করোনায় মৃত্যু, দাফন ও সৎকার করোনায় মৃত্যু, দাফন ও সৎকার - ajkerparibartan.com
করোনায় মৃত্যু, দাফন ও সৎকার

3:50 pm , April 25, 2021

 

“জন্মিলে মরিতে হইবে,
অমর কে কোথা রবে।
এই চিরন্তন সত্যকে অস্বীকার করার কোন উপায় নাই, তবুও কবি প্রান কবিতায় বলেছেন,
মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভূবনে;
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই। ” কবির আশা দুরাশা। মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে। অনেকে নিজের ইচ্ছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে। যদিও রাষ্ট্র তার বৈধতা দেয় না। আমাদের ছোট্ট কিন্তু ঘনবসতিপূর্ন এই দেশটিতে করোনা অতিমারি সংক্রমনের কথা প্রকাশ পায় ২০ সালের মার্চ মাসে। দেশে আজ অবধি মৃত্যু সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্বে এ সংখ্যা ৩১ লক্ষ ছুঁই ছুঁই। বরিশাল জেলায় মৃত্যু সংখ্যা ১০৪ জন, পুরো বিভাগে ২৪৬ জন। করোনার হিংস্র পাগলা ঘোড়া কততম ঢেউ দিয়ে, কবে কোথায় যেয়ে থামবে তা শুধু একজনই জানেন। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ বিধায় কাউকেই তা জানানো হয় না। একালের কোন কবি নিষ্ঠুর করোনাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন কিনা জানিনা, তবে একবিংশ শতাব্দীর প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ কারো না কারো লেখায় ফুটে উঠবে। শত বছর পরে অনাগত নাম না জানা অতিমারিকালে আমাদের দুর্দশা, অসহায়ত্ব তুলনা করে কেউ হয়ত আমাদের একটু করুণা করলেও করতে পারেন। মানুষ যদি প্রকৃতির উপর অত্যাচার চালিয়েই যেতে থাকে তবে আগামি দিনে তার প্রতিশোধ হবে আরও ভয়ংকর। আজকের পৃথিবীর খুব সামান্য লোক যারা শতায়ু পার হবেন তারা নতুন বিভীষিকার সম্মুখীন হবেন।
রবীন্দ্রনাথের ‘ব্রজবুলি’ ভাষায় রচিত কবিতার একটি চরন, “মরনেরে তুঁহুঁ মম শ্যাম সমান।” আমি এর মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারিনি ভাষা না জানার কারনে.তবে কেউই করোনায় মৃত্যুতে সৌন্দর্য্য খুঁজে পায় না,পায় বিভৎস রুপ। এক একটি জীবনের করুণ গল্প। পৃথিবীতে এত অক্সিজেন অথচ কারো দায়িত্বহীনতায় একফোঁটা অক্সিজেনের অভাবে কি নিদারুণ কষ্টে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে অনন্তলোকে পাড়ি দিতে হচ্ছে। পরম মমতায় কেউ একটু হাত ধরছেনা। প্রিয়জনদের বেদনার্ত মুখ,দুফোটা চোখের অশ্রু ঝরে পড়ার দৃশ্য দেখা ভাগ্যে কুলোচ্ছে না। অন্তিম যাত্রাকালে সাগর পরিমান তৃষ্ণা মিটানোর জন্য একফোঁটা জল দিতে কেউ এগিয়ে আসবেনা। কানের কাছে তওবা পড়ে, কলেমা উচ্চারণ করে অনন্য যাত্রায় পাপ লাঘবে সাহায্য করারও কোন আপনজন উপস্থিত থাকবে না।এমন নির্মম, নিষ্ঠুর নিয়তি করোনাকে কেউ কি মেনে নিতে পারে? বিশ্ব এক কঠিন দুঃসময় পার করছে। ভবিষ্যৎ কেউ জানেনা। মৃত্যুর পরে কোথায় দাফন, সৎকার হবে তার ঠিকানা কেউ জানবেনা, আপনজনেরা তার আগেই পালিয়ে যাবে। নিজ বাড়িতে সাড়ে তিনহাত জায়গা পাওয়া যাবে না। এলাকাবাসী, ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব সবাই আপত্তি জানাবে, এখানে দাফন করা চলবে না।অনেকে জানালা বন্ধ করে রাখবে। অচিন গায়ের দু-চার জন মহামানব স্বেচ্ছাসেবী ধর্মীয় নিয়মাবলী মেনে দাফন, সৎকার করে চলে যাবে, এ কেমন দুর্ভাগা! কিন্তু এটাই নির্মম সত্য। গতকাল একজন নির্বচিত জনপ্রতিনিধি সামাজিক মাধ্যমে আক্ষেপ তুলে ধরেছেন,গ্রামে জানাযা বা দাফন করার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না, বরঞ্চ অসহযোগীতা করছে।কত নির্মম! করোনা সামাজিক কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। হয়ত এটা সার্বিক চিত্র নয়।
ঢাকায় কয়েকটি সংগঠন এই অতিমানবিক কাজে সহযোগীতা করে আসছে। অতিরিক্ত দাফনকাজ করতে করতে তাঁরা এখন ক্লান্ত, শ্রান্ত। কিন্তু গ্রাম পর্যায় ধরনের প্রতিষ্ঠানের অভাবে মানুষ ভুগছে। সরকারি নিয়ন্ত্রনে
প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায় পরিষদবর্গ, উপজেলা স্বাস্থ্য ও কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদানের মাধ্যমে একটি সেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা সম্ভব। যারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরন করে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এব্যাপারে ভূমিকা পালন করতে পারে। এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেব কে জানাযা পড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে সমস্যার সমাধান সহজ। যদিও আগের চেয়ে ভীতি কিছুটা কমেছে, তাছাড়া গোর খোদকদের করোনায় আক্রান্তের কোন খবর জানা যায় নাই।
বরিশালসহ দেশের সকল স্থানে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে এধরনের ব্যবস্থাপনা বা প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে কিনা অবহিত নই। ভবিষ্যৎ কেউ জানেনা। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের বর্তমান অবস্থা আমরা মাথায় রাখতে পারি। না হয়ে থাকলে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া মঙ্গলজনক হতে পারে। বাস্তবে কাজে না লাগলে সেটাও কল্যাণকর। একটি সরকারি নির্দেশনা নাজুক মানবিক বিষয় থেকে উত্তরণ সহজ করে তুলতে পারে।
লেখক : কাজী মিজানুর রহমান ফিরোজ, পরিবেশকর্মী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT