2:38 pm , September 27, 2021
এক দশক আগে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপন
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা জাতীয় মহাসড়কের ‘বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু’ ও ‘মেজর জলিল সেত’ু দুটি আলোকিত করার লক্ষ্যে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম স্থাপনের পরে দশ বছর কেটে গেলেও সরকারী ঐসব স্পর্শকাতর স্থাপনায় কোন দিন বাতি জ¦লেনি। অথচ এখাতে সরকারী কোষাগার থেকে বেরিয়ে গেছে বিপুল অর্থ। কবে কিভাবে এসব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছিল, তাও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বর্তমান দায়িত্বশীল মহল কিছু জানেন না। অথচ সন্ধ্যা হলেই এসব সেতু ও সংযোগ সড়ক সহ সন্নিহিত এলাকা ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।
কুয়েত উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরী থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার ও ২১ কিলোমিটার উত্তরে বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা জাতীয় মহাসড়কে দোয়ারিকা ও শিকারপুরে দুটি সেতু নির্মিত হয়। ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরে ২০০৩ সালের ২০ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয়। সেতু দুইটির নামকরন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের দুই বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মেজর জলিল-এর নামে। সেতু দুটি প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মাধ্যমে বরিশাল প্রান্তে বিমান বন্দর এলাকায় এবং অপর প্রান্তের শিকারপুরের জয়শ্রী’তে সংযুক্ত হয়।
কিন্তু ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার’ পদ্ধতির এ দুটি সেতু ও দীর্ঘ সাড়ে ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটি আলোকিত করার কোন পদক্ষেপ ছিল না মূল প্রকল্পে। ফলে সমগ্র দক্ষিনাঞ্চলের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী এ দুটি সেতু ও সংযোগ সড়ক সন্ধ্যার পরেই ভুতুরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে মহাসড়কটি ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তাহীন করে তুলছে। ইতোমধ্যে এ সেতু ও সংযোগ সড়কে ছোট বড় অনেক ছিনতাই ও রাহাজানীর ঘটনা সড়ক ব্যবহারকারী সহ পথচারীদের প্রায়ই আতংকিত করছে। পুরো সংযোগ সড়ক ও সেতু দুটির বেশীরভাগ এলাকাই জনমানবহীন ফসলী জমির ভেতর দিয়ে চলমান।
সেতু দুটি ও সাড়ে ১২ কিলোমিটারর সংযোগ সড়কে বিজলী বাতি সংযোজনের দাবী দীর্ঘদিনের। এক সময়ে ঐ এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের কাছে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্যরাও বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেন। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি নিয়ে আর্জি জানান মোযাজ্জেম হোসেন আলাল। তখন যোগাযোগ মন্ত্রীর নির্দেশে এ লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর নীতিগত সিদ্ধান্তও গ্রহন করে।
এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ কালক্ষেপন করে ২০১২ সালে বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও মেজর জলিল সেতুর রেলিং সহ সংযোগ সড়কটির ২০ মিটারের মধ্যে প্রায় দেড়শ বৈদ্যুতিক খুটি স্থাপন করে সোডিয়াম বাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু ট্রান্সফর্মার স্থাপন সহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে সংযোগ গ্রহন করে এসব বৈদ্যুতিক খুটিতে আর কোন দিন আলো জ¦লেনি। বরিশাল সড়ক বিভাগও বিষয়টি নিয়ে পরবর্তিতে নুন্যতম কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি বলে জানা গেছে।
এমনকি বরিশাল সড়ক বিভাগ ও সার্কেলের বর্তমান দায়িত্বশীলগন প্রায় এক দশক আগে বিপুল অর্থ ব্যয়ে দুটি সেতুতে বিজলী বাতি সংযোজন সহ পরবর্তিতে তা কার্যকরি না করার বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই বলতে পারছেন না। এ ব্যাপারে বরিশাল সড়ক বিভাগের সাবেক দুজন নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তারাও কিছু বলতে পারেননি। তবে এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র খুজে বের করে সঠিক কারণ উদঘাটনের কথা জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু পরবর্তিতে সব কিছুই স্থিমিত হয়ে গেছে। তারা অন্যত্র বদলী হয়ে গেছেন।
বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীও বিষয়টি নিয়ে সঠিক কিছু বলতে না পারলেও পুরনো সব নথি খুজে বের করে পরবর্র্তি পদক্ষেপ গ্রহনের কথা জানিয়েছেন দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু এক দশক আগে এসব পোলের বৈদ্যুতিক ফিটিংশ এখন কতটা কার্যকরি আছে তা অজ্ঞাত। পাশাপাশি ট্রান্সফর্মার স্থাপন সহ বৈদ্যুতিক সংযোগ গ্রহন করে লাইন চালু করে সেতু দুটি আলোকিত করতে কত টাকার প্রয়োজন হবে তাও সবার কাছে আপতত অজ্ঞাত।