3:38 pm , September 19, 2020
পরিবর্তন ডেস্ক ॥ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহন না করলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে কোন দেশ থাকতো না। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ, তিতিক্ষার কারণে আজ আমরা স্বাধীন দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে অবস্থান গ্রহন করেছি। তিনি ১৪ টি বছর জেলে কাটিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ছিলো সোনার বাংলা গড়ার, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাত-দিন কাজ কর যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই পরিচিতি লাভ করেছে। কিন্তু সেই পরিচিতি লাভ করলেই শুধু হবে না, সেই লক্ষ্যে পৌছাতে হলে তথ্য ও প্রযুক্তি বিজ্ঞানে আমাদেরকে আরো স্বাবলম্বী হতে হবে। আমাদের সাধারণ মানুষের আরো জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যাতে উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি। তাহলেই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়শীল দেশের যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, সেখানে পৌছাতে হবে। শনিবার বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে উপজেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগীতার সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বরেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, আজকের এ আয়োজন খুব ছোট আকারে করা হয়েছে। কারণ করোনা ভাইরাস যেটা বৈশ্বিক মহামারি রুপ ধারণ করেছে, তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে আজকের এ আয়োজন ছোট আকারে করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দশ বছর আগে দেশ যেখানে ছিলো, সেখানে আজ নেই। ১৬ কোটি মানুষের মাঝে ১৫ কোটি মোবাইল ফোন ব্যবহার হচ্ছে। ৬ কোটি মানুষ আজ ফেসবুক ব্যবহার করছে। সরকারের যতো কার্যক্রম আজ কিন্তু তা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে করা হচ্ছে। এক মন্ত্রনালয়ের সাথে অন্য মন্ত্রনালয়ের চিঠি আদান-প্রদান আমরা ই-মেইলের মাধ্যমে করি। এমনকি এবার করোনা ভাইরাসের সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে বিশাল অংকের টাকার প্রনোদনা হিসেবে জনগনের হাতে পৌছে দিয়েছেন, সেটাও কিন্তু মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্যে দেয়া হয়েছে। আর এ সবকিছুসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এটা শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। তার সুযোগ্য পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় রাত-দিন এটার পেছনে কাজ করেছে। আর কয়েক মাস পরে আমরা মোবাইল ফোনে ফাইভ জি ব্যবহার করবো। আর এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিশ্রম, চেষ্টা ও মেধার মাধ্যমেই। দশ বছর আগে আমরা চিন্তা করেনি মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাবো, আমাদের স্বপ্নেও ভাবিনি অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো মহাকালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট পাঠাবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা মহাকাশে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে আজ আমাদের যে তথ্য পাঠানো হচ্ছে, তা দিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রনালয় কাজ করছে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কাজ করছে। তথ্য এবং বিজ্ঞানে যদি আমরা অগ্রসর না হতে পারি, পরিপূর্ণতা লাভ করতে না পারি, তাহলে আমাদের সরকারের যে স্বপ্ন সে লক্ষ্যে পৌছাতে পারবো না। আজকের যারা তরুন, তোমাদের বয়স কম, মেধা রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে পৌছাতে হলে তোমাদের ওপর সরকার নির্ভরশীল। তোমরা তথ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে যতো ঘাটাঘাটি করতে ততো জানতে পারবে। বাংলাদেশের মজবুদ অর্থনৈতিক ভিত স্থাপিত করতে হলে তোমাদের প্রয়োজন হবে, কারণ ২০৪১ সালে হয়তো আমরা থাকবো না, তোমরাই সেই প্রজন্মে বিভিন্ন ক্ষেত্রে থাকবে। তোমাদের ওপর নির্ভর করবে এ দেশের উন্নতি, আবার তোমাদের দেখেই পরবর্তী প্রজন্ম জ্ঞান অর্জন করবে, লাভবান হবে। তিনটা জিনিসের প্রতি তোমরা খেয়াল রাখবে, প্রথম- তথ্য-প্রযুক্তিতে তোমাকে সততা অবলম্বন করতে হবে, তথ্য প্রযুক্তিতে তোমাদের আরো আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। দ্বিতীয় তথ্য-প্রযুক্তিতে তোমাদের আরো জ্ঞান অর্জন করতে হবে, এখানে জ্ঞান অর্জন করা খুবই সহজ। কারণ ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এমন কোন জিনিস নাই যে জানতে পারবে না। তৃতীয় হলো, তোমাদের মন-মানসিকতা এবং শারিরীক যোগ্যতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সারাক্ষন যদি তোমরা মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ করো তাহলে শারিরীকভাবে দূর্বল হয়ে পড়বে। আমরা লক্ষ করেছি অনেকে এগুলো (তথ্য ও প্রযক্তি) ভালো দিকে ব্যবহার না করে খারাপ দিকে ব্যবহার করছে। যাদের মন-মানসিকতা সুস্থ না তারাই এটাকে খারাপ দিকে নেয়ার চেষ্টা করে। এজন্য অনেকসময় একজনের জন্য গোটা পরিবার সমস্যায় পড়ছে এবং সমাজে তাদের সন্মানহানি হয়। তোমরা যারা তরুন তারা তথ্য ও প্রযুক্তি নিয়ে সততা এবং আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে, তাহলে তোমরা সাফল্যের সহিত অগ্রসর হতে পারবে। নিজেকে প্রস্তুত করো ভবিষ্যতের জন্য, তাহলেই তোমরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারেবে বাংলাদেশ ছোট দেশ হলেও ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। প্রতিবর্গ কিলোমিটারে ১২ শত লোক বাস করে। এতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশ আর কোথাও নেই। এজন্য আমরা যদি তথ্য প্রযুক্তিতে সফলতা আনতে পারি, তাহলে আমরা বিপুল এ জনগোষ্টিকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারবো। বিশবছর আগে বাংলাদেশ, ভারত, ব্যাংকক, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া মোটামুটি এক কাতারে ছিলাম। কিন্তু তারা অনেক আগে তথ্য প্রযুক্তিতে নিজেরা নিজেরা কাজ শুরু করে দেয়, যা আমরা জানতেও পারিনি। তারা তথ্য প্রযুক্তিতে জ্ঞান অর্জন করে আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে এসেছে। আমরা কিন্তু বিশ বছর পিছিয়ে গিয়েছিলাম। তারপরও বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, আর দেশের ১৬ কোটি মানুষ যদি আন্তরিকতাও সততার সাথে কাজ করে তাহলে এ লোকসানটা কাভারআপ করতে পারবো এবং উন্নয়নশীল দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবো। এজন্য আমাদের অধ্যাবসায়, দৃঢ় সংকল্প ও সততার দরকার। তিনি শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, তথ্য প্রযুক্তিতে সন্তানদের উৎসাহিত করবেন এবং তার যাতে সঠিকপথে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে সেদিকে লক্ষ রাখবেন। যাতে করে আমরা আমাদের লক্ষে পৌছাতে সম্ভব হই। আমাদের দেশ থেকেও অনেকে আজ গুগলে, নাসায় চাকুরি করেন। তারমানে আমাদের ছেলে-মেয়েদের মেধা রয়েছে, তাই সঠিকপথে তাদের মেধাকে ব্যবহার করতে হবে। বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিহত ছিলেন বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর রহমান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সি এস ই বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপত রাহাত হোসেন ফয়সাল, বরিশাল সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ মাহবুবুর রহমান মধু, আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন । এদিকে দুপুরে প্রতিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে যান। সেখানে তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন।