1:33 pm , October 1, 2020
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার গত সাড়ে ৬ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে আসন্ন শীতে পরিস্থিতির নতুন করে অবনতির আশংকা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মাঝে। পাশাপাশি নমুনা পরিক্ষার সংখ্যা হ্রাসের ফলে সনাক্তের সংখ্যা কমছে বলে ওয়াকিবহাল মহল দাবী করেছে। কিন্তু সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করেননি স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল। অপরদিকে বরিশাল জেলা ও মহানগরীর পরিস্থিতি নিয়েও বাড়তি উদ্বেগ রয়েছে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীলদের মাঝেও। এখন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মোট আক্রান্ত ও মৃতদের প্রায় অর্ধেকই করোনার হটস্পট নগরীর। আক্রান্ত ও মৃতের তালিকায় সবার ওপরে নগরীর নাম থাকলেও পরিস্থিতি উত্তরনে সংশ্লিষ্টদের তেমন কোন মাথাব্যাথা নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
দেশে ৮ মার্চ প্রথমবারের মত ‘কোভিড-১৯’ রোগী সনাক্ত হবার পরে ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। আর দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর মেলে ২০ মার্চ পটুয়াখালীর দুমকি থেকে। নারায়নগঞ্জের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কর্মরত একজন সংক্রমিত হয়ে নিজ বাড়ীতে এসে মৃত্যুবরন করেন। এরপর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ায় ২ হাজার ৮৪৮ জনে। আর এসময়ে মৃত্যুবরন করেন ৬০ জন। তবে এসময়ে আক্রান্তদের মধ্যে ৮১৫ জন সুস্থ হয়ে ওঠেন।
কিন্তু জুলাই মাসেই পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটে। মার্চের ২০ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৩ মাস ১০ দিনে ২,৮৪৮ জন আক্রান্ত হলেও জুলাই মাসের ৩১ দিনেই দক্ষিণাঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৯৬ জন। এসময়ে মৃত্যুও হয় ৫১ জনের। তবে আগস্ট মাসের ৩১ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কমে ১ হাজার ৭৩৬ সহ দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৫৫১ জনে দাড়ায়। আর এ মাসে ৪০ জন সহ সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা ১৫৬’তে উন্নীত হয়।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা সংক্রমনের এপর্যন্ত লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে। গতমাসের ৩০ দিনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬৮’তে নেমে এসেছে। আর মৃত্যুর সংখ্যাও আগের মাসের ৪০ থেকে ১৫ জনে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৪৮ জনে। যারমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৭১ জনের।
তবে গত মাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হ্রাস পেলেও এখনো দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে সনাক্তের হার জাতীয় হারের চেয়ে বেশেী, ১৭.৩৯%। এমনকি গত মাসে মৃতের সংখ্যা অনেকাংশে হ্রাস পাবার পরেও এ অঞ্চলে এখনো মৃত্যুহার ২.০৫%। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার ১ কোটি মানুষের জন্য মাত্র দুটি পিসিআর ল্যাব বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ভোলা জেলা হাসপাতালে। যার প্রতিটিতে প্রায় ৩শ করে নমুনা পরিক্ষার সুযোগ থাকলেও ভোলাতে মাত্র একদিন সর্বোচ্চ ৫১ জনের নমুনা পরিক্ষা হয়েছে। আর বরিশালে নমুনা পরিক্ষা ইতোমধ্যে ১১৯ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
তবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আক্রান্ত ৮ হাজর ৩৪৮ জনের মধ্যে ৭ হাজার ৬৩৩ জন সুস্থ্য হয়ে ওঠার কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। ফলে এ অঞ্চলে সুস্থতার হার ইতোমধ্যে ৯১.৪৪%-এ উন্নীত হয়েছে। সুস্থতার এ হার দেশের সর্বোচ্চ বলে জানা গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় নতুনকরে আরো ১১ জনের করোনা সংক্রমণের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ফলে এ অঞ্চলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়াল ৮ হাজার ৩৫৯ জনে। তবে গত ৪ দিনে এ অঞ্চলে করোনা সংক্রমণে কোন মৃত্যু সংবাদ নেই। আর গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ২৭ জন সহ দক্ষিণাঞ্চলে মোট সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন ৭,৬৬০ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে ৮ জনই বরিশালে। যে সংখ্যাটা আগের দিন ছিল ২০। এসময়ে পিরোজপুরে দুই ও ভোলাতে আরো ১জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত ২৪ ঘন্টায় বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে মাত্র ১২৭ জনের নমুনা পরিক্ষায় ১১ জনের দেহে করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। আগের দিন ১৯৫ জনের নমুনা পরিক্ষায় পজিটিভ ছিল ২৫ জনের। আর ভোলাতে বৃহস্পতিবার সকালের পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় ২৬ জনের নমুনা পরিক্ষায় একজনের করেনা পজিটিভ সনাক্ত হয়। আগের দিনেও ভোলাতে সমসংখ্যক নমুনা পরিক্ষা ৩জনের পজিটিভ সনাক্ত হয়েছিল।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা আগের দিনের চেয়ে একজন বেড়ে ২৩, আর আইসোলেশনে ৫ জন হ্রাস পেয়ে ১৬ জন চিকিৎসাধীন ছিল। হাসপাতালটির আইসিইউ’তে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা আগের দিনের ৬ থেকে তিন জনে হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে।