2:39 pm , October 14, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নিষেধাজ্ঞার ঠিক শুরুর প্রহরে নগরীতে সস্তায় ইলিশ কেনার হিড়িক ছিল। মঙ্গলবার দিন থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতারা ভীর করেছিলো পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামে। কিন্তু তাদের কাংখিত সস্তায় মিলেনি ইলিশ। স্বাভাবিক দামে কিনতে হয়েছে। তবুও লোকমুখে সস্তায় ইলিশ বিক্রির খবর পেয়ে পায়ে হেটে নগরীর বিভিন্ন শ্রেনীর ক্রেতারা পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে ভীর করেছিলো। লোকমুখে সস্তার ইলিশের খবরে শুরুর দিকে একেকজন ক্রেতা ৫-১০ কেজি পর্যন্ত ইলিশ কিনে ফিরলেও পড়ে অনেকেই ফিরেছেন খালি হাতে। চাহিদার তুলনায় মাছের আমদানি কম হওয়ায় তাদেরকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এমন হিড়িকে বেশ লাভবান হয়েছেন পোর্ট রোড এলাকার আড়ৎদার, কমিশন এজেন্ট সহ খুচরা মাছ বিক্রেতারা। গতকাল সন্ধ্যার পড়ে থেকে ইলিশ মোকাম থেকে পাইকারী ও খুচরা মিলিয়ে প্রায় ৪ শত মন ইলিশ বিক্রি হয়েছে বলে জানায় একাধিক আড়ৎদার। দাম তেমন চড়া না হলেও ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আগে এটি তাদের জন্য বেশ প্রতিকুল পরিবেশ ছিল বলে জানায় তারা। তাই সারারাত পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে এক উৎসবের পরিবেশ ছিল। অন্যদিকে মাছ না পেয়ে অনেক ক্রেতা হতাশ হয়ে ফিরলেও কেউ কেউ প্রবেশ করতেই হয়েছে ব্যার্থ। পোর্ট রোডের ভীর ঠেলে মোকামে প্রবেশে ব্যার্থ ক্রেতাদের ইলিশ কেনার জন্য ট্রলার ভাড়া করে যাওয়ার চেষ্ঠা করতেও দেখা গেছে। সামাজিক দুরত্বের কথা চিন্তা না করে ইলিশ প্রেমী নগর বাসীর এমন আচরনকে তাই সচেতন মহলের বাসিন্দারা আখ্যায়িত করেছেন নির্বোধের আচরন বলে।
সরজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার রাত ৯ টার পর থেকেই খুচরা ক্রেতাদের ভীর বাড়তে শুরু করে পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে। কিছুখনের মধ্যেই এই ভীর ছরিয়ে পরে ফলপট্রি, চকের পুল, লঞ্চঘাট এমনকি নগর ভবনের সামনে পর্যন্ত। নারী, শিশু থেকে শুরু করে নগরীর প্রায় সকল শ্রেনীর মানষে ঠেষে ওঠে এসকল স্থান গুলো। গভীর রাতের যানবাহন শূন্য সড়কগুলো পদচারি ইলিশ প্রেমী নগরবাসীর চারনায় পরিপূর্ন হয়ে ওঠে। শুরু দিকে ক্রেতরা ৫০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ ৬০০ টাকা কেজি, ১ কেজি-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৯শ থেকে ১ হাজার টাকায় লুফে নেয়। এই মূল্য দিনের বেলার মত হলেও নগরীতে সস্তার ইলিশের খবর ছরিয়ে পরে। এতে ক্রেতা বেড়ে যায় কয়েকগুন। রাত গভীর হওয়া সাথে সাথে শুরু হয় ইলিশ নিয়ে কাড়াকাড়ি। এমন এক ক্রেতাকে দেখে আলাপ কালে তিনি জানান, পেশায় তিনি একজন দিনমজুর। রোজকার ইনকামের ৭০০ টাকা পুরোটা দিয়েই কিনেছেন ইলিশ। সস্তা ইলিশের খবর পেয়ে পায়ে হেটে আমতলা থেকে পোর্টরোড আসা এই ক্রেতা বলেন সস্তায় ঠিক পাননি তবে ইলিশ যে পেয়েছেন তাতেই তিনি খুশি। নিষেধাজ্ঞার শুরুর প্রহরেই এমন আচরনের কারন জানতে চাইলে ক্রেতা কোন সদোত্বর দিতে পারেননি। বরিশাল জজ কোর্টের এক চাকুরিজীবি ফয়সাল নামক ব্যাক্তিকে তার সাথের ৭/৮ জন লোক নিয়ে ট্রলার ভাড়া করে ইলিশ মোকামে প্রবেশের চেষ্ঠা করতে দেখা গেছে। এসময় তার সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, সড়ক দিয়ে প্রবেশ করতে পারেননি তাই ট্রলার ভাড়া করে প্রবেশের চেষ্ঠা করছেন। যেকোন মূল্যে ইলিশ তাকে কিনতেই হবে বলেন তিনি। নিষেধাজ্ঞার সময় শুরু হওয়ার পর এই ইলিশ ক্রয়ের চেষ্ঠা করাটা কতটা বৈধ বলে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন দেশের আইনের তোয়াক্কা করার সময় নেই, যেকোন মূল্যে তিনি শুধু চান ইলিশ। এমন পরিস্থিতি চলে ভোর রাত পর্যন্ত।
করোনাকালীন সময়ে নগরবাসীর এমন আচরনে বেশ হাস্যরস ও বিরুপ প্রতিকৃয়ার সৃস্টি হয়েছে। সচেতন বাসিন্দাদের সাথে আলাপ কালে তারা জানান, জীবনের চাইতে এই নগরীর বাসিন্দাদের হয়ত ইলিশটাই বেশি প্রিয়। তাইতো নির্বোধ নগরবাসীর এমন আচরন দেখতে হয়েছে।
উলেক্ষ মা ইলিশ রক্ষায় ১৪ অক্টোবর রাত ১২ টার পর থেকে আগামী ২২ দিন তথা ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশের সকল প্রকার বিপনন, শিকার, পরিবহন নিষিদ্ধ করে সরকার।