2:38 pm , November 30, 2021
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ প্রয়োজনীয় সচল গাড়ীর অভাবে রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) বরিশাল বাস ডিপোটি কাঙ্খিত যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র সরকারী এ ডিপোটিতে ৭টি দোতালাসহ প্রায় ৭০টি বাসের মধ্যে বিভিন্ন রুটে নিয়মিত চলছে ৩৮টি। ১৮টি বাস সম্পূর্ণ চলাচল অযোগ্য বিধায় নিলামে উঠার অপেক্ষায়। ৭টি চলছে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারায়। দুটি মেরামত করে যেকোন জরুরী প্রয়োজনে সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রাখা ছাড়াও বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের জন্যও ৪টি দ্বিতল বাস বর্তমানে অপেক্ষমান আছে। করোনা পূর্বকালীন সময় পর্যন্ত বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের বিপুল সংখ্যক ছাত্রÑছাত্রীদের ক্যাম্পাসে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছে রাষ্ট্রীয় এ সড়ক পরিবহন সংস্থাটি। তবে গত মাসে বিশ^বিদ্যালয় খুললেও এখনো সব বাস গ্রহন করেনি কর্তৃপক্ষ।
তবে নানামুখী সীমাবদ্ধতার মধ্যেও দক্ষিনের সাগর পাড়ের কুয়াকাটা থেকে উত্তরের পঞ্চগড় পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করছে সংস্থাটি। মাসে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে বরিশাল বাস ডিপোটি পরিচালন মুনাফায় ফিরলেও দু দফায় করোনা মহামারী সংকটে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনÑভাতা ছাড়াও জ¦ালানী, স্পেয়ার্স পার্টস এবং টায়ারে দাম বকেয়া পড়ে আছে। তবে ধীরে ধীরে সংকট কাটিয়ে উঠার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কর্তৃপক্ষ।
বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোটি বর্তমানে পদ্মা সেতুর পশ্চিম প্রান্তের কাঠালবাড়ীতে প্রতিদিন গড়ে ২০টি বাতানুকল বাসে যাত্রী পরিবহন করছে। এর বাইরে বরিশাল থেকে রংপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ, খুলনা, গোপালগঞ্জ, পাথরঘাটা, কুয়াকাটা, আমুয়া সহ বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহন করছে সংস্থাটি। তবে প্রয়োজনীয় বাসের অভাবে এ ডিপোটি থেকে আরো বেশ কয়েকটি জনগুরুত্বপূর্ণ রুটে যাত্রী পরিবহন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
এমনকি অতি সম্প্রতি কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন করতে ঢাকাÑবরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা সেতু চালু হলেও সংস্থাটি বরিশালÑকুয়াকাটা রুটে বাতানুকুল বাস সার্ভিসের কাঙ্খিত সম্প্রসারন করতে পারেনি। ডিপোটির মাত্র ১৩টি বাতানুকুল বাসের ৯টি চলছে বরিশালÑকাঠালবাড়ী রুটে। অপর ৪টির মাত্র একটি বরিশালÑকুয়াকাটা রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। এছাড়াও অন্য তিনটি বাস অপর দুটি রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। অতি সম্প্রতি বরিশাল ডিপোর জন্য আরা ৫টি এসি বাসের চাহিদা দেয়া হলেও সদর দপ্তর থেকে কোন সবুজ সংকেত মেলেনি বলে জানা গেছে।
বিআরটিসি’র বরিশাল বাস ডিপোটি পরিচালন মুনাফায় চললেও প্রয়োজনীয় সচল গাড়ীর অভাবে যাত্রী সেবা সম্প্রসারিত হচ্ছে না। গাড়ীর অভাবে ইতোপূর্বে বরিশালÑপটুয়াখালী ও বরিশালÑবরগুনা জেলা সদর রুটের বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি এ ডিপোর বাস সংকটে দেশের অন্যান্য ডিপোর গাড়ী এ অঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করেছে।
ইতিমধ্যে বগুড়া বাস ডিপো পঞ্চগড় Ñ বরিশাল Ñ পটুয়াখালী, রাজশাহী Ñ বরিশাল Ñ আমুয়া ও রাজশাহী Ñ বরিশাল Ñ ঝালকাঠী রুটে সার্ভিস চালু করেছে। অনুরূপভাবে দিনাজপুর ডিপোর গাড়ী সেখান থেকে বরিশাল হয়ে সুদুর কুয়াকাটা পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু করেছে। পাবনা বাস ডিপোর গাড়ীও সেখান থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটায় যাচ্ছে। এমনকি সদ্য চালু হওয়া বিআরটিসি’র গোপালগঞ্জ ডিপোর বাস বেনাপোল Ñ বরিশাল ও সাতক্ষীরা Ñ কুয়াকাটা রুটে যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। এছাড়াও খুলনা বাস ডিপোর গাড়ীও সেখান থেকে বরিশাল হয়ে নলছিটি এবং যশোর থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটায় যাত্রী পরিবহন করছে।
কিন্তু সচল বাসের অভাবে বরিশাল বাস ডিপোটি কাঙ্খিত যাত্রী সেবা সম্প্রসারন করতে পারছে না। বাসের অভাবে বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনা রুটে কাঙ্খিত যাত্রী সেবা দিতে পারছে না বিআরটিসি। অথচ এ রুটে বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দুটি বিভাগীয় সদরের নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক পরিবহন নিশ্চিত হতো। এ ডিপোটির অভ্যন্তরে অর্ধেকেরও বেশী জায়গা জুড়ে এখন অচল বাসের নিথর দেহ পাড়ে আছে।
এসব বিষয়ে সংস্থাটির বরিশাল বাস ডিপোর ব্যবস্থাপকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজী না হলেও পরিস্থিতি উন্নয়নে কর্তৃপক্ষ সব সময়ই চেষ্টা করছেন বলে জানান। তবে পরিস্থিতি আগের চেয়ে যেকোন সময়ের চেয়ে অনেক ভাল বলে জানান তিনি।