3:22 pm , October 16, 2021
বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন
হেলাল উদ্দিন ॥ বরিশাল মহানগর বিএনপির আসন্ন আহবায়ক কমিটি নিয়ে সৃষ্ট জটিল ও দূর্বোধ্য সমীকরন এখন অনেকটাই সরল অংকে রুপ নিয়েছে। মিলতে শুরু করেছে হিসেব নিকাশের আদ্যপান্ত। কমিটি ঘোষনা হতে পারে সপ্তাহ দুয়েক আগে এমন খবরে বরিশাল বিএনপির নেতাকর্মী বিশেষ করে পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে যে জটিল সুত্র দানা বেঁধেছিলো তা এখন অনেকটাই পরিস্কারাচ্ছন্য চিত্রে ফুটে উঠছে।
গত কয়েক দিন ধরে নেতাদের ঘুম হারাম দৌড়ঝাপ, কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে মতবিনিময় এবং সর্ব শেষ দলের শীর্ষ নেতার সাথে বৈঠক ও আলাপচারিতায় পদ প্রত্যাশী নেতাদের মাথা থেকে জটিলতার জট নেমে গেছে তেমনি কমিটিতে কারা স্থান বা পদ পদবী পেতে পারেন তাও অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গেছে তাদের কাছে। মূলত গত মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানের সাথে বরিশাল বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। ওই বেঠকে কমিটি প্রসঙ্গে তারেক রহমানের বক্তব্য,নির্দেশনা ও আলোচনায় পরোক্ষ ভাবে কমিটি প্রাসঙ্গিক সকল উত্তর পেয়ে গেছেন বরিশাল বিএনপির নেতারা। কারা পদ পাবেন, আর কারা পাবেন না, এ সব কিছুই বুদ্ধিদীপ বক্তব্যে স্পষ্ট আভাস দিয়েছেন তারেক রহমান।
মূলত এর পর পরই নিজেরাই হিসেব নিকেশ মিলিয়ে কমিটি ঘোষনার দিনক্ষন গুনছেন পদ প্রত্যাশি নেতারা। তারপরও কমিটি ঘিরে আগ্রহ,কৌতুহল ও শংকার শেষ নেই বরিশাল বিএনপির নেতাদের মাঝে।গত মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সভা করে বরিশাল মহানগর বিএনপিসহ তিনটি সাংগঠনিক কমিটি গঠনে শীর্ষ পদের জন্য স্থানীয় ১৮ নেতার তথ্য সংগ্রহ করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও দু’জন সহসাংগঠনিক সম্পাদকের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করে দলের হাইকমান্ড। দেশের অন্যান্য বিভাগের তুলনায় এ বিভাগে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেক পিছিয়ে কেন, তা জানতে চেয়েছেন তারেক রহমান। এমনকি কমিটি গঠনে তারা নিজেরাই পদ প্রত্যাশীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে কোন্দলকে উস্কে দেওয়ার জন্য দলের শীর্ষ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।আলোচনা সভায় আভাস মিলেছে এক নেতার এক পদ থাকছে এবারের সকল কমিটি গঠনের মূল সুত্র। এছাড়া দলে কোন্দল সৃষ্টিকারী,আন্দোলন সংগ্রামে পিছিয়ে থাকা,সুবিদাবাদী কমিটিতে পদ পদবীর বাইরে থাকবে। অগ্রাধিকার পাবে ত্যাগী, মামলা হামলার শিকার,পুরানো ছাত্র নেতারা। তবে বর্ষীয়ান ও বয়োজ্যেষ্ঠ হলেও আন্দোলন সংগ্রামে অক্ষম এমন নেতারদের রাখা হচ্ছে না কমিটির গুরুত্বপূর্ন পদে। আলোচনার এমন সমাপ্তির পর উৎফুল্ল ও মলিনতার মিশ্রন ছিলো পদ প্রত্যাশী অনেকের মুখে। কারন নেতার কথায়ই পরিস্কার হয়েছে কোন আদলে হবে কমিটি গঠন। সহজ সমীকরন চলে আসে নেতাদের এতদিনকার জটিল হিসাবে।
পদ প্রত্যাশী অনেক নেতা বলেন এক নেতা,এক পদ এমন নীতির বাস্তবায়ন হলে নের্তৃত্বে নতুন মুখ আসবে।সে ক্ষেত্রে আহবায়ক পদের জন্য তালিকাবন্ধী থাকবেন আহসান হাবিব কামাল,মনিরুজ্জামান ফারুক, আলী হায়দার বাবুল ও বিলকিস জাহান শিরিন। একাধিক সুত্রের জরিপ বলছে এ পদে এগিয়ে থাকবেন আহসান হাবিব কামাল ও মনিরুজ্জামান ফারুক। তবে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মজিবর রহমান সরোয়ার কাঙ্খিত পদে পুনরায় আসীন হতে পারেন। বিএনপির অনেক নেতারই এই ধারনা। তারা মনে করছেন বরিশাল বিএনপিতে মজিবর রহমান সরোয়ারের এখনো বিকল্প কেউ নেই।
সদস্য সচিব পদ প্রত্যাশী নগর বিএনপির বর্তমান সাধারন সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন পদ নিয়ে আমার কোন প্রত্যাশা নেই। পদের জন্য আমি রাজনীতি করি না। দলের মূল্যায়নকে আমি শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। দলের প্রতি আমার অবদান ত্যাগ-তীতিক্ষা সবার জানা আছে। তাই নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। দল যদি আমাকে মুল্যায়ন করে আমি পূর্বের মতো মন প্রান উজার করে কাজ করবো।অন্য দিকে সদস্য সচিব পদে জিয়াউদ্দিন সিকদার, মীর জাহিদুল কবির জাহিদ, শাহ আমিনুল ইসলাম আমিনের নাম এত দিন বেশ স্বজোড়ে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু এই পদ প্রত্যাশীদের মধ্যেও শুরু হয়েছে মলিনতা। বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন দলের হাই কমান্ডে অনেক নেতা আছে যারা দুটি পদ নিয়ে আছে। তিনি বলেন পদটা বড় কথা নয়, বিষয় হলো কাকে দায়িত্ব দিলে দল ভাল ভাবে চলবে। তিনি আরো বলেন এটা সত্যি যে সাম্প্রতিক সময়ে দলের ভিতরে সামান্য বিভাজন তৈরী হয়েছে। কিন্তু আমার বিশ^াস আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে সব বিভেদ ভুলে সবাই আমার কাছে ছুটে আসবে। কারন যারা প্ররোচনায় আংশিক পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা তো আমারই নেতাকর্মী।আহবায়কের পদের দাবীদার কেন এমন প্রশ্নে সাবেক সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল বলেন, প্রথমত আমি বর্তমানে দলের কোন পদে নেই। রাজনৈতিক প্রতিহিংষার শিকার হয়ে দন্ডিত হয়েছি। পৌর কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পৌর মেয়র ও একাধিক বার সিটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। জেলা বিএনপির সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় মৎস বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালণ করেছি। আমার দ্বারা কখনো দলের নেতাকর্মীরা অবজ্ঞা বা বঞ্চনার শিকার হয়নি। কোন্দল শব্দটি আমার অভিধানে নেই। সদস্য সচিব পদ প্রত্যাশী নগর বিএনপির বর্তমান সাধারন সম্পাদক জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, পদ নিয়ে আমার কোন প্রত্যাশা নেই। পদের জন্য আমি রাজনীতি করি না। দলের মূল্যায়নকে আমি শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। দলের প্রতি আমার অবদান ত্যাগ-তীতিক্ষা সবার জানা আছে। তাই নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। দল যদি আমাকে মুল্যায়ন করে আমি পূর্বের মতো মন প্রান উজার করে কাজ করবো। সদস্য সচিব পদে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা নগর যুবদলের সভাপতি আখতারুজ্জামান শামীম বলেন, ১৯৮৪ সাল থেকে ছাত্রদলে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার রাজনৈতিক জীবন শুরু। এর পর বরিশালের একাধিক কলেজে এবং জেলা ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্ব পালণ করেছি। এছাড়া নগর যুবদলের সাধারন সম্পাদক পদ থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিণœ পদেও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যারা বর্তমানে সদস্য সচিব পদ প্রত্যাশা করে তাদের সবার থেকে আমি সিনিয়র। আশা করছি সব কিছু বিবেচনায় দল প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নেবে।
একই প্রশ্নের জবাবে সদস্য সচিব পদ প্রত্যাশী নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মীর জাহিদুল কবির জাহিদ বলেন আওয়ামীলীগ কিংবা প্রশাসনের ভয়ে কখনো রাজপথ থেকে পালিয়ে যাইনি। অসংখ্যবার মামলা হামলার শিকার হয়েছি। তবুও দলের সকল কর্মসূচী দাপটের সাথে পালন করেছি। যদি দল আমাকে দায়িত্ব প্রদান করে তাহলে প্রথমেই সাবেক ত্যাগী নেতাদের দলে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। কারন তারাই দলের কষ্টি পাথর। তিনি বলেন অনেক ত্যাগী,দল প্রেমিক সাবেক নেতা রয়েছে যারা অবমূল্যায়ন,অবজ্ঞা ও অপমানিত হয়ে দলছুট হয়েছেন। দায়িত্ব পেলে যে ভাবেই হোক তাদের দলে ফিরিয়ে আনব। কারন এই মূহুর্তে দলে তাদের খুবই প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন একটানা ৪ বার সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এটাই প্রমান করে দল ও দলের বাইরে আমার জনপ্রিয়তা। তিনি বলেন অনেক লোভনীয় অফার পেয়েছি। কিন্তু দলছুট হইনি। বর্তমানে ৮ টি রাজনৈতিক মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরছি। এখন মূল্যায়ন করা দলের বিষয়।
আলাপকালে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন আমরা এক নেতা এক পদ এই নীতিতেই কাজ করছি। তবে দলের স্বার্থে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যাতিক্রম হতে পারে। তবে তা ঢালাও ভাবে না। তিনি বলেন অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অধিক স্বচ্ছ ও সাংগঠনিক সকল গুনের সংমিশ্রনে এবার কমিটি গঠন করা হবে। আমরা দলকে শক্তিশালী করতে কয়েক স্তরে এ বিষয়ে তদারকি করছি। আমি এতটুকু বলতে চাই অযোগ্য ও সুবিদাবাদীদের চেহারা কমিটিতে পড়বে না। তিনি আরো বলেন আপনার মাধ্যমে বরিশালের নেতাকর্মীদের আশ^স্ত করতে চাই যোগ্যদের দিয়ে যোগ্য কমিটি উপহার দেব। চলতি মাসের শেষ অথবা নভেম্বরের শুরুতে কমিটি গঠনের জোড়ালো সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।