2:16 pm , December 11, 2021

মাছ ও মাংস উৎপাদনে উদ্বৃত্ত বরিশাল অঞ্চল
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ মাছে উদ্বৃত্ত আর প্রাণি সম্পদে সমৃদ্ধ বরিশাল অঞ্চলে আজ পর্যন্ত এসব সম্ভাবনাময় সেক্টরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এমনকি সারা দেশে উৎপাদিত ও আহরিত ইলিশের প্রায় ৭০ ভাগের যোগানদার দক্ষিণাঞ্চলে আজ পর্যন্ত কোন ইলিশ গবেষণা কেন্দ্র বা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পর্যন্ত উদ্যোগ নেই। তবে অতি সম্প্রতি বরিশালে সরকারী হাঁস-মুরগির খামারের অভ্যন্তরে একটি প্রাণি সম্পদ ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করা হলেও জমি নিয়ে জটিলতার অবসান না হওয়ায় প্রকল্পটির কাজ শুরুর বিষয়টি এখনো কিছুটা অনিশ্চয়তায়। খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চল ইতিমধ্যে মাছের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টনে উন্নীত হওয়ায় পৌনে ৩ লাখ টন উদ্বৃত্ত এলাকা। এ অঞ্চলে ইতিমধ্যেই সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্বের টেকসই অবস্থান তৈরীর পাশাপাশি গত এক দশকে মাছের উৎপাদনও বেড়েছে প্রায় ৭৫%। অথচ দেশে এসময়ে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৫৫%। বরিশাল অঞ্চলে মাাছের চাহিদার ৩.৩৮ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন সাড়ে ৬ লাখ টনের কাছে। এমনকি গত এক দশকে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে ১১৫%। মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে সারা দেশের ৬৬% ইলিশ আহরিত হয় দক্ষিণাঞ্চলে। কৃষি ফসলের চেয়ে মাছে মুনাফা বেশী হওয়ায় গ্রামাঞ্চলে এখন মৎস্য চাষে আগ্রহ আরো বাড়ছে। প্রাণি সম্পদের ক্ষেত্রেও গত দুই দশকে বরিশাল অঞ্চল প্রবৃদ্ধি প্রায় শতভাগ। ইতিমধ্যে মাংস ও ডিম উৎপাদনে এ অঞ্চল স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় হারের চেয়ে বেশী দুধ উৎপাদন হচ্ছে। কিন্তু সঠিক কারিগরি জ্ঞানের অভাবে এ অঞ্চলের মৎস্য চাষীসহ প্রাণী সম্পদ খামারিরা যেমনি উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থার বাইরে, তেমনি প্রাণী সম্পদের ক্ষেত্রেও উন্নতজাতের গাভী সহ গৃহপালিত প্রাণী সম্পদের অভাব রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সংকট মৎস্য ও প্রাণীজ সম্পদের দক্ষ জনবলের ক্ষেত্রে। এ ধরনের জনবল তৈরীতে আজ এ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এমনকি বিষয়টি নিয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় পর্যন্ত কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, এসব সেক্টরে আজ পর্যন্ত যতটুকু উন্নতি হয়েছে, তার সবটুকুই মৎস্যজীবী ও প্রাণি সম্পদের খামারীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে। অথচ ঢাকার সাভারে মৎস্য প্রশিক্ষন একাডেমি ছাড়াও চাঁদপুরে মৎস্য প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট এবং ফরিদপুর, লক্ষ্মীপুর ও রংপুরের পাবর্তিপুরে মৎস্য প্রশিক্ষন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ ও গোপালগঞ্জেও মৎস্য ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট গড়েছে সরকার। প্রাণি সম্পদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বরিশাল বাদে দেশের সবগুলো বিভাগের অনেক জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও গবেষনা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র প্রাণি সম্পদ উন্নয়নে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলেও জানা গেছে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বরিশাল অঞ্চল। মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এ পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে এ ধরনের গবেষনা ও প্রশিক্ষন সম্প্রসারনে তেমন কোন উদ্যোগ গ্রহন করেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে শণিবার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম-এমপি’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘দক্ষিনাঞ্চল কৃষির মত মৎস্য ও প্রাণি সম্পদেও সমৃদ্ধ। ইতিমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্যে উদ্বৃত্তের পাশাপাশি মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। দুধ উৎপাদনে সারা দেশের সাথে সমানভাবে এগিয়ে চেলেছে এ অঞ্চল। সুতরাং এ দুটি সেক্টরে দক্ষ জনবল তৈরী করতে হবে। আর এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বরিশালে একটি প্রাণি সম্পদ ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট নির্মান প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে মন্ত্রী মৎস্য সেক্টরেও এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তেলার বিষয়টি এখন প্রক্রিয়াধীন বলে জানান। তিনি বলেন, অদুর ভবিষ্যতেই আমরা দেশবাসীকে মাছের মত প্রাণি সম্পদেও স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের সু সংবাদ দেব। আর এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোকে চিহিৃত করে কাজ শুরু করার কথাও জানান মন্ত্রী।