কাল সদরের ছয় ইউনিয়নে ভোট কাল সদরের ছয় ইউনিয়নে ভোট - ajkerparibartan.com
কাল সদরের ছয় ইউনিয়নে ভোট

3:10 pm , November 9, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দ্বিতীয় ধাপে আগামীকাল ১১ নভেম্বর বরিশাল সদর উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পরিষদের ভোট হবে। ইউনিয়নগুলো হলো : চরমোনাই, শায়েস্তাবাদ, রায়পাশা-কড়াপুর, চরমোনাই, চন্দ্রমোহন এবং চাঁদপুরা। ইতিমধ্যে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্নের লক্ষ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্নের কথা জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বিগত সময়ের নির্বাচনের চেয়ে এবারের এই নির্বাচনকে অনেকটা প্রতিযোগীতামূলক হিসেবে দেখছেন প্রার্থী ও ভোটাররা। কারণ ২০১৬ সালের নির্বাচন হয়েছিলো দলীয় প্রতীকের বাইরে এবং বলতে গেলে এক তরফাভাবে। ফলে ভোটারদের মধ্যে তেমন কোন আগ্রহ ছিলনা। কিন্তু এবারের নির্বাচনে প্রতিটি ইউনিয়নেই একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে নির্বাচনী আমেজ তৈরী হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সরকার দলীয় প্রার্থীদের লোকজন ভোটারদের হুমকী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা করায় শেষ মুহূর্তে আতকিংত হয়ে পড়েছেন ভোটাররা। একই সাথে অধিকাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এবারের নির্বাচনে বেশিরভাগ ইউনিয়নেই আওয়ামীলীগসহ সব দলের প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর বাইরে আবার প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে বিদ্রোহের জ্বালা। ছয়টি ইউনিয়নের চারটিতেই আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে রায়পাশা-কড়াপুর ও চরকাউয়া ইউনিয়নে। রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ শাহরিয়ার ওরফে বাবু। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকন ও মিজানুর রহমান চৌধুরী। খোকন ২০১৬ সালে আওয়ামীলীগের হয়ে নির্বাচন করে প্রথমবারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই বছর তার তেমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বি মাঠে ছিলনা। অপর বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরী। তিনি এক সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে দলে তার কোন পদ না থাকলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়ছেন উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের ছোট ভাই মো. মনিরুজ্জামান। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী বরকত উল্লাহ কাছেমী এবং জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান। চরমোনাই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মনিরুল ইসলাম ছবির বিরুদ্ধে মাঠে আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ হাওলাদার ও সুলতান আহম্মেদ খান। এই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আলী আহম্মেদ তালুকদার, বিএনপির মামুন সরদার এবং জাতীয় পার্টির জয়নুল আবেদীন। শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুই বারের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান মুন্না। তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুবেল হোসেন মামুন। এছাড়া এ ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন তুহিন। চরমোনাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম। এখানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী চরমোনাই পীরের ছোট ভাই সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম। এখানে অবশ্য আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। চাঁদপুরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দীন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক জাহিদ হোসেন। চাঁদপুরায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. আলী আজিম খান। এর বাইরে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ আমান। তিনি এক সময় জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকলেও সম্প্রতি তাকে বহিষ্কার করা হয়। চন্দ্রমোহন ইউনিয়নও অবশ্য বিদ্রোহমুক্ত। এখানে নৌকার প্রার্থী এসএম মতিউর রহমান। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন বিএনপির মো. সিরাজুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. অলিউর রহমান।
এদিকে পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গ্রামীন জনপদ। রাতের আধারে বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভোটারদের নানা ধরণের ভয়ভীতি প্রদর্শনের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা এমনকি হামলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। ফলে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতভাগ সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্নের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাদের এই আশ্বাসের প্রতিফলন কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে চিন্তিত নন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ভোটাররা।
রোববার উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে নৌকার প্রার্থীর লোকজন। হামলায় বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত জখম হয়েছে, ভাংচুর করা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত মাইক ও একটি অটো। ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী (আনারস) মিজানুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান শাহরিয়ার বাবুর কর্মী সমর্থকরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য নানা ধরণের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। শুধু তাই নয় আমার কর্মীদের মারধর এবং নির্বাচনী প্রচারনার মাইক ভেঙ্গে ফেলেছে নৌকার সমর্থকরা। গত রোববার বিকেলে ভাঙ্গার পোল এলাকায় তার কর্মী সমর্থকদের উপর আকস্মিক হামলা চালায় নৌকার প্রার্থী আহম্মেদ শাহরিয়ায়ের কর্মীরা। হামলায় আনারস প্রতীকের কর্মী তুহিন, হাফিজুল ও আকবর রক্তাক্ত জখম হয়। এসময় নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত মাইক ও একটি অটো ভাংচুর করা হয়। বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান চৌধুরী। আমরা ইতিমধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি। এদিকে রায়পাশা-কড়াপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহম্মেদ শাহরিয়ার বাবুর অফিসের একাংশের পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে অজ্ঞাত দুবৃর্ত্তরা। গত সোমবার গভীর রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ৩নং ওয়ার্ডের কারিগর বাড়ি সেন্টারে নির্বাচনী অফিস পুড়িয়ে ফেলা হয়। এব্যাপারে বিমানবন্দর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে বাবুর অভিযোগ পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
বরিশাল সদর উপজেলার ৬ ইউনিয়নের প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ করা হয় ২৭ অক্টোবর। ২৮ অক্টোবর সকল প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করে প্রশাসন। ওই সভায় জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন হায়দার, পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দীন খানসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টকরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার প্রতিশ্রতি দেয়া হয়। প্রশাসনের কাছ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আনন্দিত হলেও এখন সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিবেশ উত্তপ্ত করছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তারা চাইছেন ভোটাররা যাতে কোনভাবে কেন্দ্রে না যেতে পারে। ইতিমধ্যে অনেক ভোটাররা আতংকিত হয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা বলছেন সুষ্ঠু ভোটের কোন পরিবেশ নেই। নৌকার প্রার্থীরা পরিবেশ নষ্ট করছে। এরকম চললে কোনভাবেই ভোটারদের কেন্দ্রে নেয়া সম্ভব হবেনা। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন হায়দার বলেন, ইতিমধ্যে আমরা প্রথম ধাপে চারটি ইউনিয়নে যেভাবে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে এবং নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করেছি দ্বিতীয় ধাপেও এর ব্যতয় হবেনা। এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি। তারপরেও আমরা ইউনিয়নগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছি যাতে কেউ আচরণ বিধি লংঘন করতে না পারে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য বিপুল পরিমান র‌্যাব, বিজিবি সদস্য এবং ৩৮ জন ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। সুতরাং নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার কোন সুযোগ নেই।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT