শেষ দিনে পোর্ট রোডের মোকামে ক্রেতাদের ভীর ইলিশের আমদানী কম থাকায় দাম ছিল বেশি শেষ দিনে পোর্ট রোডের মোকামে ক্রেতাদের ভীর ইলিশের আমদানী কম থাকায় দাম ছিল বেশি - ajkerparibartan.com
শেষ দিনে পোর্ট রোডের মোকামে ক্রেতাদের ভীর ইলিশের আমদানী কম থাকায় দাম ছিল বেশি

2:57 pm , October 13, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মা ইলিশ রক্ষায় আজ মধ্যরাত থেকে মোট ২২ দিন ইলিশ মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। আগামী ৪ নভেম্বর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুদও নিষিদ্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞার আইন ভঙ্গ করলে আইন ভঙ্গকারী কমপক্ষে ১ বছর থেকে ২ বছর সশ্রম কারাদ- অথবা সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। নিষেধাজ্ঞার আগের দিন গতকাল মঙ্গলবার বরিশাল পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে আড়ৎদার, কমিশন এজেন্ট, খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতাদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। বিগত কয়েক দিন থেকেই মোকামে ইলিশের আমদানি তেমন একটা ভালো না থাকলেও শেষ দিনে সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আগামী ২২ দিনের জন্য ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময় এবং মজুদ থেকে বিরতি নিয়েছেন তারা। শেষের দিনে মোকামে ইলিশের খুচরা ও পাইকারী দাম তুলনামূলক কম ছিলো বলে দাবি করেছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে সকাল থেকেই ইলিশ কিনতে পোর্ট রোড বাজারে ক্রেতাদের ভীর লক্ষ করা গেছে। গতকাল ইলিশ মোকামে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে মাছের আমদানি তেমন একটি লক্ষনীয় পরিমানে ছিল না। খুচরা ক্রেতাদের ভীর যথেষ্ঠ ছিলো। এ সময় আড়ৎদারদের সাথে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনায় জানা যায় গত ১৫-২০ দিন থেকেই ইলিশ মোকামে মাছের আমদানি অনেকটাই কম। নদীতে মাছ কম থাকায় এ অবস্থা হচ্ছে বলে জানান তারা। মোকামে ফিসিং মাছ বা সামুদ্রিক ইলিশের আমদানি বেশি। বরিশাল ইলিশ মোকামে গতকাল নিষেধাজ্ঞার শুরুর আগ দিন পর্যন্ত জেলার মেহেন্দিগঞ্জ, শ্রীপুর, ভোলা, ভেদুরিয়া, ইলিশা, লালমোহন, শ্যামরাজ, নুরাবাদ সহ বিভিন্ন নদী থেকে ইলিশ এসেছে। তবে এ সকল নদী থেকে যে পরিমান ইলিশ এসেছে তার থেকে অনেক বেশি এসেছে সমুদ্র থেকে। বর্তমানে নদীতেই মাছের পরিমান কম। তাই জেলেদের জালে তেমন মাছ পড়ছে না বলে জানিয়েছে আড়ৎদাররা। গত ১৫-২০ দিনে নদী ও সামুদ্রীক ইলিশ মিলিয়ে মোকামে ৫০০ থেকে ৭০০মন ইলিশ আমদানি হয়েছে। দামের বিষয় বিস্তারিত বিবরনে আড়ৎদাররা জানান ঝাটকা (২০০-৪০০ গ্রাম) ইলিশ মন প্রতি বিক্রি হয়েছে গতকাল পর্যন্ত ১২ হাজার টাকায়। ৫০০ থেকে ৮০০ গ্রাম সাইজের আভ্যন্তরীন নদীর ইলিশ মন প্রতি ২২-২৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই সাইজের ফিসিং ইলিশের মন বিক্রি হয়েছে ১৮-১৯ হাজার টাকায়। ৯০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত সাইজের (গ্রেড সাইজ) ইলিশ আভ্যন্তরিন নদীর মন প্রতি বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার টাকায়। একই সাইজের ফিসিং ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৬ হাজার টাকায়। নিষেধাজ্ঞার আগে ইলিশের এই দামকে একরকম হতাশা জনক কন্ঠে পানির দাম বলে আক্ষায়িত করেছে আড়ৎদাররা। খুচরা বাজারে গতকাল ৫০০-৭০০ গ্রাম ইলিশের কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা দরে। গ্রেড সাইজের ইলিশ এর কেজি ছিল ১ হাজার টাকার মধ্যে। এজন্য মাছ কিনতে সৌখিন ক্রেতাদের ভীর ছিলো ইলিশ মোকামে লক্ষ্যনিয়। আগামী ২২দিন ইলিশ মিলবে না তাই একটু বেশি করেই কিনে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক খুচরা ক্রেতা। তারা বলেছেন তুলনামুলক দাম কম তাই কিনতে ভীর উপেক্ষা করেও এসেছে তারা। অনুদিকে আগামী ২২দিন নিষেধাজ্ঞায় কর্মহীন হয়ে পড়বে মোকামে কর্মরত ইলিশ সংশ্লিষ্ট ৪-৫ হাজার শ্রমিক। তারা এই ২২ দিন সাধ্যমত অন্যান্য কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের চেষ্ঠা করবেন বলে জানিয়েছেন। এর পড়েও সরকারের মা ইলিশ রক্ষার এই কর্মসূচিকে শতভাগ সহযোগীতা করবেন বলেও জানান তারা। কিছুটা কষ্ট হলেও নিষেধাজ্ঞার পরেও এই কষ্টই অর্থের রুপে ইলিশ হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তারা। নিষেধাজ্ঞার সার্বিক পরিস্থিতি তদারকির জন্য আগামী ২২দিন কঠোর অবস্থানে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ সংশ্লিষ্ট সকলে। এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর আওয়ামীলীগের শিল্প ও বানিজ্যিক বিষয় সম্পাদক ও বরিশাল মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতি যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল জানান আগামী ২২দিন মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নির্দেশনা শতভাগ পালন করবেন তারা। এ সময় কেউ যেন এই নির্দেশনা অমান্য করতে না পাড়ে সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তারাও তৎপর থাকবেন। মা ইলিশ রক্ষার সরকারের এই কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানান তিনি। উল্লেখ্য সরকার ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে জেলেদের জন্য ১০ হাজার ৫৬৬.৮৪ মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল বরাদ্দ দিয়েছে। ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম শুরুর আগেই সরকারের মানবিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালীন সময়ে মোট ২২ দিনের জন্য এ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর আওতায় দেশের ৩৬টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৪২টি জেলে পরিবার ২০ কেজি করে চাল পাবেন। গত মৌসুমের তুলনায় অতিরিক্ত ১ লাখ ২০ হাজার ২৬৩টি জেলে পরিবার এ খাদ্য সহায়তা পাবেন। এ নিয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের এ সংক্রান্ত মঞ্জুরী জ্ঞাপন করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ভিজিএফ চাল আগমী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে উত্তোলন ও সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিতরণ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত জেলাগুলো হলো- ঢাকা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নরসিংদী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, চট্টগ্রাম, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর. চাঁদপুর, কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা ও ঝালকাঠি। উল্লেখ্য, ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণে “প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিশ অ্যাক্ট, ১৯৫০” অনুযায়ী এ বছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT