স্থানীয়দের বাঁধার মুখে উন্নয়নের নামে গাছ কাটা বন্ধ স্থানীয়দের বাঁধার মুখে উন্নয়নের নামে গাছ কাটা বন্ধ - ajkerparibartan.com
স্থানীয়দের বাঁধার মুখে উন্নয়নের নামে গাছ কাটা বন্ধ

3:15 pm , November 14, 2020

সাঈদ পান্থ ॥ উজিরপুরে উন্নয়নের নামে শত শত গাছ কেটে সাবার করে দেয়া হয়েছে। উপজেলার সাতলা বাগদা বেরীবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে আওতায় এই গাছ কেটে ফেলেছেন ঠিকাদার স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস সরদার। উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছে। এদিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাঁধার মুখে শনিবার কাজ বন্ধরাখা হয়। স্থানীয়দের দাবী ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও মেশিন আনা নেয়ার জন্য গাছ কেটে পরিস্কার করা হয়েছে। একদিনে আড়াইশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবী ৫০ ফিট এলাকার গাছ কাটা হয়েছে। তবে তা সরকারি জমি থেকেই বেশি। ব্যক্তিগত জমি থেকে খুব অল্প পরিমানের গাছ কাটা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেছেন, শুক্রবার কাজ শুরু করার পর প্রথম দিনই আড়াইশ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি এক নারী (নাম জানা যায়নি) উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণতি বিশ্বাসের কাছে লিখিত অভিযোগ জানালে প্রশাসনের টনক নড়ে। শনিবার ঠিকাদার প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে দেন। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। স্থানীয় সুত্রগুলো জানান, প্রায় ১০ কিলোমিটার বেরীবাঁধ নির্মাণ কাজ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার শুক্রবার শুরু করেন। প্রথমদিনই বেকু মেশিন চালনার জন্য পশ্চিম সাতলা এলাকায় সড়কের পাশে বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে ফেলা হয়। স্থানীয়রা জানান, বনজ ও ফলজ উভয় প্রকার গাছ কাটা হয়েছে। বেরীবাঁধ নির্মান কাজ চালানোর জন্য আরও বিপুল সংখ্যক গাছ কাটা হবে এমন আশংকায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা গাছ কাটা বন্ধের জন্য উদ্যেগ নিতে উপজেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানান। পাশাপাশি বন বিভাগকেও জানানো হয়।
দক্ষিণ সাতলা গ্রামের বাসিন্দা জালাল বালি জানান, ‘জনগণের ক্ষতি করে এমন উন্নয়ন এলাকার মানুষ চায় না। উন্নয়ন হবে এই এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য, সেখানে এলাকার মানুষের ক্ষতি সাধন করে উন্নয়নের দরকার নাই। আমরা চাই এই হাজার হাজার গাছ রক্ষা করে যেন উন্নয়ন কাজটি করা হয়।’ নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরো বেশ কয়েকজন স্থানীয় জানান, উন্নয়ন কাজটির মূল ঠিকাদার সিকান্দার। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে কাজটি করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। যার কারণে প্রকাশে অনেকেই মুখ খুলতে চাচ্ছে না। তারা বলেন, ভেকু মেশিন বাধ দিয়ে হেড লোড (মাথা) করে মাটি কেটে ফেললে এই গাছগুলো কাটতে হতো না। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গাছ কেটে পরিবেশ বিপর্যয়ে ফেলছে ঠিকাদার। সাতলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খাইরুল বাসার লিটন বলেন, সেখানে বেরীবাঁধ নির্মান কাজ শুরুর দিনই বেশ কিছু গাছ কাটার অভিযোগ তিনিও শুনেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার সেকান্দার আলী কাছে জানতে শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি বলেন, ইউএনও’র বার্তা পেয়ে তিনি এখন ঘটনাস্থলে আছেন। তিনি দাবী করেন, কিছু আগাছা গাছ কাটা হয়েছে। এসময় তিনি তার পাশে থাকা ইউএনও’র কাছে অভিযোগকারী নারীর হাতে ফোন তুলে দেন। ওই নারী বলেন, তার কিছু আগাছা গাছ কেটেছে। তিনি না বুঝে ইউএনও’র কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। ঠিকাদার সেকান্দার আলী বলেন, কাজটি তার নামে হলেও সাব ঠিকাদার হিসাবে সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ইদ্রিস সরদারসহ আরও কয়েকজন করছেন। তবে ইদ্রিস সরদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কোন কাজ করছি না, তথ্যে ভুল রয়েছে। উপজেলা বন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়ে শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি দাবী করেন, বন বিভাগের কোন গাছ কাটা যায়নি। বেকু মেশিন দিয়ে মাটি লেবেল করায় গাছ কাটার কোন চিহৃ দেখতে পাননি বলে তিনি দাবী করেন। এ বন কর্মকর্তা বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে উন্নয়ন কাজের জন্য গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে। ইউএনও প্রণতি বিশ্বাস বলেন, সাতলায় বেরীবাঁধ নির্মানের জন্য কিছু গাছ কেটে ফেলেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষনিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোড (পাউবো) ও বন বিভাগকে বলেছেন। মাপঝোপ করে পাউবোর জমির মধ্যে থাকা গাছ ছাড়া অন্য কারো গাছ না কাটার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর বরিশালের সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম বলেন, এই কাজটি পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ। এটা কেউ করতে পারে না। গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। সেটা নেয়া হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত হতে হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে বলেছেন একটি গাছও কাটা যাবে না। যদি কাটার প্রয়োজন পড়ে তবে ৫টি গাছ লাগাত হবে। সেখানে কিভাবে উন্নয়নের নামে শত শত গাছ কেটে সাবার করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সফি উদ্দিন জানান, ‘আমি এই মুহুর্তে মন্ত্রীর সাথে রয়েছি। বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোজঁ নিয়ে দেখছি।’

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT