দক্ষিণাঞ্চলে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ৭শ’ জেলের দন্ড দক্ষিণাঞ্চলে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ৭শ’ জেলের দন্ড - ajkerparibartan.com
দক্ষিণাঞ্চলে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে ৭শ’ জেলের দন্ড

2:50 pm , October 11, 2021

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ অবাধ ও নির্বিঘœ প্রজনন নিশ্চিত করতে উপকূলভাগ সহ সারাদেশে ইলিশ আহরণে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার প্রথম সপ্তাহেই আইন-শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসনের অভিযানে বিপুল সংখ্যক নিষিদ্ধ জাল ছাড়াও ইলিশ আটকের পাশপাশি প্রায় ৭শ’ জনকে কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। জরিমানা আদায় হয়েছে ১৬ লক্ষাধিক টাকা। গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে কার্যকর এ নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত। ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে এবারো পুলিশ ও র‌্যাব ছাড়াও নৌবাহিনী এবং কোষ্ট গার্ড সাথে বিমান বাহিনীকেও কাজে লাগানো হচ্ছে। এ অভিযানে নৌ বাহিনীর ৭টি পেট্রোল ক্রাফট ছাড়াও কোষ্ট গার্ডের অর্ধ শতাধিক বিভিন্ন ধরনের টহলযান সম্পৃক্ত রয়েছে। এ ছাড়াও পুলিশ ও র‌্যাব তাদের নিজস্ব নৌযান সহ দক্ষিণাঞ্চল সহ সারাদেশে টহল অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।
কিন্তু এবার জেলে ও মৎস্যজীবীদের মধ্যে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা অমান্যের প্রবণতা যথেষ্ট বেশি লক্ষ্যণীয়। ইতোমধ্যে মেহেন্দিগঞ্জে ইলিশ আহরণ বিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা নির্বাহী কর্র্মকর্তার স্প্রীডবোট ডুবিয়ে দেয়ার চেষ্টার মত ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি সতর্ক নজরদারীর পরেও বিভিন্ন নদ-নদীতে ইলিশ আহরণে জেলেদের মধ্যে অতি আগ্রহও লক্ষ্যণীয়। তবে মৎস্য বিভাগ প্রশাসন ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় কঠোর নজরদারী সহ ইলিশ আহরণ বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছে।
আশ্বিনের ভরা মৌসুমে ভোলার পশ্চিম আউলিয়া পয়েন্ট-তজুমদ্দিন, মনপুরা দ্বীপ, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লতাচাপলি পয়েন্ট-এর ধলচর দ্বীপ, মৌলভীরচর দ্বীপ ও কালিরচর দ্বীপ, মায়ানী পয়েন্ট-মীরসরাই ছাড়াও কুতুবদিয়া পয়েন্ট এলাকায় মা ইলিশের অত্যাধিক প্রাচুর্য থাকায় ঐসব এলাকার ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারে ২২ দিনের জন্য সব ধরনের মৎস্য আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। গত ৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত মৎস্য বিভাগ উপকূলভাগ ও দক্ষিণাঞ্চলে ৫৮৮টি অভিযান ছাড়াও ৭২৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রায় ৮৭০টি মামলা দায়ের করেছে। এসময় প্রায় ১৩ হাজার কেজি জব্দকৃত ইলিশ বিক্রি করে আয় হয়েছে সোয়া লক্ষ টাকা। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৬৬৩ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডাদেশ প্রদান ছাড়াও ১৬ লক্ষাধিক টাকা জরিমানাও আদায় করা হয়েছে।
তবে এসব অভিযানে আরো বড় সাফল্য এসেছে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ ঘোষিত জাল আটকের মাধ্যমে। মাত্র এক সপ্তাহেই দক্ষিণাঞ্চল সহ উপকূলভাগে প্রায় ২ কোটি ৬৪ লাখ মিটার নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জাল আটক করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত এসব জালের দাম প্রায় ৩৩ কোটি টাকা বলে মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আগামী ১৫ দিনও এ ধরনের অভিযান ও মোবাইল কোর্ট অব্যহত থাকবে বলে অধিদপ্তর জানিয়েছে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের সুপারিশে, প্রজনন নির্বিঘেœর মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ২২ দিনের জন্য সব ধরনের মাছ আহরণ সহ সারাদেশে ইলিশের পরিবহন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয় ৪ অক্টোবর রাতে। টানা ২২ দিন ইলিশ আহরণে বিরত বিশাল জেলে সম্প্রদায়ের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০ কেজি করে চাল প্রদান করা হচ্ছে। শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের সাড়ে ৩ লাখ জেলের মধ্যে ৩ লাখ ৭ হাজার ১২৪ জনকে প্রায় ৭ হাজার টন চাল বিতরণ কাজ চলছে।
‘হিলশা ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান’র আওতায় ২০০৫ সালেই প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১০ দিন, ২০১১ সালে ১১ দিন, ২০১৫ সালে ১৫ দিন ও ২০১৬ সালে থেকে ২২ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নানামুখী বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন এক সময়ের ১.৯৮ লাখ টন থেকে বর্তমানে সাড়ে ৫ লাখ টনের ওপরে উন্নীত হয়েছে। এমনকি সারা বিশে^র ৬০%-এরও বেশী ইলিশ এখন বাংলাদেশেই উৎপাদন হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে ইলিশের একক অবদান এখন ১%-এর বেশী। আর মৎস্য খাতে অবদান প্রায় ১২.৫০%। বাংলাদেশের ইকো সিস্টেমে সারা বছরই ৩০% ইলিশ ডিম বহন করে। এসব ইলিশ পরিপক্ক হয়ে ডিম ছাড়ে। যে ডিমগুলো পুরুষ ইলিশ দ্বারা নিষিক্ত হয়ে থাকে, তা নতুন প্রজন্ম গঠন করে। গবেষনায় দেখা গেছে, ২০১৮-এর ৭-২৮ অক্টোবর আহরণ বন্ধ থাকাকালে উপকূলের প্রজননস্থল সহ অভ্যন্তরীন মুক্ত জলাশয়ে ৪৮% মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পায়। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মতে প্রজননক্ষম মা ইলিশের হার ২০১৭ সালে ৭৩% থেকে ’১৮ সালে ৯৩%-এ উন্নীত হয়। পাশাপাশি এ সময়ে প্রজনন সাফল্য ৮০%-উন্নীত হয়। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধের ফলে ঐ সময়ে দেশে ৭ লাখ ৬ হাজার কেজি উৎপাদিত ডিমের ৫০%-এর সাফল্যজনক পরিস্ফুটন সহ তার ১০% বেঁচে থাকলেও ইলিশ পরিবারে নতুন ৩ হাজার কোটি জাটকা যুক্ত হয়েছে। অভিপ্রয়াণী মাছ ইলিশ জীবনচক্রে স্বাদু পানি থেকে নোনা পানিতে এবং সেখান থেকে পুনরায় স্বাদু পানিতে অভিপ্রয়ান করে। উপকূলের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মূল প্রজনন ক্ষেত্রে মুক্ত ভাসমান অবস্থায় ছাড়া ডিম থেকে ফুটে বের হয়ে, ইলিশের লার্ভা স্বাদু পানি ও নোনা পানির নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে বিচরণ করে খাবার খেয়ে বড় হতে থাকে। নার্সারী ক্ষেত্রসমূহে ৭-১০ সপ্তাহ ভেসে বেড়াবার পরে জাটকা হিসেবে সমুদ্রে চলে যায়। বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন এলাকায় ১২-১৮ মাস অবস্থানের পরে পরিপক্ক হয়েই পূর্র্ণাঙ্গ ইলিশ হিসেবে প্রজননের লক্ষ্যে আবার স্বাদু পানির নার্সারী ক্ষেত্রে ফিরে এসে ডিম ছাড়ে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT