4:05 pm , February 20, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আজ ২১ ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পূর্ণ হবে এদিন। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হবে। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে।
মুখের ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে বিরল ইতিহাস গড়েছে বাঙালি। প্রাণের ভাষা বাংলাকে উর্দুর পাশাপাশি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে গড়ে ওঠা দুর্বার আন্দোলনে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত, রফিক প্রমুখের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। যার ফলে বাংলা ভাষা পায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। তারই পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং একাত্তরে ৯ মাস পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
মহান একুশের শহীদদের আত্মত্যাগ বিশ্বসভায় পেয়েছে অনন্য মর্যাদা। সেই রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। শোক আর গর্বের মহিমান্বিত একটি দিন। আজ জাতীয় শহীদ দিবস। দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও বিশ্বব্যাপী পালিত হবে। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গান গেয়ে শহীদদের স্মরণে বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে, শ্রদ্ধার ফুল হাতে মানুষের পদযাত্রা চলবে শহীদ মিনার অভিমুখে। স্মৃতির মিনারে শ্রদ্ধায় অবনত হবে মানুষ। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং রাজনৈতিক দলগুলো পৃথক বাণী দিয়েছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হবে একুশের আত্মত্যাগ ও মহিমা। ফেব্রুয়ারি মাস একুশের শহীদের স্মৃতিবাহী শোকাবহ মাস হলেও আত্মত্যাগ ও আত্মজাগরণের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের কারণে দিনটিকে উদযাপন করা হয় পরম মমতায়। কিন্তু এ বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে অন্যান্য অনেক কিছুর মতোই ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের ক্ষেত্রেও ঘটছে ছন্দঃপতন।
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো দিবসটি পালন করবে। দিনের কর্মসূচি শুরু হয়েছে প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে। এবার শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ অর্পন করা হবে। বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ জন প্রতিনিধি এবং ব্যক্তি পর্যায়ে দুই জন শহিদ মিনারে পুষ্পস্তক অর্পণ করতে পারবেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষকদের বুস্টার ডোজ ও শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে এক ডোজ করোনার টিকা গ্রহণ করতে হবে।
এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচী গ্রহন করেছে বরিশালের প্রশাসন, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হবে এসব কর্মসূচী। এসব কর্মসচীর মধ্যে রয়েছে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন,আলোচনা সভা,কবিতা আবৃতি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর মধ্যে
জেলা প্রশাসনের কর্মসুচি : কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রাত ১২টা এক মিনিটে বরিশাল কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ। ২১ ফেব্রুয়ারী সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা। এছাড়া নগরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ। এছাড়াও নগরের বঙ্গবন্ধু উদ্যান, চৌমাথা, বিবিরপুকুর পাড়, লঞ্চঘাট ও নথুল্লাবাদ বাস স্টেশনে ভাষা আন্দোলন বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ : ২১ ফেব্রুয়ারী প্রথম প্রহরে (২০ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত ১২.০১ মি.) বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদেও স্বরণে পুষ্পমাল অর্পন।
বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি : সকাল সাড়ে ৯ টায় অশি^নী কুমার হলস্থ দলীয় কার্যালয় থেকে র্যালী সহকারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের সন্মানে পূষ্পমাল্য অর্পন।
বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় : সকাল ৯ টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাস সংলগ্ন সড়কে প্রভাত ফেরি,সকাল সাড়ে ৯ টায় বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদেরৎ স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ। সকাল ১১ টায় বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আয়োজনে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা। ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় জাতীয় পতাকা ও বিশ^বিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন এবং বেলুন উড়িয়ে বিশ^বিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন। সকাল ১০ টা মিনিটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ। বিকাল ৪ টায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভা।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ : সকাল ৭ টায় অশি^নী কুমার হলের সামনে থেকে প্রভাত ফেরী,সকাল ৯ টায় শহীদ মিনারে চিত্রাংঙ্কন প্রতিযোগীতা। এছাড়া ১৯ ফেব্রুয়ারী থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা করে আসছে সংগঠনটি।