2:32 pm , March 15, 2021
গত বছরে চেয়ে ১৫ হাজার হেক্টর বেশী
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ চলতি রবি মৌসুমে দেশের দক্ষিনাঞ্চলে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদের পরে উৎপাদনও অনেকটা আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে রয়েছে। কয়েক দফার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিগত ‘খরিপ-২’ মৌসুমে আমনের উৎপাদন বিপর্যয়ের পরে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় ৭ লাখ ২ হাজার ১৭৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, গম ও ভুট্টা’র মত দানাদার খাদ্য ফসল সহ গোল আলু, সয়াবিন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তেল ফসল এবং মসলা ও ডাল ফসলের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর বেশী। তবে গত বছর দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের রবি ফসল আবাদের বিপরীতে চলতি রবি মৌসুমে ৭ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩২ হেক্টরে লক্ষ্য স্থির করা হলেও ৭ লাখ ২ হাজার ৭৯১ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে।
চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ১ লাখ ৩৯ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৬ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১২০% এবং গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪১ হাজার হেক্টর বেশী। গমের আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ১০৮.১% জমিতে। গোল আলু লক্ষ্যমাত্রার ১০৪% এবং সয়াবিনের আবাদ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ১০০.৬% জমিতে। সরিষার আবাদও হয়েছে প্রায় শতভাগ।
এছাড়া চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৪৭ হাজার চারশ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। যার ফলে প্রায় ১০ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। চলতি মৌসুমে দেশে প্রায় ৫.৮৩ লাখ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে ১ কোটি ৩৭ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদিত হচ্ছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর (ডিএই) জানিয়েছে।
এছাড়া চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ২৪ হাজার হেক্টরে সয়াবিন, ১৮ হাজার হেক্টরে চিনাবাদাম, ১৩ হাজার হেক্টরে সরিষা ছাড়াও প্রথমবারের মত সাড়ে ৫ হাজার হেক্টরে সূর্যমুখীর আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১২৭%। সয়াবিন সহ দক্ষিনাঞ্চলে এবার প্রায় ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে তেল জাতীয় ফসলের আবাদ হয়েছে।
পাশাপাশি পেয়াঁজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ সহ মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ হয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার হেক্টরে। সারাদেশে উৎপাদিত মরিচের অন্তত ২০ ভাগ উৎপাদিত হয় দক্ষিণাঞ্চলে। তবে এবার প্রায় ৩০ হাজার হেক্টরে মরিচের আবাদ হলেও আরো অন্তত ১০ হাজার হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে এ ফসলের আবাদ সম্ভব বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগন জানিয়েছেন।
এর বাইরে ডাল জাতীয় ফসল আবাদ হয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে শুধু মুগ ডালের আবাদই হয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার হেক্টরে। যা সারা দেশে মোট আবাদের প্রায় ৬০%। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে এবার প্রায় ৯২ হাজার ৩১১ হেক্টর জমিতে খেসারী ডালের আবাদ হয়েছে। যা দেশে মোট আবাদের প্রায় ৩৫%।
তবে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে গত বছর ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ ছাড়াও ভাদ্রের অমাবশ্যার ভরা কাটালে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ার আর উজানের ঢলের সাথে প্রবল বর্ষনে আমন সহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির ফলে এ অঞ্চলে কৃষিÑঅর্থনীতিতিতে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে। ফলে অনেক কৃষকই সর্বশান্ত হয়ে যায়। প্রকৃতি নির্ভর দক্ষিনাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়ন এখনো অনেকটা পিছিয়ে। বিগত খরিপ-২ মৌসুমে প্রাকৃতিক দূর্যোগে দক্ষিণাঞ্চলে আমনের উৎপাদন ক্ষতি ছিল প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টন।
তবে এরপরেও দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাগন থেমে থাকেননি। সারা দেশের সাথে এ অঞ্চলের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থা উন্নয়নে তাদের নিরলস পরিশ্রম এখনো দেশের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশের কৃষিপণ্য এখন বিশে^র ১০৪টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।