সন্ত্রাসীদের হামলায় বিরাণভূমি ভোলার চর সন্ত্রাসীদের হামলায় বিরাণভূমি ভোলার চর - ajkerparibartan.com
সন্ত্রাসীদের হামলায় বিরাণভূমি ভোলার চর

2:59 pm , January 17, 2021

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ভোলার চরে সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলায় ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব অসংখ্য পরিবার। সন্ত্রাসীদের এমন নারকীয় তান্ডবলীলা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। কোটি টাকার অধিক মূল্যের গবাদিপশু লুটপাটের পর সন্ত্রাসীরা শত শত একর জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে। এতে ক্ষান্ত হয়নি। অসংখ্য অসহায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে উৎখাত করার চূড়ান্ত নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে। এরই ফলশ্রুতিতে চরবাসীর শেষ আশ্রয়স্থল মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতবাড়ি ভাংচুর করে লুটপাট চালিয়ে বিরাণ ভূমিতে পরিণত করেছে। গত বছরের ২৩ নভেম্বর ভোলা সদর থানার ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর থেকেই এরকম নারকীয় তান্ডবলীলা হয়েছে। তখন থেকেই সদর থানার ওসির বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের পাহাড় জমা হতে থাকে। ঘটনার দিন ওসি ভোলার চরে অবস্থানকালীন সময়ে সন্ত্রাসীরা ওসির সামনে চরবাসীর ঘর-বাড়ি লুটপাট ও চরের নিরীহ কৃষক আবুল কালাম বেপারীকে অপহরণ করে নিয়ে মারধর, চরবাসীকে কোনো প্রকার সাহায্য না করে দ্রুত চলে যায়। ওসির ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর পরই সন্ত্রাসীরা
হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে বেশ কয়েকজনকে জখম করে। হামলায় যারা আহত হয়েছেন তাদের মামলা না নিয়ে পুলিশ সন্ত্রাসীদের পক্ষ হয়ে মিথ্যা অপহরণ মামলা নেন ওসি। চরবাসীর পক্ষ থেকে কোনো প্রকার মামলা না নেওয়া, এবং সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতার না করার মত অভিযোগের পাহাড় ভারী হতে থাকে। চরবাসী থানা পুলিশের নিকট কোন প্রকার সহযোগিতা পায়নি। উল্টো আলতু বাহিনীর প্রধান আলতু ডাকাতের সাথে থানা পুলিশের অনেক সখ্যতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। এমনকি মামলার প্রধান আসামী আলতু ডাকাতসহ একাধিক আসামীরা থানায় অবাধ বিচরণ করছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. ফরিদ এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, থেকে ২০ নং আসামি জামিনে আছেন কিন্তু এর স্বপক্ষে তিনি কোনো প্রকার প্রমাণ দেখাতে পারেননি। আন্তঃজেলা সন্ত্রাসী চক্রের সম্মিলিত নৃশংস হামলায় শিকার হয়ে নিগৃহীত ভোলার চরের অসহায় পরিবার গুলোর খোঁজ নিয়ে জানা যায় সাম্প্রতিক তারা কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বেড়ীবাঁধের উপরে টংঘর পেতে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আলতু একজন দুর্ধর্ষ জলদস্যু ও ভূমিদস্যু। একাধিক ডাকাত দলের সে নেতৃত্বে দেয়।মেঘনা নদীতে মাছ আরোহণকারী জেলে ও ভোলা, লক্ষীপুর,রায়পুর, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ইত্যাদি এলাকার চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, লুটপাট করাই তাদের নেশা ও পেশা। আলতু ডাকাতের নির্যাতনের কবল থেকে মুক্তি পেতে চরবাসী দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন পর্যায়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রতিকার চেয়েও কোন লাভ হয়নি। এমনকি ২০১৫ সালে অসংখ্য জেলে ও চরবাসী মিলিত হয়ে আলতু ডাকাত কে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ভোলা জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ের সম্মুখে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন যা স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। দস্যুচক্রের বিরুদ্ধে যথাযথ কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি । ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি ভুক্তভোগী অসহায় চরবাসী ও নিরীহ জেলেদের। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে মেঘনার বুকে ভাসমান এসব চরাঞ্চল গুলোকে। আর এসব জনপদে কেউ আলতু বাহিনীর ফালতু বয়ানের বিরুদ্ধে গেলেই তার উপর নেমে আসে অত্যাচারের স্টীম রোলার। নিজস্ব টর্চার সেলে অসংখ্য নিরীহ জেলে ও সাধারণ কৃষকদেরকে আটক করে নির্যাতনের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে অনেক। এক সময়ের আলতু মাঝি এখন ডাকাত সম্রাট । মেঘনার নিরীহ জেলেদের নিকট এক আতংকিত নাম।বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক। তার নিকট থেকে নিয়মিত উৎকোচ গ্রহণকারী শহরের কর্তাবাবুদের কেউ কেউ তাকে মাতুব্বর সাহেব বলেও ডাকেন। এসব সন্ত্রাসীদের মাস্টার মাইন্ড হিসেবে তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ ও তাদের নিকট থেকে নিয়মিত উৎকোচ গ্রহণ করে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা ও প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করার কাজটি খুবই চতুরতার সাথে করে থাকেন রাজাপুর ইউপির ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ওহাব আলী চৌকিদার। এমনকি তার পুত্র সাদ্দাম সাম্প্রতিক আলতু বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও অবলা নারীদের সম্ভ্রম লুণ্ঠনসহ নানাবিধ অপকর্মের খলনায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। খান এগ্রো ফার্ম লিমিটেডের স্বত্বাধীকারী মাহমুদুল হক রাসেল খান বলেন, ২০২০ সালের ১৭ জুলাই ভোলার আলতু বাহিনী এবং লক্ষ্মীপুরের হারিস ও শাহজালাল বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ভোলার চরে আমাদের গরুর খামার, মাছের আড়ৎ ও মুদি দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে আমার ভাই শাহিন খান, মিন্টু খান ও আমাদের কর্মচারী করিম কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে নগদ টাকা মালামাল ও ১৫ টি গরু লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন মামলা রুজু না করায় বাধ্য হয়ে আমার ভাই শাহিন খান বাদী হয়ে ভোলার বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ওসি ভোলাকে এফআইআর গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। একই সাথে এমন লোমহর্ষক চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় মামলা রুজু না করায় ওসি ভোলা কে সতর্ক করেন বিজ্ঞ আদালত। কিন্তু থানা পুলিশ দস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই মূলত দস্যুরা আরো বেপরোয়া হয়ে চরে বসবাসকারী রাসেল খানের আত্মীয় স্বজন ও নিরীহ চর বাসীর উপরে ধারাবাহিক হামলা ও লুটপাট করে বলে তিনি দাবি করেন। চরবাসীর অভিযোগ করে বলেন, ভোলা থানার ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন আলতু ডাকাত ও ওহাব আলী চৌকিদার দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে তারা ডাকাতি মামলার (আলতু,ওহাব) আসামি থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে গ্রেফতার না করে উল্টো তাদের সাথে একই স্পীডবোটে ভোলার চরে আসে।
রাসেল খান আরো বলেন, ২৩ নভেম্বর আমি ঢাকাতে ছিলাম। ঐদিন ঢাকা থেকে ওসি ও এসপি সাহেবের সাথে একাধিক বার কথা বলেছি। আমার অপর দুই ভাই মোঃ শাহিন খান ও মোঃ আমান উল্লাহ যথাক্রমে খুলনা ও সিলেটে ছিল। ঐদিন শুধু আমার ভাই মিন্টু খান আমাদের চরের বাড়ীতে ছিলেন। সন্ত্রাসীরা আমার ভাই মিন্টু খান ও আমার মা,বোন,এবং আমাদের খামারের তত্ত্বাবধায়ক আঃ কাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তাদের কে সচেতন অবস্থায় প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতাল পরবর্তীতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ওসি সাহেব ও সন্ত্রাসীরা যোগসাশসে আমাকে প্রধান আসামি করে আমাদের চার ভাইয়ের নামে মিথ্যা অপহরণ মামলা রুজু করে। আমরা তিন ভাই যে ঐদিন ভোলার চরে ছিলাম না তা সিসি টিভি ফুটেজ ও যাবতীয় প্রমাণাদিসহ আদালতে পেশ করা হবে। সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা চরবাসীদের মাথা গোঁজার ঠাঁই বসত ঘরগুলো লুটপাটের পরে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে উচ্ছেদ করে দিয়েছে। যেখানে মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল অথচ এর সবকিছু আজ বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT