ঢাকামুখী পোশাক শ্রমিকদের ¯স্রোত ঢাকামুখী পোশাক শ্রমিকদের ¯স্রোত - ajkerparibartan.com
ঢাকামুখী পোশাক শ্রমিকদের ¯স্রোত

3:35 pm , July 31, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সরকারী ঘোষনা এসেছে দুদিন আগেই। কিন্তু প্রতিষ্ঠান তথা কারখানা কর্তৃপক্ষ এক দিন পরই শ্রমিকদের ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে ১ আগস্ট কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়। এমন খবর পেয়েই আর ঘরে বসে থাকেনি বরিশাল তথা দক্ষিনাঞ্চলের পোশাক শ্রমিকরা। যে যেভাবে পেরেছেন বেড়িয়ে পড়েছেন রাস্তায়। উদ্দেশ্য একটাই পৌছাতে হবে কর্মস্থলে। এমন বাস্তবতায় গতকাল শনিবার নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে পোশাক শ্রমিকদের জনস্রোত সৃষ্টি হয়। পরিবহন বন্ধ থাকায় ট্রাক, আলফা সিএনজি, পিকআপে করে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। অনেকে আবার পায়ে হেটেই রওনা দিয়েছেন সামনের দিকে।
শ্রমিকদের এমন দূর্ভোগের সুযোগ নিয়েছেন, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের পরিবহন শ্রমিক নেতারা। অনেকটা জিম্মি করে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন ভাড়া আদায় করেছে তারা। ঘটেছে চাঁদাবাজীর ঘটনাও। শনিবার সকাল থেকেই নথুল্লাবাদে দক্ষিনাঞ্চলের বিভিণœ স্থান থেকে আসা পোশাক শ্রমিকদের ভিড় বাড়তে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাস টার্মিনাল এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষের চাপে স্বাস্থ্য বিধির কোন তোয়াক্কা তো ছিলোই না। এমনকি চলাচলের অনুমতি না থাকলেও ট্রাক,আলফা সিএনজিতে যাত্রী বহনে বাধা প্রদান করেনি কোন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
তবে যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন না থাকায় রাজধানী পর্যন্ত পথ কিভাবে তারা পৌঁছুবে, এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন তারা। এক পর্যায়ে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে চলাচলরত পণ্যবাহি ট্রাকের পথরোধও করেন তারা। খবর পেয়ে বিমানবন্দর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই পণ্যবাহী ট্রাকের চলাচল স্বাভাবিক করে। পোশাক শ্রমিকরা জানান, পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের ১ আগস্ট উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি আর লকডাউন উপেক্ষা করে তাদের রাজধানীমুখী হতে হচ্ছে।
বাচ্চু নামে এক পোশাক শ্রমিক জানান, বাসসহ কোনো গণপরিবহন না থাকায় দ্বিগুণ খরচে ভোলা থেকে বরিশালে এসেছেন। এখন এখানে এসে কোনো যানবাহন না পেয়ে দারুণ বিপাকে পড়েছেন।
ঢাকা বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুরের ইছলাদী এলাকার মো. রনি খান বলেন, গরু যেভাবে ট্রাকে বহন করে সেইভাবে মানুষ বহন করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নথুল্লাবদ বাস র্টামিনালে আসা হারুন নামে এক পোশাক শ্রমিক জানান, বাসসহ কোনো গণপরিবহন না থাকায় দ্বিগুণ খরচে ভোলা থেকে বরিশালে এসেছেন।
মিজানুর রহমান নামে এক শ্রমিক জানান, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলার অসংখ্য শ্রমিক রাজধানীর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ঈদুল আজহার সময় ৮ দিন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায়, পোশাক শ্রমিকরা ওই সময়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু পরে লকডাউনের কারণে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে তারা বিপাকে পরেছেন।
দুই শিশু সন্তান নিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থেকে নগরীতে এসেছেন মঞ্জু বেগম। ট্রলারে করে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিয়ে এসেছেন। এরপর রিকশায় এসেছেন নথুল্লাবাদ। সেখান থেকে উঠেছেন ভ্যানে। কারণ, কাল থেকে তার অফিস খোলা। যেভাবেই হোক আজ তিনি ঢাকা যাবেনই। কাল (আজ) গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। এখন যেভাবেই হোক আমাকে ঢাকায় যেতে হবে। দরকার হলে হেঁটেই ঢাকা যাব, বলেন মঞ্জু। হাবিব নামে আরেক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, ট্রলারে করে মেঘনা পাড়ি দিয়েছি। এখন মোটরসাইকেলে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবো।
পোশাক শ্রমিক আসিফুল ও রবিউল জানান, বাসসহ কোন গণপরিবহন না থাকায় দ্বিগুন খরচে বাকেরগঞ্জ থেকে বরিশালে এসেছেন। এখন এখানে এসে কোন যানবাহন না পেয়ে দারুণ বিপাকে পরেছেন। পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যানবাহন চলাচলের বিষয়টি সুরাহা না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা।
এদিকে নথুলাবাদসহ নিজেদের আওতাধীন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের ১ আগষ্ট কারখানায় উপস্থিত থাকার বার্তা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে দক্ষিণ অঞ্চল থেকে যে যেভাবে পারছে, ছুটছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে। কঠোর লকডাউনের কারণে যাত্রীবাহী বাস চলাচল না করায় ট্রাক মোটরসাইকেল, বিভিন্ন ধরণের থ্রী হুইলার ও পণ্যবাহি যানবাহনে নানা কৌশলে যাত্রীরা গন্তব্যের দিকে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেকে তো কোনো ধরণের যানবাহন না পেয়ে, পায়ে হেটেই সামনের দিকে এগিয়েও যাচ্ছেন।
সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম শামীম বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের গণপরিবহন সড়কে চলতে দিচ্ছি না। এরপরেও কেউ যদি যেতে চায়, তাহলে কীভাবে তাদের আটকাব ? নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে মাত্র চার জন ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে। এই সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? আমাদের দৃষ্টির বাইরে যে যেই পরিবহন পাচ্ছে, সেভাবেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। এসব কারণে আমরা কিছু থ্রি-হুইলার আটকালেও মানুষকে থামানো যাচ্ছে না। গার্মেন্টস খুলে দেওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT