তিনশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনে পাঠদানের প্রস্তুতি তিনশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনে পাঠদানের প্রস্তুতি - ajkerparibartan.com
তিনশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনে পাঠদানের প্রস্তুতি

3:25 pm , September 6, 2021

আতংকে শিক্ষার্থী-অভিভাবক

সাঈদ পান্থ ॥ টানা দেড় বছর পর খুলতে চলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই স্কুলগুলোতে ধোয়া-মোছা, রং করার কাজে ব্যস্ত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাব আসার আগে যে সব স্কুল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো, সে সব মেরামত ও নির্মাণ না করার কারণে এখন চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কিন্তু তারপরও সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই পাঠদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে স্কুল সংশ্লিষ্টরা। বরিশালের ৬ জেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্তরে এ ধরনের স্কুল ভবন রয়েছে তিন শতাধিককের বেশি। বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় এ সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে উদ্বেগ কাজ করছে। যে কোন মুহূর্তে জরাজীর্ণ এ সব ভবনের ছাদ ধসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
চলতি বছরের ৭ এপ্রিল পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া এ হাকিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে অফিস সহকারী মিরন মিয়া আহত হয়েছেন। সে সময় এসএসসির ফরম পূরণের কার্যক্রম করছিলেন মিরন মিয়া। হঠাৎ ছাদের একটি অংশ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে আহত হন তিনি। বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে ওই বিদ্যালয়ে ছয় কক্ষবিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনেই বিদ্যালয়ের পাঠদান থেকে শুরু করে সমস্ত কার্যক্রম চলছে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। তবুও ব্যবহারের অনুপযোগী এ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহতাব হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। কোথাও রড বের হয়ে গেছে। প্রায়ই পলেস্তারা খসে খসে পড়ে। জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়ে এর আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার অনাদি কুমার বাহাদুর বলেন, ভবনটি দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ। বিদ্যালয়ে ৩৯১ জন শিক্ষার্থী। সেখানে একটি ভবন দরকার। আশা করি, শিক্ষা প্রকৌশল এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধু মাত্র বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলাতেই ২৯ টি স্কুল ভবন ঝুকিপূর্ণ। গত বছর তারা ঝুঁকিপূণ এই স্কুলগুলোর তালিকা জেলা অফিসে প্রেরণ করেছে। স্কুলগুলো হচ্ছে উত্তর পশ্চিম রাকুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাদিবাসকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাবুগঞ্জ সরকারি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্ষুদ্রকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্দ্রপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরজি কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মানিককাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর রফিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য গাজীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর রাকুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বায়লাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করমুল্লাকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আগরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংহেরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দরিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহিষাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খানপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওলানকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ ভূতেরদিয়া জনপ্রিয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইদিলকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ক্ষুদ্রকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রফিয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চন্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পূর্ব চাঁদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য বকশিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বায়লাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য কিসমত চাঁদপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চাঁদপাশা কিসমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একই ভাবে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ১৫ টি স্কুল ঝুকিঁপূণ। এ স্কুলগুলো মেরামত ও নির্মানের জন্য উপজেলা থেকে তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে জেলা অফিসে। এছাড়া আগৈলঝাড়া উপজেলা থেকে ১৩ স্কুলের তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। তারাও সংস্কার ও পূন নির্মানের দাবী জানিয়েছে। এই উপজেলার মধ্যে গৈলা ইউনিয়নের ২নং দক্ষিণ শিহিপাশা (দাসেরহাট) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। বিদ্যালয়টি ১৯৪০ সালে তিন কক্ষের টিনশেড বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। পরে দুটি কক্ষে টিন ও একটি কক্ষে ছাদ ঢালাই হলেও বর্তমানে টিনগুলো মরিচা পড়ে প্রায় শেষ, আর সেই ছাদ ভেঙে এখন একাকার। এ ছাড়া উত্তর শিহিপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুর্ব সুজনকাঠি, সেরাল, পূর্বসুজনকাঠি আইডিয়াল, পশ্চিম সুজনকাঠি, নাঘিরপাড়, দাসপট্টি, রাংতা, পূর্ব আস্কর, বাগধা, পয়সা, পশ্চিম আমবৌলা, ফেনাবাড়ি, চক্রবাড়ি ও তালতারমাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও চরম ঝঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের দাওকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান শাহিন বলেন, করোনার কারণে পাঠ বন্ধ থাকলেও বাকি সব কিছুই চালু ছিল। যার কারণে কম বেশি সব স্কুলেই ইন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এমনকি স্লিপ ফান্ড থেকে স্কুল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশনা ছিল। পাশাপাশি শিশুরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে যেন স্কুলে প্রবেশ করতে পারে সেই বিষয়ে কাজ করার নির্দেশনা ছিল সরকারের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে শিশুদের হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনো যে সব স্কুলের ঝুকিঁপূণ রয়েছে তা অচিরেই মেরামত ও সংস্কার করা হবে।
বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলের সন্ধান পেলেই, আমরা সাথে সাথে সংস্কার বা নির্মানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকি। সেক্ষেত্রে আামাদের ঝুকিপূর্ণ স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। বরিশাল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২০টি স্কুল মেরামত ও নির্মানের চিঠি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জ ও মুলাদীতে ৪টি করে মোট ৮টি। বাকি উপজেলায় ঝুকিঁপূর্ণ স্কুলের সংখ্যা খুবই কম। এ বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, উপজেলা থেকে তালিকা পাওয়ার পরই আমরা সংস্কার ও নির্মান কাজে হাত দেই। পূর্বে যে আবেদনগুলো এসেছিল তা মেরামত করা হয়েছে। এখন যে কয়টি বাকি রয়েছে তা টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংস্কার ও নির্মাণ করা হবে।
শুধু মাত্রা বরিশাল জেলাই নয় এমন ঝুকিপূর্ণ স্কুল রয়েছে বিভাগের প্রায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায়। এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের শিক্ষা অফিসার জামাল উদ্দীন খান জানান, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবনের তথ্য নিয়ে সেগুলোর সংস্কার ও নির্মাণ করানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি বছর প্রতিটি স্কুলকে স্লীপ প্রোগ্রামের আওয়তায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দেয়া হয়। যা দিয়ে স্কুলগুলো ছোটখাটো মেরামত ও সংস্কার কাজ করতে পারে। আর বড় কাজের জন্য ১ লাখ থেকে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তাই ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলের সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT