2:58 pm , October 4, 2020
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চরমোনাই ইউনিয়নের বাসিন্দা দলিল লেখক রিয়াজ খুন হয়েছে দেড় বছর অতিবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে ৩ জন। প্রথম তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে খুন হবার পর আটক মামলার প্রধান আসামী রিয়াজের স্ত্রী লিজা আদালতে ১৬৪ ধারায় পরকীয়া প্রেমিক মাসুম মিলে স্বামী রিয়াজকে হত্যা করার জবানবন্দি দেয়। দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তার সময়ে কোন আসামী গ্রেফতার বা মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। তবে হত্যার প্রায় দেড় বছরের মাথায় হত্যাকারী সন্দেহে ৩ ছিচকে চোর গ্রেফতার ও রিয়াজ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান নিয়ে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন মামলার বর্তমান তথা তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু রহস্যজনকভাবে মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তার একটা বিষয়ে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর মিল রয়েছে। আর সেটা হচ্ছে মামলার অপর প্রধান আসামী লিজার স্বীকারোক্তিতে হত্যাকারী হিসাবে উঠে আসা মাসুমকে গ্রেফতারের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া। আর উভয়ই বলেছেন ও বলছেন মাসুম আতœগোপনে রয়েছে তার কোন সন্ধান মিলছে না। অথচ মাসুমের এলাকার গিয়ে মিলেছে ভিন্ন তথ্য। মাস কয়েক আগেও মাসুম চরমোনাইর নিজ বাড়িতে এসে অবস্থান করেছেন। এলাকার একাধিক ব্যক্তির সামনেও পড়েছেন তিনি। এছাড়া জানা গেছে স্ত্রী সন্তানদের সাথে মোবাইলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে তার। কিন্তু রহস্যজনকভাবে মাসুমের অবস্থান সনাক্ত বা তাকে গ্রেফতারে কোন অভিযানও পরিচালনা করছে না পুলিশ। মাসুমের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ পুলিশের ভুমিকা বা অবস্থান এমন যে মামলায় লিজা ছাড়া অন্য কোন আসামীই নেই। এদিকে মামলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সুত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে মাসুমকে গ্রেফতারের বাইরে রেখেই মামলার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তা। বিষয়টি নিজের বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সগীর হোসেন। তিনি জানান, চেষ্টা করছি এ মাসের শেষের দিকে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য। তবে মাসুমকে গ্রেফতারে অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রচেষ্টা চালানো ছাড়া কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাতে দলিল লেখক রিয়াজকে নিজ ঘরে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এর পরের দিনই রিয়াজের বড় ভাই রিপন বাদী হয়ে স্ত্রী লিজা ও তার পরকিয়া প্রেমিক রিয়াজের সহকারী মাসুমসহ ৩ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই আটক হওয়া লিজাকে পরবর্তীতে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। বাকি থাকে মাসুম ও তার এক সহযোগী। সেই মাসুম এখনো অধরাই থেকে গেছে। দেড় বছরে পুলিশের একাধিক বিভাগের ৩ তদন্তকারী কর্মকর্তা মিলেও তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি ।
গতকাল সকালে মাসুমের বিষয়ে খোজ খবর নিতে তার চরমোনাইর বাড়িতে যায় পরিবর্তন পত্রিকার একটি টিম। নাম ও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় দুই বাসিন্দা জানিয়েছেন মাস কয়েক আগেও মাসুমকে নিজ বাড়ি ও এলাকায় দেখেছেন তারা। তারা বলেছেন মাঝে মধ্যে হলেও বাড়িতে যাতায়াত রয়েছে মাসুমের।
এ দিকে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, দলিল লেখক রিয়াজের সাথে কাজ করার আগে বিএনপি নেতা সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক আক্কাসের সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন মাসুম। এছাড়া স্থানীয় বিএনপির বড় নেতাও ছিলেন সে। পরে লঞ্চেও কাজ করেছেন তিনি। স্থানীয়রা আরো জানান মাসুম খুব বুদ্ধিমান ও বেপরোয়া স্বভাবের ছিলো। তার দ্বারা হত্যাকান্ড সংগঠিত করা অস্বাভাবিক নয় বলেও মন্তব্য করেন অনেকের।
মাসুমকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউনিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সগীর বলেন, তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মামলার সব আসামী গ্রেফতার হবে এমন কোন কথা নেই। আর মামলার কার্যক্রম থেমে যায় তাও না। আমরা খুব সর্তক ও স্বতন্ত্র থেকে মামলার তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহবুদ্দিন খান বলেন, আমি মামলাটির উপর দৃষ্টি রাখছি। যেহেতু মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে প্রকৃত অপরাধীদের সনাক্ত করতে করনীয় সব কিছু করা হবে।