খোড়া অজুহাতে ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবান্ধব বিআইডব্লিউটিসি’র ষ্টিমার চলাচল অনিয়মিত খোড়া অজুহাতে ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবান্ধব বিআইডব্লিউটিসি’র ষ্টিমার চলাচল অনিয়মিত - ajkerparibartan.com
খোড়া অজুহাতে ঢাকা-বরিশাল রুটের যাত্রীবান্ধব বিআইডব্লিউটিসি’র ষ্টিমার চলাচল অনিয়মিত

2:46 pm , January 4, 2022

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ রাজধানীর সাথে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌ-পথে রাষ্ট্্রীয় নিরাপদ যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা এখনো নির্বিঘœ ও নিয়মিত করার কোন উদ্যোগ নেই। সরকারী নৌযান বন্ধ থাকার সুবাদেই বেসরকারী নৌযানের সাথে কোন প্রতিযোগিতা না থাকায় নানা অজুহাতে অতিরিক্ত যাত্রী ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ রুটের জন্য রাষ্ট্্রীয় নৌÑবানিজ্য প্রতিষ্ঠান বিআডব্লিউটিসি’র কাছে ৪টি প্যাডেল জাহাজ ছাড়াও ৩টি স্ক্রুÑহুইল জাহাজের বহর রয়েছে। কিন্তু নানা খোড়া অজুহাতে রাজধানী ঢাকার সাথে চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর হয়ে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ পর্যন্ত নিয়মিত ‘রকেট স্টিমার সার্ভিস’টি এখন চলছে সপ্তাহে মাত্র ১ দিন। অথচ মাত্র ৩টি নৌযানের মাধ্যমেই সার্ভিসটি নিয়মিত পরিচালন সম্ভব। তবে এ রুটের সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য ও অরামদায়ক নৌযান ‘পিএস অস্ট্রিচ’ কোন ধরনের দরপত্র ছাড়াই ব্যাক্তি মালিকানায় ইজারা দেয়ার পরে গত ৩ বছর তা বন্ধ। রেলওয়ে থেকে ‘স্ক্র্যাপ ভ্যালু’তে সংগ্রহ করা স্ক্রু-হুইল নৌযান ‘এমভি সোনারগাঁও’এর পেছনে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ের পরেও এক ব্যক্তি ইজারা নিয়ে পর্যটন করপোরেশনের কাছে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা দিয়েছে। অপর ৩টি প্যাডেল জাহাজের মধ্যে ‘পিএস মাহসুদ’ দু বছরাধিককাল বন্ধ থাকার পরে গত এপ্রিলে ভারী মেরামতে সংস্থার ডকইয়ার্ডে নেয়ার পরে ৮ মাসে মেরামত সম্পন্ন হবার পরে বানিজ্যিক পরিচালনের অপেক্ষায় ঢাকা ঘাটে বসে আছে।
সংস্থার অপর দুটি প্যাডেল জাহাজ ‘পিএস লেপচা’ ও ‘পিএস টার্ণ’ও একইভাবে ঢাকা ঘাটে বসে আছে। সংস্থার চারটি বাস্পীয় প্যাডেল হুইল নৌযানই নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ পরিপূর্ণ আধুনিকায়নের পরে ১৯৯৬ সালে মেকানিক্যাল গীয়ার সহ খোল থেকে উপরী কাঠামোর পূণর্বাসণ করা হয়। এরপর থেকে গত ২৫ বছরে এসব নৌযানের কোন মেজর ওভারহলিং হয়নি। অথচ অত্যন্ত ব্যয় সাশ্রয়ী ও বানিজ্য উপযোগী এসব নৌযানই যাত্রী বান্ধব বলেও বিবেচিত। কিন্তু এসব নৌযানের পরিবর্তে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রায় আড়াই গুন জ¦ালানী ব্যয়ের ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’ সংগ্রহের পরে নৌযান দুটি পরিচালনের মাধ্যেমে গত কয়েক বছরে সংস্থাটির তহবিল থেকে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বেরিয়ে গেছে।
উপরন্তু নতুন এসব নৌযানে কারিগড়ি ত্রুটিও নিয়মিত ঘটনা। সর্বশেষ গত মাসেই ‘এমভি বাঙালী’র মূল ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত প্রপেলার স্যাফট ভেঙে গিয়ে নৌযানটি বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে সংস্থার নিজস্ব ডকইয়ার্ড থেকে পুরনো স্যাফট মেশিনিং-এর মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে। নৌযাটিকে মুন্সিগঞ্জের একটি ব্যক্তি মালিকানা ডকইয়ার্ডে নেয়া হয়েছে স্যাফট সংযোজনের জন্য। আগামী ১০ জানুয়ারীর মধ্যে নৌযানটি বানিজ্যিক পরিচালনের জন্য প্রস্তুত হবার কথা রয়েছে। কিন্তু ইয়নমার ইঞ্জিন সম্বলিত দুটি ¯ুŒÑহুইল নৌযানেই প্রতি ঘন্টায় জ¦ালানী ব্যয় প্রায় ১৮০ লিটার। ফলে এসব নৌযান কখনো ‘পরিচালন মুনাফা’য়ও চালান সম্ভব হয়নি। অথচ ‘এবিসি’ ইঞ্জিন সম্বলিত প্যাডেল জাহাজগুলো চলছিল ঘন্টায় মাত্র ৮০Ñ৮৫ লিটার জ¦ালানীতে।
কিন্তু এরপরেও নানা খোড়া যুক্তিতে এসব ব্যয় সাশ্রয়ী ও যাত্রী বান্ধব প্যাডেল জাহাজগুলো বসিয়ে রাখার অভিযোগ রয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি পিএস মাহসুদ’এর মাঝারী মেরামত ও আংশিক পূণর্বাসন করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির দায়িত্বশীল একাধিক কারিগড়ি কর্মকর্তার মতে, ৪টি প্যাডেল জাহাজ পরিপূর্ণ পূণর্বাসন সহ এর মূল ইঞ্জিনের ভারি মেরামত সম্পন্ন হলে তা আরো অন্তত ২৫ বছর বানিজ্যিক লাভজনকভাবে পরিচালন সম্ভব।
তবে ১৯৪৮ থেকে ’৫৪ সালের মধ্যে নির্মিত এসব প্যাডেল জাহাজ চলাচলে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর সার্ভে সনদ দিতে চাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটির দায়িত্বশীল মহল। তবে অভিযোগ রয়েছে, এ ৪টি প্যাডেল জাহাজই ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সালে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ পরিপূর্ণ পূণর্বাসন ও আধুনিকায়ন ছাড়াও ১৯৯৫-৯৬ সালে গীয়ার পরিবর্তন সহ দ্বিতীয়বার পূণর্বাসন করা হয়। এ সময়ে বাস্পীয় প্যাডেল হুইলের এসব নৌযানগুলোর খোল ও তলা থেকে উপরী কাঠামোর সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা হয়। ফলে ‘৮০ বছরের পুরনোর তকমা’ কতটা গ্রহনযোগ্য সে বিষয়টি বিবেচনার দাবী রয়েছে ওয়াকিবহাল মহল থেকে। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ৪টি প্যাডেল জাহাজ পূণর্বাসনের মাধ্যমে রাজধানীর সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদী বন্দরের নিরাপদ যাত্রী পরিবহন নির্বিঘœ করারও দাবী রয়েছে যাত্রী সাধারনের পক্ষ থেকে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি’র পরিচালক-বানিজ্য আশিকুজ্জামানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি প্যাডেল জাহাজগুলোকে ব্যয় সাশ্রয়ী এবং যাত্রী বান্ধব বলে স্বীকার করেন। পূণর্বাসনের মাধ্যমে তা পরিচালন-এর বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে একমতও পোষন করেন তিনি। সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী ও জিএম ইঞ্জিনিয়ারিং মোঃ গফুর সরকারও প্যাডেল জাহাজগুলো পূণর্বাসনের মাধ্যমে পরিচালনের বিষয়ে দ্বিমত পোষন করেন নি। তিনি সম্ভব হলে এ বিষয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন একাধিকবার।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT