রাজাপুরে আমন ধানে পোকার আক্রমণ রাজাপুরে আমন ধানে পোকার আক্রমণ - ajkerparibartan.com
রাজাপুরে আমন ধানে পোকার আক্রমণ

2:57 pm , October 22, 2020

রহিম রেজা, রাজাপুর ॥ ঝালকাঠির রাজাপুরে মৌসূমের শুরুতেই কয়েক দফা বন্যা, অতিবৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট, রোপণকৃত আমনের চারা পঁেচ যাওয়াসহ নানা সংকটের মধ্যে এরার আমন ধানে খোলপচা ও পাতামোড়ানো রোগ এবং পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফসল রক্ষায় কীটনাশক দিয়েও তেমন উপকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছে কৃষকেরা। সেই সাথে রয়েছে ইদুরের উপদ্রবও। সবমিলিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়নের ঘিগড়া গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী তালুকদার জানান, তার নয় কাঠা জমির আমন ধানে পাতামোড়া ও খোলপচা রোগ দেখা দিয়েছে। তিনি মরা ধানের ছোপা ও মোড়ানো পাতার ভেতরে পোকার অসংখ্য সাদা ডিম বের করে দেখান। ওই ডিম থেকে ছোট ছোট লম্বাকৃতির পোকা হয়ে ধানের পাতা মরে যায়। দোকানদারের পরামর্শে কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করেছেন, তাতেও তেমন কাজ হচ্ছে না বলে তিনি জানান। কাঠিপাড়া গ্রামের কৃষক চান মিয়া জানান, তিনি দেড় বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন। কয়েকদিন ধরে তার ক্ষেতে খোলপচা ও পাতামোড়ানো রোগ দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক স্প্রে করায় এখন কিছুটা পানোজ (চেহারার পরিবর্তন) ফিরছে। একই গ্রামের পরিমল মন্ডল জানান, ৩বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। প্রায় মাসখানেক পূর্বে সার দিয়েছি। বীজ এখন ঘনসবুজ আকৃতির হয়ে ওঠা শুরু করছে। কয়েকদিনের মধ্যেই থোর (ধানের ছড়ার প্রাথমিক অংকুর) আসবে। এখন পাতা মোড়ানো ও খোল পচা রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিসের লোকজন আমাদের কাছে না আসায় উপজেলায় গিয়ে পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। কৃষক দেলোয়ার মুন্সি জানান, বীজ যখন ভালো অবস্থায় আসছে তখন পোক লাগছে। ওষুধ দিয়েছি তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না। এখন পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। ওষুধপত্র যা দিছি তা কোন কাজে আসছে না। কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমার জমিতেও পোকার আক্রমণ হয়েছিলো। পাতা মুড়িয়ে মধ্যে ডিম পেরে বংশ বিস্তার করে পাতা শুকিয়ে যেতে শুরু করে। পরে ওষুধ দিছি, এখন পোকার আক্রমণ কমছে, বীজের চেহারাও ফিরছে। জেলার বিভিন্ন গ্রামের কিছু কিছু আমন ক্ষেতে খোলপচা ও পাতামোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। এদিকে আমন ক্ষেতে পোকা আক্রমণের পাশাপাশি ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। ইঁদুরের হাত থেকে ফসল বাঁচাতে ক্ষেতজুরে ছেঁড়া কাপড়, কাগজ, শুকনা কলাপাতা টানিয়ে রাখছেন কৃষকেরা। চাষি আব্দুল মালেক জানান, তিনি ২০ কাঠা জমিতে আমন আবাদ করেছেন। পোকায় ধানের ক্ষতির পাশাপাশি কয়েকদিন ধরে ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। ধানের গোছার মধ্য হতে দু’তিনটি করে চটা কেটে ফেলে চলে যায় ইঁদুরের দল। কৃষক আব্দুল আউয়াল জানান, ওই এলাকার কৃষক জাকারিয়ার চার কাঠা জমিতে পোকা ও ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিলে নষ্ট ধান নিয়ে স্থানীয় ডিলারের দোকানে যান। কিন্তু ডিলারের পরামর্শে ক্ষেতে ওষুধ দিয়ে কোনো ফল পাননি। তার নিজের ১২ কাঠা জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। একই কথা বলেন, চাষি জবান মিয়া, আসাদুল, শাহজাহান, হাছিব, আব্দুল মোতালেব। ঝালকাঠি জেলা কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফজলুল হক জানান, এ বছর জেলায় ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো। মৌসূমের শুরুতেই কয়েক দফা বন্যা, অতিবৃষ্টিতে বীজতলা নষ্ট, রোপণকৃত আমনের চারা পচে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিলো। চাহিদার চেয়েও এক হাজার হেক্টরে অতিরিক্ত বীজতলা এবং ১২০টি বেডে ভাসমান বীজতলা করায় বীজের সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। এখন শুনতেছি পোকার আক্রমণ হয়েছে। খোজ নিয়ে জেনেছি, কোনো কোনো এলাকায় খোলপচা ও পাতামোড়ানো রোগ স্বল্পাকারে দেখা দিয়েছে, তবে এসব প্রতিরোধে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT