1:22 pm , May 28, 2021
অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রী নিয়ে চলছে লঞ্চ গুলো
সাঈদ পান্থ ॥ স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়ায় লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও বরিশালের অভ্যন্তরীণ ও বরিশাল-ঢাকা রুটে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে লঞ্চ। বিশেষ করে মাস্ক পরার ক্ষেত্রে যাত্রীদের মধ্যেই উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে। বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে প্রথম শ্রেণি ও কেবিনের ভাড়া বৃদ্ধি না পেলেও ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়া দিয়েই ডেকের যাত্রীদের টিকিট কেটে গন্তব্যে রওয়ানা হতে হয়েছে। তবে লঞ্চে উঠতে পেরে যাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি দেখা গেলেও বাড়তি ভাড়া নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে। ৪৬ দিন পর খুলে আবার ঘূর্নিঝড় ইয়াস এর কারণে ২৫ মে থেকে দুই দিন বন্ধ থাকার পর ২৭ মে আবার যাত্রা শুরু করে লঞ্চ। তাই যাত্রী চাপও ছিল প্রচন্ড। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে যাত্রীদের তীব্র ভীড় দেখা যায়। লঞ্চের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, অনেকেই ডেকে কাপড় বিছিয়ে শুয়ে পড়েছেন। কেউবা বসে আছেন। তবে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী যে ধরনের স্বাস্থ্য বিধি মানার কথা বলা হয়েছিল তা মানছেন না যাত্রীরা। দেখা যায়, অধিকাংশ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। স্বাস্থ্য বিধি মানার জন্য নেই কোন বাধ্যবাধকতা। তার মধ্যে ১২শ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার লঞ্চে ১২শ’র বেশি মানুষকে স্থান দেয়া হয়েছে। যদিও সরকারি নির্দেশনা ছিল ধারণ ক্ষমার অর্ধেক যাত্রী নিতে হবে। কিন্তু এই নির্দেশনারও বালাই নেই। কেন মাস্ক পড়েননি, জানতে চাইলে ঢাকাগামী আবু রায়হান বলেন, অনেক গরম। গরমে মাস্ক ভিজে গেছে তাই খুলে রেখেছি। শুকালে আবার পড়ব। অপর যাত্রী নুরুল ইসলাম বলেন, সকলের মাস্ক নিশ্চিত করেই লঞ্চে উঠা উচিত। কিন্তু তেমন কেউই সে নির্দেশনা মানছেন না। বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে কোনো লঞ্চেরই যাত্রী ধারণ ক্ষমতা দেড় হাজারের বেশি নয়। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচলের কথা থাকলেও সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি লঞ্চ সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন লঞ্চের যাত্রী ও স্টাফদের মাস্ক পরার ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করলেও সেটা বাস্তবায়নে অনেকটা অনীহা লক্ষ করা গেছে। মাস্ক পরলেও অনেকেরই মাস্ক সঠিক জায়গায় ছিল না। বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, যাত্রীদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করে মালিক-শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন মাস্ক পরিধানের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করছি। নদীবন্দরে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উৎসাহিত করতে কাজ করছি। তবে সরেজমিন নদীবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার থেকে যাত্রী ভিড় ক্রমশই বাড়ছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে যাত্রী ও স্টাফদের মধ্যে কাউকেই সিরিয়াস দেখা যায়নি। যাত্রীরা লঞ্চে ওঠার সময় মাস্ক পরে উঠলেও লঞ্চে বসার পরই অনেককে মাস্ক নামিয়ে ফেলতে দেখা গেছে। অনেককে আবার খুলে ফেলতে দেখা যায়। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি শেখ আবুল হাশেম বলেন, সকাল থেকেই বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, কালীগঞ্জ, লালমোহন, চরকলমি, বোরহানউদ্দিন, বাহেরচর রুটে লঞ্চ চলাচল করছে। জালাল হোসেন নামে ভোলাগামী এক যাত্রী বলেন, চেষ্টা করি মাস্ক পরতে। কিন্তু মাস্ক পরলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। সেজন্য লঞ্চে ওঠার সময় মাস্ক পরি। পরে খুলে রেখেছি। পাতারহাটগামী আরেক যাত্রী হারুন তালুকদার বলেন, জনগণের জন্যই এই লকডাউন দিতে হয়েছে। জনগণ যদি মাস্ক পরতেন, দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন তাহলে এসবের কিছুই লাগত না। ঢাকার লঞ্চ এমভি মানামী লঞ্চের মাস্টার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, নির্দেশনা পাওয়ার পরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করি। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আমাদের যাতায়াত করতে হবে। তবে আগে জনপ্রতি ডেকের ভাড়া নেওয়া হতো ২০০ টাকা। এখন ৪০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তবে কেবিনের ভাড়া আগের মতোই আছে।
সরকার ৬০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধি করে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়তে বলেছে, তাহলে দ্বিগুণ বাড়া নেওয়া হচ্ছে কেনÑ জানতে চাইলে লঞ্চ মাস্টার বলেন, আগে নির্ধারিত ভাড়ার কম নেওয়া হতো। এখন আগের নির্ধারিত ভাড়ার সঙ্গে ৬০ ভাগ যোগ করলে ভাড়া আসে ৪১২ টাকা, আমরা নিচ্ছি ৪০০ টাকা। বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার সহসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যাত্রী পরিবহণ করছি। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ডেকের যাত্রীদের ভাড়া হয় ৪১২ টাকা কিন্তু ৪শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর কেবিনের আগের ভাড়াই নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে মাস্ক পরিধান নিশ্চিতের পাশাপাশি ডেকের যাত্রীদের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন আশরাফুজ্জামান। বরিশালে লঞ্চঘাটে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই গরিবের ওপরই যত চাপ। সাধারণ ডেকে যায় গরিব লোকজন। সেখানকার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে, কেবিন বা প্রথম শ্রেণির ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘বড়লোকের’ ভাড়া বাড়েনি কেন? এ সময় অনেকেই তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলেন, ভাই গরিবের পক্ষে কেউ নেই।