নিরবেই কেটে গেল দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গণহত্যা দিবস নিরবেই কেটে গেল দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গণহত্যা দিবস - ajkerparibartan.com
নিরবেই কেটে গেল দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গণহত্যা দিবস

2:08 pm , May 16, 2021

শামীম আহমেদ ॥ নিরবেই কেটে গেল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের ১৫ মে বরিশালের উত্তর জনপদের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ও রাংতা গ্রামের কেতনার বিলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে জীবন দিতে হয়েছে নিরীহ দেড় সহ¯্রাধীক লোককে। শহীদরা গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার আটটি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। সেদিন রাজিহার গ্রামের ‘পাত্র’ বংশেরই কাশী নাথ পাত্র, বিনোদ পাত্র, বিনোদের স্ত্রী সোনেকা পাত্র, কন্যা গীতা পাত্র, কানন পাত্র, মঙ্গল পাত্র, মঙ্গলের মা হরিদাসী পাত্র, কন্যা অঞ্জলী পাত্র, দেবু পাত্রের স্ত্রী গীতা পাত্র, মোহন পাত্র, কন্যা ক্ষ্যান্তি পাত্র, কার্তিক পাত্রর স্ত্রী শ্যামলী পাত্র তার ১২ দিনের শিশুপুত্র অমৃত পাত্র, কন্যা মঞ্জু পাত্র, মতি পাত্র, লক্ষ্মী কান্তর স্ত্রী সুমালা পাত্র, নিবারনসহ একই বাড়ির ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। এরমধ্যে ১২ দিনের শিশু অমৃতকে বুটের তলায় পৃষ্ট করে ও নিবারনকে ব্যানেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে নরপশু পাক সেনারা। দেশ স্বাধীনের দীর্ঘদিন পরে হলেও স্বজন হারানো পরিবারসহ মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির মুখে স্বাধীনতার সুর্বন জয়ন্তীতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ গণহত্যারস্থানে শহীদদের স্মরণে সরকারি উদ্যোগে স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয়েছে। তবে আজও দেয়া হয়নি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গণহত্যা দিবসে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কোন কর্মসূচি পালন না করায় শহীদ পরিবারসহ স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের মানুষদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজিহার গ্রামের রাজেন্দ্রনাথ পাত্র জানান, ৭১’র সালের ১৫ মে স্থানীয় লোকজন ঢাল শুড়কি নিয়ে বাকাই গ্রামে পাক হানাদারদের চার সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ খবর ছড়িয়ে পরে গৌরনদী কলেজের পাক শিবিরে। তারা স্থানীয় আলবদর ও রাজাকারদের সহযোগিতায় গৌরনদী ক্যাম্প থেকে পশ্চিম দিকে চাঁদশীর বাজার হয়ে বাকাল গ্রামের দিকে ছুটে জনতার ওপর এলএমজির ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। পাক সেনাদের ভয়ে সেদিন চাঁদশী, রাংতা, রাজিহার, চেঙ্গুটিয়া, টরকী, কান্দিরপাড়সহ আটটি গ্রামের নিরীহ মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নেয় রাংতা গ্রামের কেতনার বিলের ধান ও পাট ক্ষেতে। সূত্রমতে, স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকিস্তানী সৈন্যরা কেতনার বিলে লুকিয়ে থাকা নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর প্রধান রাস্তা থেকে পাখির মতো গুলি করে অন্তত দেড় সহস্রাধীক নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এরপর রাজিহার গ্রামের হিন্দু পাড়ায় আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয় সকল বাড়ি ঘর। এরইমধ্যে চলে লুটপাট। আগুনের লেলিহান শিখায় গাছের একটি পাতাও সেদিন অবশিষ্ট ছিলোনা। রাজেন্দ্রনাথ পাত্র আরও জানান, ওইসময় প্রাণ বাঁচাতে পালানো মানুষের ভীড়ে বিভৎস লাশ সৎকার বা কবর দেয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারপরেও মৃত্যুপুরী থেকে পাত্র বাড়ির বেঁচে যাওয়া হরলাল পাত্র ও অমূল্য পাত্রর নেতৃত্বে সুশীল পাত্র, কেষ্ট পাত্র, রাধা কান্ত পাত্র ও তিনি (রাজেন্দ্রনাথ) সহ কয়েকজনে পরেরদিন হারানো স্বজনসহ প্রায় দেড় শতাধিক লোকের লাশ এনে পাত্র বাড়ির পার্শে¦র কয়েকটিস্থানে বড় বড় ছয়টি গর্ত করে একত্রে মাটি চাঁপা দিয়ে রাখেন। বাকি লাশগুলো কেতনার বিলে শেয়াল, কুকুরের খাবার হয়ে যায়। জগদীশ পাত্র জানান, জীবন বাঁচাতে তার বাবা কাশী নাথ পাত্র সেদিন পালাতে চেয়েও পারেননি। পাঁচটি গুলি লেগে তার বাবা মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর পরপরই স্থানীয় রাজাকার ও তাদের দোসররা নারীদের লাশের শরীর থেকে মুল্যবান স্বর্ণালংকার পর্যন্ত খুলে নিয়েছে। পাঁচজন স্বজন হারানো চাঁদশী গ্রামের প্রেমানন্দ ঘরামী, ধীরেন পাত্র, জগদীশ পাত্রসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের স্বজনরা ওইদিন পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হলেও আজও তাদের পরিবারকে শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি পাবার জন্য জোর দাবি করেছেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT