আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তিন দিনের জন্য স্থগিত ॥ বাস মালিক শ্রমিকদের আন্দোলন শিথিল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তিন দিনের জন্য স্থগিত ॥ বাস মালিক শ্রমিকদের আন্দোলন শিথিল - ajkerparibartan.com
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তিন দিনের জন্য স্থগিত ॥ বাস মালিক শ্রমিকদের আন্দোলন শিথিল

4:03 pm , February 20, 2021

 

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসুচী তিন দিনে জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ববি শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় করা মামলার চিহিৃত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে শুক্রবার বিকেল থেকে ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী ও ভোলা মহা সড়কের উপর অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় অবরোধ কর্মসুচী স্থগিত ঘোষনা করেছে ববি শিক্ষার্থীরা।
এদিকে মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তার করা দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবীতে নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ১৭ রুটের বাসসহ সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সড়কের উপর টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভ শুরু করে বাস মালিক ও শ্রমিকরা। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রোববার আন্দোলন শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কাউছার হোসেন শিপন।
গত মঙ্গল দুপুর সাড়ে ১২টায় ববি’র অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থী তৌফিকুল সজল ও ফারজানা আক্তার যশোরে নিজেদের বাড়ি যেতে বিআরটিসি বাস কাউন্টারে যায়। এ সময় কাউন্টারের কর্মচারী রফিকের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সজলকে ছুরিকাঘাত করে রফিক। এছাড়া ফারজানাকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ সংবাদ ববির শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে হাজির হয়। দুপুর ২টা থেকে সড়কের উপর টায়ারে অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় তারা বাস কাউন্টারে ভাংচুর করে। তবে এর আগে কাউন্টার ছেড়ে পালিয়েছে শ্রমিক রফিক। পরে পুলিশ রফিককে আটক করে। পুলিশ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসের দুই ঘন্টা পর সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় শিক্ষার্থীরা। পুলিশের উদ্যোগে দ্বন্ধ সংঘাতের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু এ পরিস্থিতি রাত পার করতে পারেনি। গভীর রাতে নগরীর রুপাতলী হাউজিং এলাকার ববি শিক্ষার্থীদের মেসে বাস শ্রমিকদের স্বশস্ত্র হামলায় পরিস্থিতি আবারো বৈরি হয়। বাস শ্রমিকদের হামলায় ববির ১৩ শিক্ষার্থী আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর ১১ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ঘটনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা করে। এছাড়াও তিনদফা দাবি জানিয়ে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত তাদের দাবী না মানায় বিকেল ৫টায় বিক্ষোভ মিছিল শেষে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে বরিশাল কুয়াকাটা মহাসড়কে অবরোধ শুরু করে তারা। এতে ভোলা – পটুয়াখালী – বরগুনা ও কুয়াকাটাগামী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাদের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় পুলিশ রহস্যজনক কারণে হামলার নেতৃত্ব দেয়া বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপনকে গ্রেপ্তার করেনি। প্রশাসনের কাছে আহতরা হামলাকারীদের নামের তালিকা দিয়েছে। তাদের মামলায় আসামী করা হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষনা দিয়ে শনিবার সকাল থেকে তারা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ব্রীজ থেকে শুরু ভোলা সড়কের প্রবেশ পথ ও পটুয়াখালী সড়কের প্রবেশ পথে বিভিন্ন ধরনের লাঠি-সোঠা নিয়ে বিক্ষোভ করে। তারা সড়কে আগুন জালিয়ে মোটর সাইকেল সহ সকল প্রকার যান-বান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এমনকি বাকেরগঞ্জ থানা থেকে আসামী নিয়ে আসা পুলিশের পিকআপ আটকে দেয়। পরে পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধে ছেড়ে দেয়। এদিকে ববির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিকেল সাড়ে ৫টার পর থেকে তাদের কর্মসুচী স্থগিত করা হয়েছে। ববি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো.আরিফ হোসেন জানান, শিক্ষার্থীরা শর্ত সাপেক্ষে আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসুচী স্থগিত রেখেছে। চলমান সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা বসবে ববি কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক। এদিকে, শুক্রবার রাতে রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে এমকে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনি (২৫) ও সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের হেলপার মো. ফিরোজকে (২৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উভয়ইনগরীর রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হাউজিং এলাকার বাসিন্দা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলার কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছেন ওসি। দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবীতে শনিবার সকাল থেকে নগরীর রুপাতলী বাস স্টান্ড থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ১৭ রুটের সকল যাত্রীবাহি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে মালিক শ্রমিকরা। এছাড়াও সড়কে টায়ারে আগুন জালিয়ে বিক্ষোভ করেছে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ফায়ার সাভিসের কয়েকটি ইউনিট আগুন নিভানোর জন্য রুপাতলী এলাকায় যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিক্ষোভরত শ্রমিকদের বাধার মুখে আগুন না নিভিয়ে তারা ফিরে এসেছে। বাস-মালিক সমিতি সাধারন সম্পাদক কাউসার হোসেন শিপন বলেন, তাদের দুই শ্রমিককে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া সহ তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কোন যাত্রীবাহী যান-বাহন চলাচল করবে না। তবে তিনি আরো জানিয়েছেন, মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে রোববার তাদের আন্দোলন শিথিল থাকবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT