দধির পাতিল তৈরি করে চলে জীবিকা নির্বাহ দধির পাতিল তৈরি করে চলে জীবিকা নির্বাহ - ajkerparibartan.com
দধির পাতিল তৈরি করে চলে জীবিকা নির্বাহ

3:23 pm , April 18, 2021

 

শরীফ আল-আমীন, তজুমদ্দিন ॥ অতীতে গ্রাম-গঞ্জে মাটির তৈরি পণ্যসামগ্রীর কদর ছিলো অনেক বেশি। এসব পণ্য শোভা পেত প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে। গ্রীষ্মকালে মাটির কলসির এক গ্লাস পানি যেন দূর করে দিত সব ক্লান্তিকে। গৃহস্থালির নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি হাড়ি, পাতিল, কলসি, থালা-বাটি, ফুলের টবসহ বিভিন্ন ধরলের খেলনা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো এখানকার অসংখ্যা পরিবার। প্রযুক্তির ব্যবহার ও আধুনিকতার ছোয়ায় বর্তমানে আর এসব পণ্য কিনছেনা মানুষ। কালের বিবর্তণে দিন দিন অধিকাংশ পণ্য হারিয়ে গেলেও একদিকে জীবিকা নির্বাহ অন্যদিকে পূর্ব পুরুষদের এ পেশাটিকে ধরে রাখতে দধীর পাতিল তৈরি করেই প্রতিনিয়ত চলছে তাদের সংগ্রাম। সুনিপুন হাতে মাটি দিয়ে দধীর পাতিল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করা যেন তাদের একমাত্র ভরসা। তাই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতারও দাবি জানিয়েছেন এ শিল্পের সাথে জড়িতরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এ উপজেলার চাঁদপুর ও শম্ভুপুর ইউনিয়নের প্রায় ১০টি পরিবার এখনো এ পেশায় জড়িত রয়েছে। পুরুষদের পাশাপাশি বসে নেই নারীরাও। পুরুষেরা মটারের সাহায্যে সুনিপুন হাতে দধীর পাতিল তৈরি করে নারীরা উক্ত পাতিলের তলা সংযুক্ত করে। কথা হয় শম্ভুপুর ইউনিয়নের মৃৎশিল্প তৈরি করার কাজে নিয়োজিত দুই ভাই বাদল পাল ও দিলিপ পালের সাথে। তারা বলেন একসময় তারা গৃহস্থালির কাজে নিত্যব্যবহার দ্রব্যাদি তৈরি করলে
এখন শুধু দধির পাতিল তৈরি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। এসব পণ্য তৈরি করতে এটেল মাটি সংগ্রহ করতে হয়। ট্রাক ভাড়াসহ প্রতি ট্রাক মাটির ক্রয় করতে খরচ পড়ে ৩ হাজার টাকা। মাটি প্রস্তুত, বিদ্যুৎ, লাকড়ি, শ্রমিকদের খরচ বাদ
দিয়ে প্রতিটি টালীতে ৫ টাকা করে লাভ হয়। এর মধ্যে রয়েছে নিজের পারিশ্রমিক। তবে সরকারি কিংবা বেসরকারি সহয়োগিতা পেলে এই শিল্পের আরো প্রসার করা যেত। শম্ভুপু ৪ নং ওয়ার্ডের শিখা পাল পাল বলেন, আমি এবং আমার স্বামী নিউটর পাল দুইজনেই দধীর পাতিল তৈরি করি। দৈনিক প্রায় ৩শ পাতিল তৈরি করা যায়। এরপর পাইকারদের কাছে প্রতিটি টালী (পাতিল) বিক্রি করি ১০ টাকা। স্বামী স্ত্রীর দুই জনের তৈরি করা টালী বিক্রি করে প্রতি মাসে ১৫-১৬ হাজার টাকার আয় করি। যা দিয়ে চলে আমাদের সংসার। এই শিল্পের আরেক কারিগর রাদেশ্যাম পাল বলেন, এসব জিসিপত্র তৈরির প্রধান উপকরণ মাটি। এঁটেল মাটি সংগ্রহ করার পর তার কাঁদা করে একাটি গোলাকৃতির
চাকের মধ্যে মটারের সাহয্যে পণ্য বানানো হয়। এরপর রোদে শুকানো হলেই কড়কুটো ও লাকড়ি জ্বালিয়ে ভাটায় তা পোড়ানো হয়। উপজেলা নিবাহী অফিসার পল্লব কুমার হাজরা বলেন, সরকার ঐতিহ্যবাহী এ ধরনের শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের মাধ্যমে
আর্থিক ও কারিগরি সহয়তার মাধ্যমে কার্যকরী পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছে। এছাড়া মৃৎশিল্প হলো আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প। আধুনিক বিকল্প ব্যবস্থা যতই আসুক না কেন বাঙ্গালীর এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের কার্যকরী সহযোগিতা করতে হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT