দক্ষিনাঞ্চলে ফসল কাটার ধুম ‍॥ ১৪ লাখ টন বোরো চাল এবং প্রায় দুই লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্য দক্ষিনাঞ্চলে ফসল কাটার ধুম ‍॥ ১৪ লাখ টন বোরো চাল এবং প্রায় দুই লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্য - ajkerparibartan.com
দক্ষিনাঞ্চলে ফসল কাটার ধুম ‍॥ ১৪ লাখ টন বোরো চাল এবং প্রায় দুই লাখ টন গম উৎপাদনের লক্ষ্য

3:40 pm , May 4, 2021

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেশের দক্ষিনাঞ্চলের মাঠে মাঠে এখন ফসল কাটার ধুম। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১টি জেলায় আবাদকৃত প্রায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের ৪০ ভাগ ইতোমধ্যে কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এবার দক্ষিনাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ১৪ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষ্য কৃষি মন্ত্রনালয়ের। কৃষি যোদ্ধাগনও সে লক্ষ্যে কাজ করছেন। করোনা মহামারির সাথে ডায়রিয়া এবং নজিরবিহীন খড়তাপকে উপেক্ষা করেই মাঠে মাঠে কৃষকরা বোরো ধান কাটায় ব্যস্ত। যেভাবেই হোক ঝড়-বৃষ্টি শুরু হবার আগে ফসল ঘরে তুলতে চাচ্ছেন কৃষকরা। কারন অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় দক্ষিনাঞ্চলে বোরো ধানের আবাদ চলে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। যখন উত্তরবঙ্গের অনেক এলাকায় এ ধানের কর্তন শুরু হয়ে যায়। তাই ধান পাকা থেকে শুরু করে কর্তনও হয় বিলম্বিত।
পাশাপাশি আসন্ন ঈদ উল ফিতরের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছেন তারা। কারণ ঈদের ছুটির সময় অন্তত এক সপ্তাহ কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাবেনা। ফলে ১২ মে’র মধ্যে অন্তত ৮০ ভাগ জমির বোরো ধান ঘরে তুলতে না পারলে ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়তে পারে পাকা ধান। যদিও এবার অনাবৃষ্টির কারণে দেশের অনেক এলাকার মত দক্ষিনাঞ্চলেও সেচ ব্যয় কিছুটা বেড়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কালবৈশাখী প্রকোপ কম থাকায় বোরো ধানের ক্ষতির পরিমান কম।
এবার দেশে ২ কোটি ৫ লাখ ৩১ হাজার ৪৭০ টন চাল পাবার লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রনালয় ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান অবাদের যে লক্ষ্য স্থির করেছিল, তা অর্জন করেছেন কৃষি যোদ্ধাগন। সোমবার পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় ৪৪ ভাগ জমির বোরো ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি স¤¯্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। এ পর্যন্ত উৎপাদনও প্রতি হেক্টরে প্রায় ৪ টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.২৯ টন। ডিএই’র মতে এখনো অর্ধেকের বেশী জমির ফসল কর্তন বাকি রয়েছে। সম্পূর্ণ বোরো কর্তন সম্পন্ন হলে লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব বলে আশাবাদী দায়িত্বশীল মহল।
এদিকে এবার সমাপ্ত প্রায় রবি মৌসুমে দেশে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার হেক্টরে আবাদকৃত গমের পুরোটাই কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। যদিও লক্ষ্য ছিল ৩.৫৬ লাখ হেক্টর। তবে গত কয়েক বছর ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ রোগের সংক্রমনে গম অবাদে কৃষকদের মধ্যে কিছুটা নিরুৎসাহী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। ফলে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ ফসল অবাদে অগ্রগতি থেমে আছে। তবে এরপরেও দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় এবার ৫৮ হাজার ৪৬৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫৬ হাজার ৪৩৯ হেক্টরে গম অবাদ করেন কৃষি যোদ্ধাগন। দক্ষিণাঞ্চলে এবার গমের উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার টনের মত। হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৩.১৮৫ টন। তবে এবার কৃষকরা গমের খুব ভাল দাম পায়নি। মনপ্রতি ১ হাজার থেকে হাজার ৫০ টাকায় গম বিক্রি করেছেন কৃষকরা। গত বছর যা ছিল ১১শ থেকে ১২ শ টাকা মন।
তবে গম ঘরে তুলেই দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে বোরো ধান কাটার ব্যস্ততা চলছে। এবার রবি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৬ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১২০% এবং গতছরের চেয়ে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর বেশী। ইতোমধ্যে ৭১ হাজার ৬১২ হেক্টরের বোরো ধান গোলায় তুলেছেন কৃষকরা। যা মোট আবাদকৃত জমির প্রায় ৪৪%। ফলনও যথেষ্ঠ আশাব্যঞ্জক, গড়ে ৩.৫৩ টন চাল প্রতি হেক্টরে। যা সন্তোষজনক বলে ডিএই জানিয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড ৫.০১ টন, উফশী ৩.৭৮ টন এবং স্থানীয় জাত প্রতি হেক্টরে ১.৮০ টন চাল।
অপরদিকে বৃহত্বর ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলায়ও চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৭০ হাজার ৯শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৮০৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৩২% জমির ধান কর্তন হয়েছে। গড় ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ৩.৪১ টন বলে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। যারমধ্যে হাইব্রীড-এ ফলন বরিশালের চেয়ে কিছুটা কম ৪.৫০ টন চাল। তবে উফশীর ফলন ৩.৮৯ টন ও স্থানীয় সনাতন জাতের বোরো ধানের ফলন হয়েছে ১.৮৬ টন।
ফলে সমাপ্তপ্রায় রবি মৌসুমে এবার দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ১২ লাখ টনের মত বেরো চাল কৃষকের ঘরে উঠবে বলে আশাবাদী কৃষি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল। তবে দক্ষিনাঞ্চলে কৃষি সেচব্যবস্থা আরো সম্প্রসারনের যথেষ্ঠ সুযোগ ও সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। শুধু মাত্র বরিশাল বিভাগেই সেচযোগ্য জমির পরিমান প্রায় ৫ লাখ হেক্টর হলেও চলতি মৌসমে মাত্র ১লাখ ৬৪ হাজারের মত বোরো এবং ৭ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে ।
তবে বৃহত্বর ফরিদপুরে সেচযোগ্য জমির প্রায় ৮০ ভাগই বোরো ও গম আবাদে বৃবহৃত হচ্ছে। কৃষিবীদদের মতে, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় সেচযোগ্য জমির অন্তত ৮০ ভাগ ধান ও গম আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হলে এঅঞ্চলে দানাদার খাদ ফসলের উৎপাদন অরো অন্তত ৫ লাখ টন বৃদ্ধি করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে কৃষিপণ্যে মূল্য যেন উৎপাদন ব্যায়ের সাথে সংগতিপূর্ণ হয়, সেবিষয়েও গুরুত্বারোপের তাগিদ দিয়েছেন কৃষি অর্থনীতিবীদগন।
বরিশাল বিভাগের ছয়জেলা বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা। ফরিদপুরের ৫টি জেলায়ও উদ্বৃত্বের পরিমান প্রায় আড়াই লাখ টন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT