2:38 pm , October 14, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আলুর দাম নির্ধারন করে দিয়েছে কৃষি বিপনন অধিদপ্তর। প্রতিকেজি আলুর দাম হিমাগারে ২৩ টাকা, পাইকারিতে ২৫ টাকা এবং খুচরা বাজারে ৩০ টাকা দরে বিক্রি নিশ্চিত করতে সারা দেশের জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। আর এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে মাঠে নামছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। বেঁধে দেয়া দরে আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান করবে। শুধু নগরী নয় উপজেলা পর্যায়েও এ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান। জেলা প্রশাসক বলেন, দিনভর বিভিনকর্মসুচী পালনে ব্যস্ত ছিলেন। এ ধরনের কোন চিঠি এসেছে কিনা জানেন না। তবে পাঠালে অবশ্যই এসেছে বলেন তিন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন সম্প্রতি আলুর দাম ব্যাপক বেড়ে গেছে। তাই সাধারন মানুষের কাছে এটি একটি বড় ধরনের বোঝায় পরিনত হয়েছে। দাম নির্ধারন করে দিয়ে থাকলে তা অবশ্যই একটি ভাল ও সময় উপযোগী পদক্ষেপ। মানুষ এখন এটিই চায়। আমরা দ্রুত সময়ে চিঠির নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ব্যবস্থা গ্রহন করব।
কৃষি বিপনন অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে কোল্ডস্টোরেজ, পাইকারি বিক্রেতা ও ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতাসহ তিন পক্ষই যাতে নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করে। সেজন্য কঠোর মরিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে ডিসিদের কাছে পাঠানো হয়েছে চিঠি।
চিঠিতে কৃষি বিপণন অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশে গত আলুর মৌসুমে প্রায় ১ দশমিক ৯ কোটি মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন। এতে দেখা যায় যে, গত বছর উৎপাদিত মোট আলু থেকে প্রায় ৩১ দশমিক ৯১ লাখ মেট্রিক টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু পরিমাণ আলু রপ্তানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই। কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ মৌসুমে একজন চাষির প্রতিকেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। আর আলুর মৌসুমে যখন হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে তখন প্রতিকেজির আলুর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৪ টাকা। প্রতিকেজি আলু হিমাগার ভাড়া বাবদ ৩ দশমিক ৩৬ টাকা, বাছাই খরচ ০. ৪৬ টাকা ও ওয়েট লস ০.৮৮ টাকা, মূলধন সুদ ও অনান্য খরচ বাবদ ২ টাকা ব্যয় হয় অর্থাৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্য খরচ ধরে এক কেজি আলু হিমাগার পর্যন্ত সংরক্ষণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২১ টাকা। এক্ষেত্রে হিমাগার পর্যায়ে বিক্রিমূল্যের উপর ২-৫ শতাংশ লভ্যাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ধরে হিমাগারের আলু দাম ২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আলু সংরক্ষণকারীর লাভ হয় কেজিপ্রতি ২ টাকা। অন্যদিকে আড়তদারি, খাজনা ও লেবার খরচ বাবদ ৭৬ পয়সা খরচ হয়। সেক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে দাম পড়ে ২৩ দশমিক ৭৬ টাকা। এর সঙ্গে মুনাফা ধরে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ভোক্তা পর্যায়ে সেটা ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা অযৌক্তিক। কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে প্রতিকেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং খুচরা বা ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর সারা দেশের হিমাগার মালিকদের কাছে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও হিমাগারে সংরক্ষণকারী কৃষক, বেপারী ও ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় আলু ছাড়ছেন না। কোনো কোনো অঞ্চলে হিমাগার থেকে ধীরগতিতে আলু সরবরাহ হ”েছ। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা সাধারণের সুবিধার্থে হিমাগার থেকে প্রয়োজনীয় আলু সরবরাহ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে আলুর দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠার পর সবজিটি মজুদ করে কৃত্রিম সংকট না করার বিষয়ে হিমাগার মালিকদের সতর্ক করেছে বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন