2:53 pm , December 13, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ হু হু করে বাড়ছে শীত, একই সাথে বাড়ছে গরম কাপড়ের চাহিদা। বিগত এক সপ্তাহে তাপমাত্রার হ্রাসের সাথে ঘন কুয়াশায় জমে উঠেছে নগরীর সব ধরনের শীত বস্ত্রের বাজার। শ্রেনীভেদে এ সকল বাজারে ক্রেতাদের ভীরও বেড়েছে লক্ষনীয় হারে। একদিকে যেমন নগরীর স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের পোষাকের দোকানে ক্রেতা জমছে, তেমনি ফুটপাত সহ নগরীর পুরাতন শীত বস্ত্র বিক্রির জন্য পরিচিত মার্কেটগুলোতেও নেই তিল ধরার ঠাই। করোনার সংক্রমন ভুলে গিয়ে স্বাস্থ বিধির তোয়াক্কা না করে ক্রেতা বিক্রেতাদের বিকিকিনি চলছে হরদম। স্বাস্থ্য বিধির বালাই না থাকলেও করোনার কারনে এ বছর সব যায়গায় পোষাকের দাম হাকা হচ্ছে কয়েকগুন বলে জানিয়েছে ক্রেতারা। পুরাতন শীত বস্ত্র বিক্রেতাদের দাবী করোনার কারনে চট্রগ্রাম, খুলনা, মংলা পোর্টে মালামালের স্বল্পতা রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই দাম এবার একটু বেশি রাখতে হচ্ছে। কারন কিনতেও হয়েছে তাদের অধিক দামেই। অন্যদিকে এবার পুরাতন শীত বস্ত্রের তুলনামূলক হারে ব্র্যান্ডের পোষাকের দোকানগুলোতে মান অনুযায়ী দামে বেশ সাশ্রই পন্য বিক্রি হচ্ছে। তবে তা কেনার ক্রেতাশ্রেনী স্বল্প। তাই দামের প্রভার পড়ছে পুরাতন পোষাক বিক্রির জন্য সুপরিচিত দুই মার্কেট এবং ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানে । এর পরেও ক্রেতার স্বল্পতা নেই, তাই সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলছে বেচাকেনা। সূত্র মতে, গত এক মাস থেকেই ধিরে ধিরে বেড়েছে শীত। শুরুতে এবারের শীতের বাজার ধরার জন্য নগরীতে স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ইজি তাদের আউলেট প্রসারিত করেছে। একই সাথে যুক্ত হয়েছে ভার্গোর মত জনপ্রিয় আরও একটি ব্র্যান্ড। এছাড়াও রয়েছে প্লাস পয়েন্ট, রিচম্যান, পিটার ইংল্যান্ড সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড। মিশ্র ব্র্যান্ডের পোষাক বিক্রি করা বিটু নামের প্রতিষ্ঠানটিও রয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের কাতারে। এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে শীতের শুরু থেকেই শীত বন্ত্রের জমজমাট বেচাকেনা চলছে। আরও রয়েছে নগরীর গীর্জা মহল্লা থেকে শুরু করে কাটপট্রি, চক বাজারের শীত বস্ত্র বিক্রির বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এ সকল স্থানে স্বাস্থ্য বিধি মেনেই সেবা দেয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। তবে ব্র্যান্ড ও জাকজমকের এ সকল দোকানে ক্রেতা শ্রেনী সীমিত। অন্যদিকে দোকান ধুয়ে মুছে কেউ কেউ গত বছরের অবিক্রিত পুরাতন পোষাকের গাইড ভেঙ্গেই এ বছর বিক্রি শুরু করেছে নগরীর পূরাতন পোষাকের সবচেয়ে বড় দুই মার্কেট মহসীন ও সিটি মার্কেটের বিক্রেতারা। এ বিষয়ে আলাপে বহুমূখী সিটি মার্কেটের পুরাতন পোষাক বিক্রেতা এনায়েত শেখ জানিয়েছেন, এক মাস আগ থেকেই ক্রেতাদের আগমন শুরু হওয়ায় গত বছরের অবিক্রিত পোষাকের গাইড ভেঙ্গে বিক্রয় শুরু করেছে এ মৌসুমে। এর পর খুলনা এবং চট্রগ্রাম থেকে চড়া দামে কিনে এনছেন জ্যাকেট, উল, লেদার এর পুরাতন পোষাকের গাইড। করোনার কারনে এ বছর বিদেশ থেকে কোন মাল আমদানি হয়নি জানান এনায়েত। তাই তাদের এক রকমের প্রতিযোগিতা করে চড়া দাম দিয়ে এ সকল গাইড কিনে আনতে হয়েছে। গত বছর জ্যাকেট এর যে গাইড ১৫ হাজার টাকায় কিনেছেন। আবার তা কিনতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকায়। এমন ভাবেই সব ধরনের পোষাকে গাইড প্রতি দাম দিতে হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি। এর পরেও অনেকেই মাল আনতে পারেনি বলে জানান তিনি। এ থেকেই ব্যবসা করতে হবে তাই ক্রেতাদের কাছে এবার দাম অনিচ্ছা সত্বেও বেশি রাখতে হচ্ছে। তবে দাম বেশি হলেও গত এক সপ্তাহে শীত এবং কুয়াশা উভয় বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতার ভীর রয়েছে প্রচুর বলে জানান তিনি। এজন্য এবছর ব্যবসা ভালো হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং মানানো কোন ভাবেই পুরাতন পোষাকের বাজারে সম্ভব হচ্ছে না বলেন এই দোকানী। তাই করোনা সংক্রমনের ঝুকি নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে তাদের। প্রায় এমন তথ্য জানিয়েছেন হাজী মোহাম্মদ মহসীন মার্কেট এর দোকানী আবু বক্কর সিদ্দিক। অন্যদিকে এই দুই মার্কেটের বাইরে নগরীর কালেকটরেট পুকুরের পাড়ে জমে উঠেছে বিশাল শীত বস্ত্রের বাজার। নগর ভবনের আশপাশের এই ফুটপাতের অস্থায়ী বাজারে সকল শ্রেনী বিশেষ করে নিম্ম আয়ের ক্রেতাদের জমজমাট বাজার জমেছে। নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ সকল শ্রেনীর ক্রেতাদের ভীর করে। স্বাস্থ্য বিধির কোন বালাই না থাকলেও নতুন অথবা পুরাতন শীতবস্ত্র কিছুটা সাশ্রয়ে কিনতে পেরে ক্রেতারা বেশ খুশি। ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে এই ফুটপাতের বাজারে যে কোন বয়সি ক্রেতার জন্য মিলে যাবে নতুন অথবা পুরোনো পছন্দের একটি শীতবস্ত্র। বাজার ঘুরে নারী ক্রেতা নাজনীন আক্তার এর সাথে আলাপে তিনি বলেন, প্রতি বছরই এই সময়ে কিছু কেনা কাটা করে থাকেন তিনি তার পরিবারের সকলের জন্য। এবার দাম কিছুটা বেশি তবে পোষাকের কোন কমতি নেই। করোনার সংক্রমনের এই সময়ে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে কেনাকাটার বিষয়টি ভুল মেনে নিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন যদি আরও একটু কঠোর হয় তবে সবই চলবে তবে অবশ্যই তা স্বাস্থ্যবিধি মেনে।