3:16 pm , June 6, 2021
হেলাল উদ্দিন ॥ এক বছর আগে আজকের এই দিনে নয়ন সিক্ত হয়ে অশ্রু ঝরেছিলো বরিশালের আপামর মানুষের। আজ সেই দিনে আবার অশ্রু সিক্ত হয়েছে বরিশালের মানুষ। হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় আর শোকাহত চিত্তে আজ স্মরণ করছে প্রয়াত জননী সাহান আরা বেগম কে। আজ মহিয়সী রতœাগর্ভা এই নারীর প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী।
যখন নারীদের রাজনীতি তো বটেই শিক্ষা দিক্ষা গ্রহনেও ছিলো সমাজ ব্যবস্থার ক্ষীন দৃষ্টিভঙ্গি। তখন সকল বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বিচরন করেছিলেন রাজনৈতিক নামক মানব সেবায়। সামাজিক সাংস্কৃতিক এমন কোন ক্ষেত্র নেই যে অধ্যায়ে তার সরব উপস্থিতি ও অবদান ছিলো না। এমন সব কর্মকান্ডের জন্যই তিনি হয়ে উঠেন মহিয়সী এক নারী। ২০২০ সালের ৭ জুন সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি দেন তিনি।
বর্নাঢ্য জীবনের অধিকারী বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সহধর্মিণী বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম বরিশাল নগরীর কাউনিয়া এলাকায় অভিজাত কাজী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী মোখলেসুর রহমান। ছাত্র জীবন থেকেই সাহান আরা বেগম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি বরিশাল মহিলা কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। একই ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের মাতা বেগম আরজু মনি সেরনিয়াবাত। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তিনি পঁচাত্তরের নির্মম ট্র্যাজেডির বেঁচে যাওয়া গুলিবিদ্ধ একজন প্রত্যক্ষ দর্শী। সেদিন ঘাতকের গুলিতে তাঁর চার বছরের শিশু পুত্র সুকান্ত বাবু, শ্বশুর আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ননদ বেবী সেরনিয়াবাত, দেবর আরিফ সেরনিয়াবাত, এবং ভাসুর শহিদ সেরনিয়াবাত নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন।
সাহান আরা বেগম একজন মহীয়সী নারী হিসেবে সমাজ ও রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন নিজ গুণাবলীতে। রাজনৈতিক জীবনে তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যেমন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন, তেমনি ছিলেন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। তিনি বরিশালের অন্যতম নাট্য সংগঠন শব্দাবলী গ্রুপ থিয়েটারের উপদেষ্টামন্ডলীর চেয়ারম্যান ছিলেন। যুক্ত ছিলেন প্রান্তিকের সাথেও।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম ৭ জুন ২০২০ইং (রবিবার) রাত সাড়ে ১১ টায় ঢাকা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্বামী, তিন পুত্র, এক কন্যা এবং নাতী-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার জ্যৈষ্ঠ পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বর্তমানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সকল দলমত নির্বিশেষে এই শ্রদ্ধাভাজন জননীকে স্বরন করছে বরিশালের মানুষ।