নগরীতে গ্যাস চালিত সিএনজি থেকে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী নগরীতে গ্যাস চালিত সিএনজি থেকে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী - ajkerparibartan.com
নগরীতে গ্যাস চালিত সিএনজি থেকে চলছে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজী

3:12 pm , October 3, 2020

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে নিরব চাঁদাবাজী চলছে গ্যাস চালিত সিএনজি থেকে। নগরীর দুই প্রান্তে দুটি শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে চলছে এই চাঁদাবাজী। দিনে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক টাকা আদায় করছে সংগঠন দুটি। শ্রমিক তথা চালকদের প্রয়োজনে ও স্বার্থে এই টাকা ব্যয় করার কথা থাকলেও বাস্তবিক চিত্র পুরাটাই ভিন্ন। চালকদের কাছ থেকে আদায় করা ওই টাকা ভাগ ভাটোয়ারা করেন সংগঠনের সভাপতি হুমাউন কবির মোতালেব ও সম্পাদক সবুর। চালকরা চাঁদার টাকা দিতে না চাইলে জোর করে নেয় সভাপতি সম্পাদকের কমিশন ভুক্ত কর্মীরা। এমনকি চাঁদা না দিলে মারধর পর্যন্ত করা হচ্ছে। যার প্রতিবাদে সিএনজি চালকরা গন স্বাক্ষর দিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়ারও প্রস্ততি নিয়েছে। এ বিষয়ে মহানগর ট্রাফিক বিভাগও বলছে এই চাঁদা আদায় সম্পূর্ন অবৈধ। সম্প্রতি সংগঠনের সভাপতিকে ডেকে চাঁদা আদায় বন্ধের জন্য বলা হয়েছে। জানা গেছে, নগরীর বান্দ রোডে এলপি অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়ন (গ্যাস চালিত) নামে একটি শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। যার স্ব ঘোষিত সভাপতি হুমায়ুন কবির মোতালেব এবং সাধারন সম্পাদক সবুর। তাদের নির্দেশে লঞ্চঘাট এলাকায় কবির এবং রুপাতলী এলাকায় এখলাস চাঁদা নেয়। মূলত সভাপতি ও সম্পাদকের নির্দেশে এরা দুজনে সংগঠনের ব্যানারে প্রতিটি গ্যাস চালিত সিএনজি থেকে দৈনিক ৩০ টাকা করে উত্তোলন করে। সে হিসাবে নগরীতে চলমান প্রায় দেড় হাজার গ্যাস চালিত সিএনজি ও অটো রিক্সা থেকে দৈনিক ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা উত্তোলণ করা হয়। মাসে যার পরিমান দাড়ায় কোটি টাকার বেশী। কিন্তু উত্তোলিত টাকা কোন ব্যাংক হিসাবে জমা না করে ভাগ করে নিচ্ছেন সভাপতি ও সম্পাদক। একটি অংশ অবশ্য টাকা উত্তোলনকারীদেরকেও দেয়া হয়। মজার বিষয় হচ্ছে সভাপতির নিজের একটি সিএনজি বা অটোরিক্সাও নেই। তিনি মূলত একজন স্ব -মিল শ্রমিক লিডার।
২০১৭ সালে গঠিত ওই সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৫ নং অনুচ্ছেদে শ্রমিক তথা চালকদের স্বার্থে সংগঠনের সকলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সহনীয় হারে চাঁদা প্রদানের কথা বলা হয়েছে এবং ৬ নং অনুচ্ছেদে উত্তোলিত চাঁদা স্বচ্ছতা অনুসরন করে শ্রমিকদের কল্যানে ব্যয় করার কথা উল্লেখ করা আছে। কিন্তু সংগঠনের এই ৩ বছরে কোন একজন শ্রমিক বা চালকের কল্যানে এক টাকাও প্রদান করার নজির নেই।
একাধিক চালক অভিযোগ করে বলেন আমরা সংগঠনের শুরু থেকে চাঁদা প্রদান করে আসছি। সংগঠন থেকে আমরা বিপদে সহযোগীতা পাব এ আশায়। কিন্তু করোনার মতো মহামারীতেও সংগঠন থেকে এক মুঠো চালও দেয়া হয়নি। এছাড়া অনেক চালক নানা বিপদে পড়ে সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু কখনো কাউকে এক টাকাও দেয়া হয়নি। করোনার কারনে বর্তমানে যাত্রী কম উপার্জনও কম। তাই দৈনিক ৩০ টাকা করে চাঁদা প্রদানের ক্ষমতা নেই। যে কারনে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছি। তারপরও আমাদের কাছ থেকে জোর করে এমনকি শারিরিক ভাবে লাঞ্চিত করে চাঁদা নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি লিখিত ভাবে পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে জানানো হয়েছে। এদিকে নথুল্লাবাদ এলাকায় শ্রমিক কল্যাণ নামে চাঁদা উঠাচ্ছে লিটন মোল্লার নির্দিষ্ট কয়েকজন অনুসারী। তারা যেকোন রুট থেকে নথুল্লাবাদ এলে তাদেরকে ২০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। করোনার এই মহামারীতে প্রতিদিন ৫০ টাকা চাঁদা দেওয়ার পর বেশিরভাগ সিএনজি চালকরা বাজারের টাকা নিয়ে বাড়িতে যেতে পারছেন না।
এ বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (টি আই) আবদুর রহিম বলেন, কয়েক দিন আগে এক চালকের কাছ থেকে মৌখিক ভাবে চাঁদার বিষয়টি জেনে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। কিন্তু তার উপস্থিতি টের পেয়ে চাঁদা আদায়কারী পালিয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে সংগঠনের সভাপতি মোতালেব বলে জানতে পারি। পরে তাকে ডেকে উপ পুলিশ কমিশনার স্যার চাঁদা আদায় বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
উপ পুলিশ কমিশনার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন এ চাঁদা আদায় সম্পূর্ন অবৈধ। এটা ফৌজদারী অপরাধও। চালকদের উচিত মামলা করা। লিখিত কোন অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহনের কথাও জানান তিনি।
বরিশাল শ্রম অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোঃ ওসমান গনি বলেন, নিয়ম হচ্ছে সংগঠনের নামে সভাপতি ও সম্পাদকের নামে যৌথ একাউন্ট করে চাঁদার টাকা জমা করা এবং সবার জ্ঞাতার্থে তা ব্যয় করা। তিনি বলেন এখানো জোর করে সদস্য নেয়া ও চাঁদা আদায়ের সুযোগ বা বৈধতা নেই। বিষয়টি লিখিত ভাবে পেলে রেজিষ্ট্রেশন বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT