আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস - ajkerparibartan.com
আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে চালু হচ্ছে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস

2:41 pm , November 22, 2021

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ প্রায় দশ বছর পরে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পুনরায় চালু হতে যাচ্ছে বরিশালÑচট্টগ্রাম উপকুলীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস। ২০১১ সালে মধ্যভাগে নির্ভরযোগ্য নৌযানের অভাবে এ উপকুলীয় সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সোমবার বিআইডব্লিউটসি’র পরিচালক-বানিজ্য এবং যাত্রী সেবা ইউনিট প্রধানের সাথে আলাপ করা হলে ২ ডিসেম্বর বরিশালÑচট্টগ্রাম উপকুলীয় যাত্রীবাহী সার্ভিসটির সম্ভাব্য পরীক্ষামূলক পরিচালন শুরুর কথা বলা হয়েছে। প্রথমিকভাবে সপ্তাহে ৪দিন ‘ এমভি বার আউলিয়া’ ও ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ নামের দুটি উপকুলীয় নৌযান বরিশাল ও চট্টগ্রামের উভয় প্রান্ত থেকে সকাল ৭টায় যাত্রা করে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে গন্তব্যে পৌছার কথা বলা হয়েছে। তবে ভাটি মেঘনার প্রবল ¯্রােত অতিক্রম করে তা কতটা নির্ধারিত সময়ে পৌছতে পারবে সে ব্যাপারে কিছুটা সন্ধিহান ওয়াকিবহাল মহল। পথিমধ্যে ভোলার ইলিশাঘাট ও হাতিয়াতে যাত্রা বিরতি করবেনৌযানগুলো। ফলে ভোলা ও হাতিয়ার সাথেও বরিশাল এবং চট্টগ্রামের নিরাপদ ও সহজ নৌ-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।
বিআইডব্লিউটিসি’র উচ্চ পর্যায় থেকে আগষ্টের মধ্যেই বরিশালÑচট্টগ্রাম উপকুলীয় সার্ভিসটি পুণর্বহালের সিদ্ধান্ত থাকলেও ‘এমভি বার আউলিয়া’র পূণর্বাসন বিলম্বিত হওয়ায় তা ক্রমাগত পেছাতে থাকে। ২০০২ সালে চীন থেকে সংগ্রহ করা নৌযানটির পেছনে ইতোপূর্বে আরো প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরে এবার পুরনোর পরিবর্তেন নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটসি’র তরফ থেকে বরিশালÑচট্টগ্রাম নৌ-পথে জরিপ সম্পন্ন করে রুট ম্যাপ সরবরাহের জন্য আইডব্লিউটিএ’কে বলা হলেও তাও বিলম্বিত হচ্ছে। সংস্থাটি ২৫ নভেম্বর বরিশালÑচট্টগ্রাম নৌ-পথে উপকুলীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি চালুর প্রস্তুতি নিলেও বিআইডব্লিউটিএ’র তরফ থেকে জরিপ সম্পন্ন না হওয়ায় সে তারিখটিও ঠিক থাকল না। ১৯৬৪ সালে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান শিপিং করপোরেশন পশ্চিম জার্মানী থেকে সংগ্রহ করা ৪টি নৌযানের সাহায্যে বরিশালÑহাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম উপকুলীয় নৌপথে যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিস চালু করে। ঐসব নৌযানের মধ্যে ‘এমভি মনিরুল হক’ ও ‘এমভি আবদুল মতিন’ ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে পূর্ণবাসনও করা হয়। কিন্তু ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের কারনে ঐসব নৌযান খুব বেশীদিন নির্বিঘেœ চলেনি। নতুনের পরিবর্তে রিকন্ডিশন ইঞ্জিন সংযোজন সহ নানামুখী দূর্নীতির কারণে ঐসব নৌযান নিয়ে বরিশাল থেকে চট্টগ্রামের প্রায় পৌনে ৩শ কিলোমিটার নৌপথ অতিক্রম করতে ঝুকি নেয়নি বিআইডব্লিউটিসি’র দায়িত্বশীল মহল। ফলে প্রায় ৪৭ বছর পরে অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ ঐ সার্ভিসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উপকুলের বিশাল জনগোষ্ঠী চরম দূর্ভোগে পড়েন। অথচ রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির উপকুলীয় ঐ সার্ভিটিকে খোদ বিশ^ব্যাংকও ‘গন দায়বদ্ধ সেবাখাত’ হিসেবে চিহিৃত করেছে। দেশের উপকুলীয় নৌ-যোগাযোগ পরিচালন-এর জন্য সরকার প্রতিবছর বিঅইডব্লিউটিসি’কে ৫০ লাখ টাকা নগদ ভর্তুকিও প্রদান করে আসছে। ইতোমধ্যে ২০০২ সালে সংগ্রহ করা ‘এমভি বার আউলিয়া’ নৌযানটির কারিগরি ও যান্ত্রিক ত্রুটি শুরু হয়।
এসব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপকুলীয় নৌ-যোগাযোগ নির্বিঘœ করার লক্ষে উপকুলীয় নৌ-পথের জন্য মাঝারী সাইজের দুটি উপকুলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ দুটি উপকুলীয় নৌযান নির্মান প্রকল্প একনেক-এর চুড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। এর প্রায় বছর খানেক পরে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর ৭শ যাত্রী বহনক্ষম উপকুলীয় নৌযান নির্মানের লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটসি’র সাথে ‘থ্রি এ্যাংগেল মেরিন লিমিটেড এন্ড দি কুমিল্লা শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড জেভি’র ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ১৯৭ ফুট দৈর্ঘ ও প্রায় ৪০ ফুট প্রস্থ নৌযানটির নির্র্মান কাজ ২০ মাসে শেষ হবার কথা থাকলেও তিন দফায় আরো ৪ বছর সময় বাড়িয়ে গত মার্চে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০ মাসের নির্মান কাজ নৌ নির্মান প্রতিষ্ঠানটি শেষ করেছে মাত্র ৬৮ মাসে। গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ নামের এ নৌযানটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। ১১.৪৮ ফুট মোলডেড ও ৭.৩৮ সর্বোচ্চ লোডেড ড্রাফটের এ নৌযানটিতে ইকনোমি ক্লাসে ৭১২ জন, স্ট্যান্ডার্ড ক্লাসে ১৭২ জন ছাড়াও স্ট্যান্ডার্ড ও বিজনেস ক্লাসে ৮ জন করে ১৬ জন যাত্রী বহন করবে। নৌযানটিতে যাত্রী ও পণ্য মিলিয়ে ধারন ক্ষমতা ১৭৫ টন। বেলজিয়ামের ‘ এবিসি’ ব্রান্ডের ৭৫০ অশ^শক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ এ নৌযানটি ঘন্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল বা ১৮.৫২ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম।
বরিশালÑচট্টগ্রাম রুটে প্রায় ৭শ যাত্রী বহনক্ষম অপর নৌযান ‘এমভি বার আউলিয়াতে প্রথম ও ডিলাক্স কক্ষ ছাড়াও বেশ কিছু দ্বিতীয় শ্রেণীর কক্ষ সহ প্রায় দেড়শ টন পণ্য পরিবহন সুবিধা রয়েছে। যা বরিশাল ও চট্টগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়াতে নিত্যপণ্য সামগ্রী ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পণ্য পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলেও কর্তৃপক্ষ আশা করছেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT