3:26 pm , September 30, 2020
হেলাল উদ্দিন ॥ প্রায় ৩০ বছরের চাকুরী জীবনের ২০ বছর সদর হাসপাতালে পার করছেন রেডিওগ্রাফার জলিল। আর শুরু থেকেই কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে চাকুরী করার ইতিহাস রয়েছে এই জলিলের। যে কারনেই দূর্নীতির মহানায়ক এই জলিল ৩য় শ্রেনীর পদে থেকেও মালিক হয়েছেন কোটি টাকার।
ম্যানেজ প্রক্রিয়ার গুরু ঃ
জলিলের চাকুরী জীবনের শুরু হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। সেখানে কয়েক বছর চাকুরী করার পর অনিয়ম দূর্নীতির কারনে জলিলের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক বদলীর আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালের তৎকালীন প্রধান টেকনোলজিস্ট বাবুল আক্তারের সাথে সমঝোতা করে বদলী আদেশ বাতিল করতে সমর্থ হন জলিল। পরে বরিশাল সদর হাসপাতালে বদলী হয়ে আসেন তিনি। তখনো তেমন কোন অর্থ সম্পত্তি তলাতে জমেনি জলিলের। এই হাসপাতালে এসেই ভাগ্যের সিকে ছিড়ে তার। হাসপাতালের এক্স রে মেশিন বছরের পর বছর নষ্ট থাকায় বেকার সময় কাটতে থাকে তার। তখনই কর্তৃপক্ষ কে ম্যানেজ করে রেডিওলজিস্ট হয়েও একে একে ডায়েট, ঔষধ সাপ্লাইসহ হাসপাতালের অর্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ন বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন জলিল। এর পর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নগরীতে কথিত আছে সদর হাসপাতালের এক্স রে মেশিন নাকি যুগ যুগ ধরে নষ্ট বা বিকলই থাকে। এটাও কথিত আছে যে মেশিন বিকল করার কারিগর নাকি এই জলিলই। জানা গেছে সদর হাসপাতালে আসার পরেও একাধিক বার জলিলের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগে তদন্ত হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই নিষ্পাপ প্রমানিত হয়েছে সে। এসবই ম্যানেজ প্রক্রিয়ার গুরু জলিলের কারিশমা।
কোটি টাকার ফ্লাটঃ
সদর হাসপাতালে বদলী হয়ে আসার পর আলাউদ্দিনের যাদুর চেরাগ হাতে পান জলিল। মাত্র বছর দশেকের মধ্যে নগরীর মল্লিক রোডে কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেন দুই ইউনিট সম্বলিত একটি ফ্ল্যাট। এছাড়া গ্রামের বাড়ি মঠবাড়িয়ায় আলিশান বাড়ি, নজর কাড়া মসজিদ নির্মান করেছে কোটি টাকা ব্যয়ে। অন্য দিকে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয় করে স্ত্রীর নামে হাসপাতালের সামনে অবস্থিত পদ্মা ডায়গনস্টি সেন্টারের ৫০ ভাগ মালিকানা নিয়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি মাল্টিপারপাস। মালিকানার সাথে জড়িত রয়েছে অপর একটির সাথেও। যে দুটিতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেছে জলিল। এছাড়া ঢাকায় একাধিক ফ্য¬াটসহ নামে বেনামে কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে জলিলের।
বিলাসী চাকুরী জীবনঃ
জলিলের মূল কাজ এক্স রে করা বা এক্স রে মেশিন পরিচালণা করা। কিন্তু জলিল বেতন ভুক্ত এক কর্মচারী রেখে সে কাজ করাচ্ছেন। সচীন নামের হাসপাতালের সাবেক এমএলএসএসকে মাসিক বেতনে রেখে সরকারী কাজ করাচ্ছেন। আর নিজে সময় দিচ্ছেন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। জানা গেছে কয়েক বছর আগেও সদর হাসপাতালের সামনে জলিল মালিকানাধীন পদ্মা ছাড়া আর কোন ডায়গনস্টিক সেন্টার ছিলো না। যে কারনে টাকা কামানোর স্বার্থে হাসপাতালের এক্স রে মেশিন নষ্ট করে রাখত জলিল আর রোগী বাগিয়ে নিত নিজ ডায়গনস্টিক সেন্টারে। অনুরুপ ভাবে কয়েক মাস আগেও নষ্ট হয়ে যায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে হাসপাতালে বরাদ্ধ দেয়া ডিজিটাল এক্স রে মেশিন। এ অবস্থায় হাসপাতালের পুরাতন এন্যালগ মেশিন দিয়ে লোক দেখানো ও কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করার জন্য এক্সরে বিভাগ খুলে রাখছেন জলিল।