লকডাউনে নগরী ফাঁকা লকডাউনে নগরী ফাঁকা - ajkerparibartan.com
লকডাউনে নগরী ফাঁকা

3:11 pm , June 28, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ভয়ানক আকারে বৃদ্ধিতে সরকার ঘোষিত সীমিত পরিসরে লকডাউনে গতকাল সোমবার নগরী অনেকটাই ফাঁকা লক্ষ্য করা গেছে। এর আগের লকডাউন এ রকম চিত্র ছিল না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারনা শেষে গতকাল সোমবারের সীমিত পরিসরের লকডাউনে নগরীর প্রায় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল প্রায় সকল ধরনের যান চলাচল। শুধুমাত্র কিছু রিক্সা ও চলাচল করেছে পণ্যবাহী যানবাহন। তবে অতি প্রয়োজনে অথবা জরুরি প্রয়োজনে নগরীর সড়কে পায়ে হেটে চলাচলের বাসিন্দাদের অভাব ছিল না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হলেও সড়কে এদের উপস্থিতি ছিল বেশ ভালই। পর্যাপ্ত যানবাহনের অভাবে কিছুটা ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এমন চিত্র দেখাগেছে। এর আগে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ‘সীমিত পরিসরে’ লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউন দিয়ে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই সময়ে সব গণপরিবহন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিস চলার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল দিয়ে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনা ভাইরাসজনিত রোগ (কোভিড-১৯) সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধি-নিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২৮ জুন সকাল ৬টা থেকে ১ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপের কথা। বিধিনিষেধে বলা হয়, সারাদেশে পণ্যবাহী যানবাহন ও রিকশা ছাড়া সব গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত টহলের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করবে। সব শপিংমল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (শুধুমাত্র অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধু প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজ নিজ অফিসের ব্যবস্থাপনায় তাদের আনা-নেওয়া করতে হবে। জনসাধারাণকে মাস্ক পরার জন্য আরও প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব সিনিয়র সচিব/সচিবেদের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। করোনার ঊর্ধ্বগতি রোধে এই তিনদিন সীমিত পরিসরে লকডাউন শেষে ১ জুলাই থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ বাস্তবায়ন করা হবে বলে আগেই জানায় সরকার। জাতীয় সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট পাস এবং আর্থিক বছর শেষে জুন ক্লোজিংয়ের জন্য সোমবার থেকে তিনদিন সীমিত পরিসরে লকডাউন চলছে। রোববার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বাাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, সামনে যে লকডাউন (১ জুলাই থেকে সাত দিন) সেখানে পুলিশ থাকবে, বিজিবি থাকবে, সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এবার থাকবে যাতে লকডাউনটা সুন্দরভাবে পালিত হয় এবং ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণটা রোধ হয় এবং মৃত্যুর সংখ্যা যাতে অনেক কমিয়ে আনতে পারি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী নামানোর বিষয়টি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গতকাল নগরীর সকল এলাকায় সীমিত পরিসরে লকডাউন পালন করতে দেখা গেছে বেশ কঠোরতার সাথেই। সকাল থেকে প্রশাসনের টহল ও জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত ছিল। কিছু দোকানপাট গোপনে খোলা হলেও তা আবার বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। এ সকল চিত্র নগরীর অলি গলির হলেও মুল শহরের সকল ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ব্যসায়ীদের সাথে আলাপে তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রোধে তারা সরকারের এই লকডাউন মানতে শতভাগ প্রস্তুত। কিছুটা ব্যবসায়ীক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবে তা সরকারের নির্দেশনা বা জীবনের ঝুকির থেকে কখনই বেশি নয়। অন্যদিকে পর্যাপ্ত যান চলাচল না থাকায় পায়ে হেটে প্রয়োজনের কাজ করতে দেখো গেছে নগরবাসীকে। পথচারী আইনজীবী বিউটি সুলতানা জানান, সীমিত পরিসরে লকডাউনে সড়কে কোন যানবাহন না থাকায় জরুরি প্রয়োজনে তাকে ভাটিখানা থেকে সদর রোড পায়ে হেটে আসতে হয়েছে। কিছু রিক্সা সড়কে চলাচল করেছে। তারা সীমিত পরিসরে লকডাউনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েকগুন বেশি ভাড়া আদায় করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। উল্লেখ্য চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বাড়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ ঘোষণা করে সরকার। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ এবং ট্রেন চলাচল ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ১৮ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। আর ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন অফিস বন্ধ থাকে। আগামী ৩০ জুন পযর্ন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ঘোষণা করা আছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT