2:55 pm , October 10, 2020
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার গত সাড়ে ৬ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটলেও আসন্ন শীতে পরিস্থিতির নতুনকরে অবনতির আশংকা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মাঝে। পাশাপাশি নমুনা পরিক্ষার সংখ্যা হ্রাসের ফলে সনাক্তের সংখ্যা কমছে বলে ওয়াকিবহাল মহল দাবী করলেও সে ব্যপারে কোন মন্তব্য করেননি স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল। অপরদিকে বরিশাল জেলা ও মহানগরীর পরিস্থিতি নিয়েও বাড়তি উদ্বেগ রয়েছে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের মাঝেও। এখন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মোট আক্রান্ত ও মৃতদের অর্ধেকেরও বেশী করোনার হটস্পট নগরীতে। আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় সবার ওপরে নগরীর নাম থাকলেও পরিস্থিতি উত্তরনে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। গত সপ্তাহেও নগরীর কাশীপুর, বৈদ্যপাড়া ও নথুল্লাবাদে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা সংক্রমনে।
দেশে ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মত ‘কোভিড-১৯’ রোগী সনাক্ত হবার পরে ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। আর দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর মেলে ২০ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকি থেকে। নারায়নগঞ্জের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কর্মরত একজন সংক্রমিত হয়ে নিজ বাড়ীতে এসে মৃত্যুবরন করেন। এরপর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ায় ২ হাজার ৮৪৮ জনে। আর এ সময়ে মৃত্যুবরন করেন ৬০ জন। তবে এসময়ে আক্রান্তদের মধ্যে ৮১৫ জন সুস্থ হয়ে ওঠেন।
কিন্তু জুলাই মাসেই পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটে। মার্চের ২০ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৩ মাস ১০ দিনে ২,৮৪৮ জন আক্রান্ত হলেও জুলাই মাসের ৩১ দিনেই দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৯৬ জন। এসময়ে মৃত্যুও হয় ৫১ জনের। তবে আগস্ট মাসের ৩১ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে ১ হাজার ৭৩৬ সহ দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৫৫১ জনে দাড়ায়। আর এ মাসে ৪০ জন সহ সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৫৬’তে উন্নীত হয়।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমনের এপর্যন্ত লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে সেপ্টেম্বর মাসে। গত মাসের ৩০ দিনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৮’তে নেমে এসেছে। আর মৃত্যুর সংখ্যাও আগের মাসের ৪০ থেকে ১৫ জনে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ায় ৮ হাজার ৩৪৮ জনে। যারমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭১ জনের।
তবে গত মাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস পেলেও এখনো দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে সনাক্তের হার জাতীয় হারের চেয়ে বেশেী, ১৭.১৪%। এমনকি গত মাসে মৃতের সংখ্যা অনেকাংশে হ্রাস পাবার পরেও এ অঞ্চলে এখনো মৃত্যুহার ২.০৪%। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার ১ কোটি মানুষের জন্য মাত্র দুটি পিসিআর ল্যাব বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ভোলা জেলা হাসপাতালে। যার প্রতিটিতে প্রায় ৩শ করে নমুনা পরিক্ষার সুযোগ থাকলেও ভোলাতে একদিন সর্বোচ্চ ৫১ জনের নমুনা পরিক্ষা হয়েছে। আর বরিশালে নমুনা পরিক্ষা ইতোমধ্যে ১১৯ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
তবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আক্রান্ত ৮ হাজর ৩৪৮ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৬৩৩ জন সুস্থ্য হয়ে ওঠার কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় ১৬৮ জন আক্রান্ত ও ৩জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গত মাসের একই সময়ে ছিল যথাক্রমে সাড়ে ৩শ ও ১০ জন।
এদিকে নমুনা পরিক্ষা কিছুটা বৃদ্ধির সাথে শণিবার দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৮ হাজার অতিক্রম করেছে। তবে গত ২৪ ঘন্টায় কোন মৃত্যু সংবাদ ছিলনা। এসময়ে বরিশাল,পটুয়াখালী ও ভোলাতে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে সংক্রমনের হার এখনো ১৭.১৪%। আর মৃত্যুহার ২.০৪%। গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থতার সংখ্যা প্রায় ৬০% হ্রাস পেলেও নতুন ১৬ জন সহ এ অঞ্চলে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৯১০জন। তবে দক্ষিণাঞ্চলে সুস্থতার হার শণিবার ৯২.৮৮%-এ উন্নীত হয়েছে। যা দেশের প্রায় সর্বোচ্চ।
শণিবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলে ১৭২ জনের নমুনা পরিক্ষা হয়েছে। যা আগের দিন ছিল ১৪৯। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে ১৫৮ জনের নমুনা পরিক্ষায় ২০ জনের এবং ভোলাতে ১৪ জনের মধ্যে একজনের করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে।
শণিবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় বরিশালে আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের ১১ থেকে ১৫’তে উন্নীত হয়েছে। এনিয়ে জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৬০৬ জনে উন্নীত হল। মৃত্যু হয়েছে ৭১ জনের। জেলাটিতে আক্রান্ত ও মৃতের এ সংখ্যার মধ্যে মহানগরীতেই সংখ্যাটা ৮৫%-এর বেশী। এনগরীর ৮০%-এ বেশেী মানুষ এখন মাস্ক ব্যবহার সহ কোন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন করেন না। বিষয়টি নিয়ে কারো কোন দায়বদ্ধতা আছে বলেও মনে হয়না ।
পটুয়াখালীতেও গত ২৪ ঘন্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা আগের দিনের দুই থেকে ৪ জনে উন্নীত হয়েছে। ফলে জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১,৪৪৫ জনে। আর মৃত্যু হয়েছে ৩৭ জনের। ভোলাতে আগের দিন কোন আক্রান্ত না থাকলেও শণিবারে একজন নতুন আক্রান্তের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে জেলাটিতে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭৪০ জনে। এপর্যন্ত মারা গেছেন ৬ জন। ঝালকাঠীতেও গত ২৪ ঘন্টায় নতুনকরে দুজন করোনা সংক্রমনের শিকার হওয়ায় জেলাটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৭১৪। মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।
এছাড়া পিরোজপুরে নতুনকরে একজন আক্রান্ত হলেও গত ২৪ ঘন্টায় বরগুনাতে কোন সংক্রমণের খবর ছিলনা। পিরোজপুরে এপর্যন্ত ১,০৯৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ২৪ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আর বরগুনাতেও ৯১৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ২০ জন মারা গেছেন ।
শণিবার সকাল ৮টায় বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা আগের দিনের একই সময়ের ১৬ থেকে ২০ জনে উন্নীত হয়েছে। এসময়ে হাসপাতালটির আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ১৯ থেকে ১৬ জনে হ্রাস পেলেও আইসইউ’তে আগের দিনের সম সংখ্যক ৪ জন রোগীই চিকিৎসাধীন ছিল।