‘অশ্বিনী কুমার’ হল রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি ‘অশ্বিনী কুমার’ হল রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি - ajkerparibartan.com
‘অশ্বিনী কুমার’ হল রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি

3:05 pm , October 23, 2021

কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ ॥ অশ্বিনী কুমার হল। শতাব্দী প্রাচীন নগরীর ঐতিহ্যবাহী হল। বরিশালসহ দক্ষিনবঙ্গের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্র। পরাধীন ভারত থেকে শুরু করে অদ্যাবধি রাজনৈতিক , সামাজিক, সাংস্কৃতিক বহু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, ইতিহাসের নীরব সাক্ষী ইটের তৈরি লাল রঙের এই অশ্বিনীকুমার হল, শহরের কেন্দ্রস্থল সদর রোডে অবস্থিত। জনসাধারনের কাছে টাউন হল নামেই সমধিক পরিচিত। তবে স্বনাম টিকিয়ে রাখতে অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝা পার হতে হয়েছে হলটিকে। ১৯৫৮ খৃস্টাব্দে আয়ুব আমলে নাম বদল করে আয়ুব খান টাউন হল করা হয়েছিলো, জনতার প্রতিবাদে চালাকির আশ্রয় নিয়ে পরে করা হয় একে টাউন হল। স্বাধীনতার পর নিজ নাম ফিরে পেলেও টাউন হল নামটি এখনও বেশিরভাগ মানুষের মুখে মুখে আছে। কয়েক বছর আগে পর্যন্তও নগরীর জনসভা, সম্মেলন, নাটক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এখানেই আয়োজন হত। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভগ্নদশা আর ব্যবহার উপযোগীতা না থাকায় হলটি এখন তালাবদ্ধ। এখন হলটির সামনে সদর রোডে বিভিন্ন প্রতিবাদী সভা, মানববন্ধন করা হয়ে থাকে। হাবেলীর মালিকদের কাছ থেকে কেনা প্রায় ৩৬ শতক জমির উপর নির্মান কাজ শুরু হয় ১৯২২ খৃস্টাব্দে। এর ভিত্তি প্রস্তর করা হয়েছিল ১৯২১ খৃস্টাব্দের আগস্ট মাসে। দুর্ভাগ্যবশত অন্যতম উদ্যোক্তা ‘অশ্বিনী কুমার দত্ত ১৯২৩ খৃস্টাব্দের ৭ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করলে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কালের নাম বন্দে মাতারম” বদল করে তাঁর নামে হলটির নামকরণ করা হয়। এর আগে কমিটির পক্ষে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হরলাল ঘোষ এবং ডাঃ তারিণী কুমার গুপ্ত এর নামে জমি কেনা হয়েছিলো। ১৯৩০ খৃস্টাব্দের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টি রেজিস্ট্রি করে হলটির মালিকানা এবং পরিচালনার দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয় ট্রাস্টির উপর। দীর্ঘ ১০ বছর পর এই হলের নির্মান কাজ শেষ হয় ১৯৩০ খৃস্টাব্দে। ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪০,০০০ টাকা। ১৯৫৮ খৃস্টাব্দে অশ্বিনীকুমার হলটি পৌর সভার অধীনে নেওয়া হয়। এখনও এটি সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আছে। কোনো এক অজ্ঞাত কারনে ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় এতদঞ্চলে আগ্রহ কম পরিলক্ষিত হয়। ১৮৫৩ খৃস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সরকারি বরিশাল জিলা স্কুলের মূল ভবন রক্ষা করা যায় নি। অবশ্য প্রয়াত হানিফ স্যারের প্রচেষ্টায় বিএম কলেজের মূল ভবনটি একই আদলে পূনঃনির্মান সম্ভব হয়েছিল।
বরিশাল শহরের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৪) বিএম স্কুল মূল ভবনটি খুব ভাল অবস্থায় নেই। অশ্বিনীকুমার দত্ত, জীবনানন্দের স্মৃতি বিজড়িত স্কুল ভবনটি রক্ষায় কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসা উচিৎ। বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি (১৮৫৪), জাহানারা হল মরণাপন্ন। হাজার বছরের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান কবি, ঔপন্যাসিক, গাল্পিক, রুপসী বাংলার কবি জীবনানন্দের গোরস্থান আর বগুড়া রোডের সংযোগ স্থলে সর্বানন্দ ভবন বাড়িটি এখন অন্যদের ব্যক্তিগত পাকাভবন এবং কিছু অংশে সরকারি স্থাপনা। পুকুর, গাছপালা, ছায়া ঘেরা বাড়িটি ছিল ৫-৬ বিঘা জমির উপর। ব্রাহ্মসমাজের প্রার্থনালয়ের ভগ্নদশা। যে কোন সময় ধ্বংস প্রাপ্ত হতে পারে। মূল আলোচনায় ফিরে আসি। অশ্বিনী কুমার হলটি একই আদল রক্ষা করে, পূনঃনির্মান, আধুনিকায়ন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার উপযোগী করার মাধ্যমে ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষা করে উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। প্রাণ ফিরে শতজনের পদচারনায় জমজমাট হয়ে উঠুক অশ্বিনী কুমার হল এবং এর প্রাঙ্গণ।
কীর্তনখোলার কোল ঘেষে আমাদের এই সমৃদ্ধ বরিশাল নগরীর ইতিহাস-ঐতিহ্য এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মের কাছে পৌছে দেবে এই সব স্থাপনা। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারে, ইতিহাস থেকে উদ্ধুদ্ধ হয়ে দেশকে ভালবাসতে পারে,সে কারনেই ভবনগুলির সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস, চিহ্ন রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি।
লেখক : পরিবেশ ও সমাজকর্মী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT