3:16 pm , March 8, 2021

শিকদার মাহাবুব ॥ দক্ষিনাঞ্চলের বৃহৎ চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবামেক) হাসপাতালে লাশ বহনের জন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস সুবিধা নেই। যে কারণে প্রতিদিন স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকভাবে মৃত স্বজনদের লাশ পরিবহন নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সরকারী কোন পরিবহন না থাকায় লাশ নিতে স্বজনদের ব্যক্তিমালিকানাধীন এ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহনের উপর নির্ভর করতে হয়। যার কারনে শেবাচিম হাসপাতালের সামনে গড়ে উঠেছে একটি এ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট। লাশ কিংবা রোগী আনা-নেয়ার জন্য স্বজনদের জিম্মি করে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট এমন কান্ড করলেও প্রতিকারে কোন দপ্তর এগিয়ে আসছে না। হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, দক্ষিনাঞ্চলের ৬ জেলা-উপজেলার ছাড়াও মাদারীপুর ও শরিয়তপুর থেকে রোগী আসে শেবাচিম হাসপাতালে। এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। এছাড়াও হাসপাতালের বহি.বিভাগে প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার রোগী চিকিৎসা নেয়। এসব রোগীদের মধ্যে প্রতিদিন স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিকভাবে অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন মারা যায়। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২ থেকে ৩০০ রোগী ছাড়পত্র নেয়। এসব রোগীদের সিংহভাগ নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোগী ও লাশ বহনে ব্যক্তিমালিকানাধীন মাইক্রোবাস ও এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে রোগী ও লাশ পরিবহন করে। সিন্ডিকেটের দাবি করা অর্থের কম নিয়ে পরিবহন করলে হামলার শিকার হতে হয় সংশ্লিষ্ট যানবাহন চালককে। এছাড়া অন্য জেলা-উপজেলা থেকে এ্যাম্বুলেন্স এসে লাশ কিংবা রোগী পরিবহন করতে চাইলেও সিন্ডিকেট সদস্যরা বাঁধা দেয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রবিন ও শাহাদাত সিন্ডিকেট পরিচালনা করেন।
সাম্প্রতি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গৌরনদীর এক ব্যক্তি মারা যান। স্বজনরা নিজস্ব গাড়িতে মরদেহটি নিয়ে রওনা দেয়। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সিন্ডিকেটটির সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। তারা ওই মরদেহ আটকে চাঁদা দাবি করে। এ সময় সিন্ডিকেট সদস্যরা জানায়, হাসপাতাল থেকে কোনো মরদেহ নিয়ে যেতে হলে তাদের মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে মরদেহ বহনকারী মাইক্রোবাসের জন্য স্থানীয় সমিতিকে ২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। পরে বাধ্য হয়ে মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস মালিকদের সিন্ডিকেটটির সদস্যদের অতিরিক্ত টাকা ভাড়া দিয়ে গ্রামের বাড়ি নেয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারী স্ট্রোক করে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয় আলতাফ তালুকদার। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকা হাসপাতালে প্রেরন করেন। এসময় হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সিন্ডিকেটটির কাছে রোগীর স্বজনরা জিম্মি হয় বলে জানা গেছে। রোগীর ছেলে রুম্মান তালুকদার পরিবর্তনকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সিন্ডিকেটটির কাছে জিম্মি অবস্থায় ৮ হাজার টাকা ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ঢাকা যেতে হয়েছে। সিন্ডিকেটটির দাবী করা অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ায় ও কালক্ষেপন করার কারনে তার বাবা ঢাকা যাওয়ার পথে মারা যায় বলে অভিযোগ করেছে ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল শেবামেক হাসপাতালে লাশবহনকারী সরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই। এই সুযোগে লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে মৃতব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। এমনকি বাহির থেকে যদি কেউ লাশ বহনকারী গাড়ি নিয়ে আসে সেক্ষেত্রে তারা মৃতব্যক্তির স্বজনদের থেকে চাঁদা আদায় করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে আমরা হাসপাতালের কতিপয় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে মাসোয়ারা দিয়ে রোগী বা লাশ বহন করছি।’
এ বিষয়ে শেবামেক হাসপাতালের ডাঃ এস.এম মনিরুজ্জামান(প্রশাসন) বলেন, ‘সরকার আমাদেরকে লাশবাহী সরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স দেয়নি। লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও আমাদের নেই। হাসপাতাল চত্ত্বরেই এসব অ্যাম্বুলেন্স অবস্থান করে তারপরও ব্যবস্থা নেননি কনে- এমন প্রশ্নের জবাবে ডাঃ এস.এম মনিরুজ্জামান বলেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা আমাদের কথা শোনে না।