আগৈলঝাড়ায় জমে উঠেছে চাই ও নৌকার হাট আগৈলঝাড়ায় জমে উঠেছে চাই ও নৌকার হাট - ajkerparibartan.com
আগৈলঝাড়ায় জমে উঠেছে চাই ও নৌকার হাট

1:00 am , June 21, 2021

 

শামীম আহমেদ ॥ বর্ষা মৌসুমে চলাচল ও পণ্য পরিবহনের জন্য বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলের মানুষের নির্ভরযোগ্য একমাত্র বাহন নৌকা। এ অঞ্চলের শত শত মানুষের মৎস্য শিকারের কাজেও অন্যতম ভূমিকা রাখে নৌকা। এ বর্ষা মৌসুমে নৌকায় জাল, চাই (মাছ ধরার ফাঁদ) অথবা বড়শি নিয়ে মৎস্য শিকারে ছুটে চলেন জেলেরা। তাই প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় চাই ও নৌকার কদর। আর এই মৌসুমে চাই ও নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ অঞ্চলের শত শত পরিবার। আগৈলঝাড়া উপজেলার বিলাঞ্চল হিসেবে পরিচিত বারপাইকা, দুশুমি, রামানন্দেরআঁক, বাটরা, বাহাদুরপুর, ত্রীমুখি, রামশীল, সাদুলপুর, পীরের বাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌকা তৈরি করা হয়। জৈষ্ঠ্য থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত আগৈলঝাড়ার সাহেবেরহাট, বাহাদুরপুর ও পাশ্ববর্তী কোটালীপাড়ার ঘাঘর, রামশীল হাটে বসে নৌকার হাট। এসব অঞ্চলের মানুষের বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। হাট-বাজার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে আসার জন্য তাদের নৌকার উপর নির্ভর করতে হয়। তাই বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই জমে উঠেছে নৌকার হাট। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে নৌকা বানানোর ধুম। আগৈলঝাড়া উপজেলার অসংখ্য পরিবার নৌকা তৈরির পেশায় নিয়োজিত। নৌকা তৈরির কারিগর রমেশ অধিকারী জানান, তারা গ্রাম অঞ্চল থেকে কাঠ কিনে এনে নৌকা তৈরি করে থাকেন। চাম্বল কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি ও ছোট আকারের পিনিশ নৌকা তৈরি করা হয়। আর রেইন্ট্রি কাঠ দিয়ে তৈরি হয় কম দামি নৌকা। নৌকার ক্রেতা প্রবীর মধু, সঞ্জয় বালা, শুকুমার, জীবন বালা জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য কম দামি নৌকা বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।
মাছ ধরার চাই তৈরির জন্য বিখ্যাত আগৈলঝাড়া উপজেলার মোহনকাঠী গ্রাম। এ গ্রামে কবে কখন কে চাই তৈরি করার কাজ শুরু করেছেন তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও প্রবীণরা জানিয়েছেন, প্রায় দু’শ বছর ধরেই এ গ্রামে চাই তৈরি ও বিক্রি চলছে। বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের চার’শ পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে চাই তৈরি করে। গ্রামের পুরুষেরা বর্ষা মৌসুমের ছয় মাস চাই তৈরি ও শুষ্ক মৌসুমে দিনমজুরের কাজ করেন। মোহনকাঠী গ্রামের তৈরি করা চাই বিক্রি হয় দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে। গ্রামটির নাম মোহনকাঠী হলেও চাই তৈরি করতে গিয়ে গ্রামের নাম হয়েছে ‘আগৈলঝাড়ার চাই পল্লী’। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে বংশ পরম্পরায় এ গ্রামের বাসিন্দারা চাই তৈরির পেশাকে ধরে রেখেছেন। চাই তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশ, বেত ও লতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অর্থাভাবে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন ও বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে টাকা এনে চাই বানাচ্ছেন। গ্রামের মাখন বৈরাগীর পুত্র দুলাল বৈরাগী বর্তমানে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। হরলাল বৈদ্যর পুত্র প্রশান্ত বৈদ্যও স্নাতক শ্রেণীতে পড়ছেন। তারা জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের সাথে চাই বুনতে তারা সহযোগীতা করে থাকেন। শুধু দুলাল ও প্রশান্তই নয় গ্রামের প্রত্যেকটি ঘরের ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনার পাশাপাশি চাই তৈরির কাজে পিতা-মাতাকে সাহায্য করে থাকে। বর্ষা মৌসুম এলেই পরিবারের সকলের ব্যস্ততা আরো বেড়ে যায়।
মোহনকাঠী গ্রামের হরলাল বৈদ্য (৬৬), নলিনী বৈরাগী (৭০) সহ অনেকেই জানান, দু’শ টাকার তলা বাঁশ, দু’শ টাকার কৈয়া লতা দিয়ে একেকজন শ্রমিক ৫ দিনে এককুড়ি (২০টি) চাই তৈরি করতে পারেন। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন আনার ফলে তাদের কাছে প্রতি কুড়ি চাই পাইকারি হিসেবে বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৬শ’ টাকায়। বাজারে যার দাম ২ হাজার থেকে ২৫’শ টাকা। ওই গ্রামের লক্ষন বৈরাগী জানান, তাদের গ্রামের তৈরি চাই স্থানীয় মাহিলাড়া, পয়সারহাট, সাহেবেরহাট, ধামুরাসহ বানারীপাড়া, স্বরূপকাঠী, ঘাঘর, শশীকর, নবগ্রাম, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, খুলনা, ফরিদপুর ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT