২১ জেলার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পের অগ্রগতি নেই ২১ জেলার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পের অগ্রগতি নেই - ajkerparibartan.com
২১ জেলার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পের অগ্রগতি নেই

3:16 pm , December 13, 2020

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌছুলেও এ সেতুর সুবিধা দক্ষিন ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের কাছে পৌছতে সংযোগ সড়কগুলোর দ্রুত উন্নয়নের কোন বিকল্প। এমনকি রাজধানী ঢাকা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি সার্ভিস লেন সহ ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত পৌছুলেও সেখান থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মহাসড়কগুলো চার বা ছয় লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি এখনো প্রায় শুণ্য। অথচ পদ্মা সেতু সহ ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ভাঙ্গা জংশন থেকে বরিশাল বিভাগের ৬টি, খুলনা বিভাগের ১০টি এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলার গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা কাগুজে গন্ডি পের হতে পারেনি এখনো। দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক ব্যয়বহুল সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ৫৫ কিলোমিটার ভাংগা- মাওয়া Ñঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে গত ফেব্রুয়ারী মাসে উদ্বোধন হলেও তার সুবিধাওপদ্মা সেতুর সাথে সংযুক্ত এ অঞ্চলের ২১টি জেলায় কবে পৌছুবে তা বলতে পারছেন না কেউ। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পৌছুলেও সেখান থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিনে বরিশাল, ৯৩ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর এবং ১৩৪ কিলোমিটার পশ্চিমে বেনাপোল স্থল বন্দর ছাড়াও ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌছার সড়ক-মহাসড়কের কোনটিই এখনো মানসম্মত নয়। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ। ভাঙ্গা থেকে ১২৭ কিলোমিটার দক্ষিনÑপশ্চিমে খুলনা ও ৬৭ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিনে গোপালগঞ্জ মহাসড়কটিও ৩০ ফুট প্রস্থ। ২০০৫ সালে এ মহাসড়কটি নির্মিত হয়। এমনকি ভাঙ্গাÑফরিদপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কটিও মাত্র ১৮Ñ২৪ ফুট প্রস্থ। যশোর ও বেনাপোলকে সংযুক্তকারী ভাটিয়াপাড়া থেকে নড়াইল হয়ে যশোরের মহাসড়কটি এখনো মাত্র ১৮ ফুট প্রস্থ। বরিশালের লেবুখালী থেকে পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা মহাসড়কটিরও একই অবস্থা।
এসব মহসড়ক উন্নয়নে একাধিক প্রকল্প গ্রহন করা হলেও কোনটিই এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফরিদপুরÑবরিশালÑপায়রা বন্দরÑকুয়াকাটা মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নয়নের লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় ইতোমধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন হলেও ভুমি অধিগ্রহন সম্পন্ন হয়নি গত তিন বছরেও। যা গত জুনে সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও আগামী জুনেও তা শেষ হবে কিনা সন্দেহ ওয়াকিবাহল মহেল। প্রস্তাবিত ঐ ৪ লেন মহাসড়কেটি বরিশাল মহানগরীকে বাদ দিয়ে বাইপাস নির্মানের সিদ্ধান্ত হলেও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে ভাঙ্গাÑবরিশাল রেলপথের এলাইনমেন্টের উপর পড়ায়। এমনকি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এ প্রকল্পটির কোন দাতা না মেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১২৪ কিলোমিটার মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু পুরো প্রকল্পটিই এখনো অনেকটাই অন্ধকারে।
ভাঙ্গা থেকে ভাটিয়াপাড়া হয়ে যশোরÑবেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পটিও এখনো পরিকল্পনায় আবদ্ধ। তবে সড়ক অধিদপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট’এর আওতায় বেনাপোল-যশোরÑভাটিয়াপাড়াÑভাংগা অংশের মহাসড়কটি উন্নয়নে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষ হয়েছে। বৈদেশিক অনুদান বা ঋন নিশ্চিত হলেই সমীক্ষা ও পথ নকসা অনুযায়ী ঐ মহাসড়কটিও ৬ লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ মহাসড়ক উন্নয়নে ভারতীয় ঋন পাবার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে দায়িত্বশীল মহলটি। কিন্তু কবে নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। তবে ঐ মহাসড়কের গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের মধ্যবর্তী মধুমতি নদীর উপর কালনা’য় জাপানী অর্থায়নে প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ৬ লেন সেতুর নির্মান কাজ এগিয়ে চলছে।
অপরদিকে ঢাকাÑখুলনা মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-খুলনা অংশের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার লক্ষেও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সহ নকশা প্রনয়নের সরকারী সিদ্ধান্ত হলেও এ প্রকল্পেও কোন দাতা মেলেনি। খুব একটা অগ্রগতিও নেই। অথচ এ মহাসড়কটির ওপরই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা সমুদ্র বন্দর ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সাথে রাজধানী সহ প্রায় সারা দেশেরই সড়ক যোগাযোগ নির্ভরশীল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক অধিদপ্তরের একাধীক দায়িত্বশীল সূত্র, ফরিদপুরÑ বরিশালÑপায়রাÑকুয়াকাটা ছাড়াও নড়াইলÑযশোরÑবেনাপোল এবং গোপালগঞ্জ হয়ে মোংলা ও খুলনা পর্যন্ত মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। অন্যথায় পদ্মা সেতু সহ ঢাকাÑমাওয়াÑভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানের সুফল দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষের ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। এমনকি এ লক্ষ্যে জরুরী পদক্ষেপর গ্রহন করলেও পুরো বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার গুরুত্বপূর্ণ এসব জাতীয় মহাসড়কসমুহ উন্নয়নে কমপক্ষে ৭-৮ বছর লেগে যেতে পারে। তবে এ লক্ষ্যে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন সহ ঢাকাÑমাওয়াÑভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মত এসব জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়নের কাজও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্নের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহল মহল। কিন্তু সব কিছুর আগে এসব প্রকল্পের ডিপিপি প্রনয়নের পাশাপাশি তা অনুমোদন ও অর্থের সংস্থানে ক্রাস প্রোগ্রাম গ্রহনেরও তাগিদ দিয়েছেন মহলটি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT