনি¤œ ৫’শ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয় তাদের। একই চিত্র বরিশাল সদর উপজেলার ১১ টি এতিম খানার। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে বেশীর ভাগ এতিমখানা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে তারা মিথ্যে বা ভুল তথ্য দিয়ে সমাজ সেবা থেকে বরাদ্ধ নিচ্ছেন। এজন্য অবশ্য সমাজ সেবা অফিসে অফিস খরচ বাবদ মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিতে হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে সমাজ সেবা কর্তৃপক্ষ। বরিশাল সমাজ সেবা অফিসের উপ চালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন এতিমখানায় বরাদ্ধের টাকা লুটপাট হচ্ছে এমন অভিযোগে ইতমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তথ্য অধিকার আইনে আবেদনে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে বরিশাল সদর উপজেলায় ১১ টি বেসরকারী এতিমখানা রয়েছে। যাতে সর্বনি¤œ ৬ করে সর্বোচ্চ ৬০ জন এতিম রয়েছে। যাতে মোট এতিমদের সংখ্যা ২৬৬ জন। ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকার এই এতিমখানায় সমাজসেবার মাধ্যমে বরাদ্ধ দিয়েছে ৬২ লাখ ৬৪ হাজার। বিভিন্ন সুত্র থেকে অভিযোগ আসে ভুল তথ্য দিয়ে এতিমদের সংখ্যা বাড়িয়ে বরাদ্ধকৃত টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। এই অভিযোগের সুত্র ধরে বরিশাল সদও উপজেলা সমাজ সেবা অফি থেকে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে গত এক বছরের বরাদ্ধের তালিকা নিয়ে মাঠে নামে পরিবর্তনের অনুসন্ধানী টিম।গত ১৫ দিন ধরে ১১ টি এতিমখানার মধ্যে ৮ টি এতিম খানায় সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে এতিম খানা কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রদের সাথে কথা বলে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা রীতিমত ভয়াবহ।
বেশীর ভাগ এতিমখানা কর্র্তপক্ষ চতুরতার আশ্রয় নিয়ে সমাজ সেবার তালিকার সাথে মিল রেখে জানান এতিমদের সংখ্যা। তালিকায় তাকালে দেখা যায় সংখ্যা সম্পূর্ন মিলে গেছে। জানানো হয় এদের খাওয়া, পোষাক ও শিক্ষা উপকরন সম্পূর্ন ফ্রি। পরে এতিমদের ডাকা হলে কোন এতিমখানাই সমাজ সেবায় দেওয়া সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ দেখাতে পারেনি। এমনকি এতিমখানা কর্তৃপক্ষের সামনে এতিমদের জিজ্ঞাসা করা হলে একজন এতিমও পাওয়া যায়নি যে সম্পূর্ন ফ্রিতে পড়াশুনা ও খাওয়া দাওয়া করছে। মূলত এরপরই খোলস রুপে তথ্য দিতে শুরু করে এতিমখানা কর্তৃপক্ষ। তারা জানান সরকার থেকে যে টাকা এতিমদের জন্য বাৎসরিক বরাদ্ধ দেওয়া হয়, তার বড় একটা অংশ উপজেলা অফিসে অফিস খরচ বাবদ দিতে হয়। তবে সমাজ সেবা অফিসের কোন ব্যক্তিকে অফিস খরচের এই টাকাটা দেওয়া হয় তার নাম বলেনি কেউ। তারা আরো বলেন অফিস খরচ দিয়ে যে টাকাটা পাই তার একটি অংশ বেশ কয়েকটি মহলকে দিতে হয়। এরপর যা থাকে তা এতিমখানার ছাত্রদের পিছনেই ব্যয় করা হয়। এরপরও সচ্ছলতা বিবেচনা করে ছাত্রদের কাছ থেকে মাসিক হিসাবে কম বেশী টাকা নিয়ে থাকি। তা না হলে এতিম খানা চালিয়ে রাখা কষ্টকর। তালিকায় দেওয়া এতিমদের সংখ্যার ৯০ ভাগই প্রকৃত এতিম নয় বলেও স্বীকার করেছেন তারা।
জানতে চাইলে বরিশাল সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন আমি এক বছরের মত হয়েছে এসেছি। এই সময়ে একবারও সরেজমিনে এতিম খানা পরিদর্শন করা হয়নি। পূর্বের তালিকা ধরেই বরাদ্ধ দেওয়া হচ্ছে। এখানে কি অনিয়ম হচ্ছে তা পরিস্কার করে বলতে পারব না। তবে তার এই এক বছরে এতিম খানায় বরাদ্ধ দিয়ে বিনিময়ে কোন অফিস খরচ গ্রহন করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
বরিশাল জেলা সমাজ সেবা অফিসের উপ পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন ্ এতিম খানায় বরাদ্ধ নিয়ে অনিয়ম দূর্নীতি হচ্ছে এমন খবর আমাদের কাছে এসেছে। আমরা ইতমধ্যেই ঘটনা তদন্তে ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আশা করছি কমিটির রিপোর্টে পুরো বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।